যুক্তরাষ্ট্রের কানেকটিকাটের প্রথম বাংলাদেশী আমেরিকান সিনেটর মোঃ মাসুদুর রহমান বলেছেন, আমি বাংলাদেশী হিসেবে গর্ববোধ করি। আমাদের কমিউনিটির জন্য আমাদেরই আওয়াজ তুলতে হবে। আমাদের সবাইকে এক সাথে হতে হবে। আমি জানি না সেটা কিভাবে সম্ভব, তবে করতে হবে।
আসুন আমরা সবাই একসাথে কাজ করি। আমরা আমাদের কমিউনিটিকে এগিয়ে নিতে ভূমিকা রাখি। এ কাজে কানেকটিকাট থেকে আমিই শেষ নয় প্রথমজন হিসেবে যুক্ত হতে চাই। সিনেটে অবশ্যই আমি আমার কমিউনিটির হয়ে ফাইট করবো, আওয়াজ তুলবো।
বাংলাদেশী আমেরিকান হিসেবে নির্বাচিত সিনেটরদের নিয়ে মোর্শেদ ভাইয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশী কমিউনিটিকে যুক্ত করতে হবে। তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের সকল সিটেই আমেরিকান বাংলাদেশীদের জয় নিশ্চিত করা সম্ভব বলে আমি বিশ্বাস করি। আমি জানি নির্বাচিতরা আমাদের হয়ে কথা বলে, কিন্তু সেই কথাই কি আমাদের হয়ে আমরাই বলতে পারি না।
স্থানীয় সময় রোববার (২০ নভেম্বর) জ্যামাইকার স্মার্ট ক্যাফেতে আয়োজিত মিট এন্ড গ্রিট উইথ মাসুদুর রহমান অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
এসময় তিনি আরো বলেন, কিছুদিন আগে কানেকটিকাটে আমাদের কমিউনিটির এক অনুষ্ঠানে একজন আমাকে বলেছিল আগামীতে গর্ভনর হিসেবে দেখতে চায়। আমি বলেছি এত তাড়াতাড়িই নয়। তবে বিশ্বাস করি আমি পারবো। আমি নিশ্চিত আপনারাও পারবেন। তাই শুরু করতে হবে। লিটল বাংলাদেশ বা চাঁদপুরী বাংলাদেশী নয়, কেন আমরা ঐক্যবদ্ধ বাংলাদেশী আমেরিকান নই। আমরা যদি একসাথে হই, আমরা যে কোন কিছুই শুধু নয় সব কিছুই করতে পারি। আমরা কি পুরো বাংলাদেশ হতে পারি না? এমন প্রশ্নও ছুড়ে দেন তিনি।
নিউ আমেরিকান ডেমোক্রেটিক ক্লাব ইনস এর সহায়তায় ফ্রেন্ডস অব মোঃ মাসুদুর রহমান নিউইয়র্ক এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এতে সভাপতিত্ব করেন নিউ আমেরিকান ডেমোক্রেটিক ক্লাবের সভাপতি বাংলাদেশী আমেরিকানদের যুক্তরাষ্ট্রের মূলধারার রাজনীতিতে সম্পৃক্ত করার অন্যতম পথিকৃত মোর্শেদ আলম।
এসময় তিনি বলেন, আমাদের রাজনৈতিক ইস্যু ও রাজনীতি থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত।
স্টেট সিনেটর নির্বাচিত হওয়ায় মোঃ মাসুদুর রহমানকে অভিনন্দন জানান নিউইয়র্ক স্টেট সিনেটর লিরোয় কমরি। এসময় তিনি বলেন, মাসুদুর রহমানকে পুন:নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার জন্য বাংলাদেশী আমেরিকানদের আর্থিক সহায়তাসহ সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে হবে।
নিউইয়র্ক স্টেট সিনেটর জন লু বলেন, বাংলাদেশী আমেরিকান মোঃ মাসুদুর রহমান কানেকটিকাট স্টেটে নির্বাচিত হওয়ায় আমি দারুন আনন্দিত। আজ থেকে ২০ বছর আগে মোর্শেদ আলম যে পথের সূচনা করেছিলেন সেই পথে আমিও স্টেট সিনেটর নির্বাচিত হয়েছি। মাসুদুর রহমানও সেই পথের অনুসারী হিসেবে কানেকটিকাটের স্টেট সিনেটে নির্বাচিত হলো।
নিউইয়র্ক স্টেট এ্যাসেম্বলিম্যান ডেভিট উইপ্রিন কানেকটিকাট স্টেটে নব-নির্বাচিত স্টেট সিনেটর মোঃ মাসুদুর রহমানকে অভিনন্দন জানিয়ে বাংলাদেশী আমেরিকানদের আরো অধিকহারে মূলধারার রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার অনুরোধ জানান।
প্রবীন সাংবাদিক মোহাম্মদ উল্লাহ বলেন, আমি কমিউনিটির লোকদের বলি হঠাৎ করেই আমি কিছু হতে পারবো না। আমি কিভাবে কিছু হবো সেটা কেউই জানে না।
পরিচয় সম্পাদক নাজমুল আহসান বলেন, অনেক বছর আগে যখন অমর্ত্য সেন নোবেল পেয়েছিল, তখন আমি বলেছিলাম যাক একজন নোবেল বিজয়ী আমার ভাষায় কথা বলে। আজকে যে কথাটি বলার চেষ্টা করছি যুক্তরাষ্ট্রের কানেকটিকাটে একজন সিনেটর নির্বাচিত হয়েছে যিনি আমার ভাষায় কথা বলে। আমি জাতি দেশ অঞ্চল ভাষা, এগুলোকে বিশ^াস করি।
কারণ, আমরা এমন একটা জাতি যারা ভাষার জন্য জীবন দিয়েছি। সে জিনিসকে আমরা সবসময় হৃদয়ে ধারণ করি। আমরা প্রতিটি অনুষ্ঠানেই শুধু প্রশংসা করি। কিন্তু আত্মসমালোচনা করি না। আমি আত্মসমালোচনা করতে চাই। আমি প্রায় ৪১ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে আছি। ৪১ বছর ধরে আমরা যতটা এগিয়েছি, তার চেয়ে বেশি পিছিয়েছি এখানে বাংলাদেশি রাজনীতির চর্চার কারণে।
এই জিনিসটা আমরা অনেকেই বলতে চাই কিন্তু পারিনা। আজকে যারা মূলধারার রাজনীতির কথা বলেন তারা যদি অন্যে দেশের রাজনীতির কথা চিন্তা করেন তাহলে দেখবেন আমরা সেই ফোরামটা পাইনা। বারাক ওবামা যে দেশ থেকে এসেছেন, সেই দেশের রাজনীতি নিয়ে তিনি কিন্তু কোনদিন কথা বলেননি যুক্তরাষ্ট্রে।
উনি এই দেশে এসেছেন, এই দেশের সাথে প্ল্যান্ট হয়েছে। আমরা এই দেশে এসে এই দেশের সাথে প্ল্যান্ট হবো। কিন্তু দেশের রাজনীতি নিয়ে এখানে আমাদের ভিতরে ডিভিশনটা ক্রিয়েট করি। এই জন্যই মূলধারার রাজনীতি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। আমরা পিছিয়ে পড়ছি।
এই কাজটি আমাদের অবিলম্বে বন্ধ করা উচিত। বন্ধ করার জন্য যা যা করা দরকার তা আমাদের সকলের করা উচিত। আমরা ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশ করতে পারি। আমরা সব সময় ইসরাইলকে গালি দেই। আমরা কিন্তু ভাবিনা ইসরাইলরা ইসরাইলকে সব থেকে বড় সেবা করে ফ্রেন্ডস অব ইসরাইল প্রতিষ্ঠান করে। এখানে তারা তাদের দেশের রাজনৈতিক দলের শাখা করে না। বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশ করা প্রয়োজন।
ঠিকানার প্রধান সম্পাদক ফজলুর রহমান বলেন, আমেরিকায় এখন চারিদিকে বাঙ্গালী আমেরিকানদের রাজত্ব শুরু হয়েছে। আমি বিশ^াস করি এটা শুরু, এটা শেষ নয়। শেষ হবে আকাশ ছোয়া পর্যন্ত। মূলধারার রাজনীতিতে কানেকটিকাট, মিশিগানসহ বিভিন্ন স্টেটে বাংলাদেশীরা এগিয়ে এসেছে। এইবার থেকে লক্ষ্য করা যাচ্ছে নিউইয়র্কেও অগ্রসর হওয়া শুরু করেছে। আমাদের এই চলমান ধারা অনেকদূর পর্যন্ত যাবে। বাঙ্গালীদের বিজয় অর্জন করতে হয়তো একটু দেরি হবে। কিন্তু যখন বিজয় অর্জন করে তা অনেক ভয়াবহ হয়। আমরা সেই আরো বড় অর্জনের দিকে যাবো। বারাক ওবামা যখন প্রেসিডেন্ট হয়েছে তখন আমাদের প্রত্যাশাটাও বেড়ে গেছে।
জ্যামাইকা বাংলাদেশ ফ্রেন্ডস সোসাইটির সভাপতি ফকরুল ইসলাম দেলোয়ার বলেন, এটা আমাদের বিজয়। আমাদেও কমিউনিটির বিজয়। মাসুদুর রহমান যে জিনিসটা করতে পেরেছে আমরা হয়তো অনেকেই সেটা করার চেষ্টা করছি। কিন্তু আমরা বিশ^াস করি আজকে মাসুদুর রহমান যে বিজয় নিয়ে এসেছে তা প্রতিটি বাংলাদেশীদের জন্য পথপ্রদর্শক হয়ে থাকবে। আমরা সবাই হাটিহাটি পা পা করে সেই বিজয়টি নিয়ে আসবো ইনশাল্লাহ।
জ্যামাইকা ফ্রেন্ডস সোসাইটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আল আমিন রাসেল বলেন, শুধুমাত্র ম্যাচিং ফান্ডের জন্য বাংলাদেশী আমেরিকানরা যেন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতা না করেন। কারণ এতে আমাদের ট্যাক্সের অর্থের বিপুল অপচয় হয়।
কমিউনিটি এ্যাক্টিভিস্ট ও নিউ আমেরিকান ডেমোক্রেটিক ক্লাবের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর আহনাফ আলমের সঞ্চালনায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন সিটি ইউনিভার্সিটির প্রফেসর শাহাদাত হোসেন, জ্যামাইকা ফ্রেন্ডস সোসাইটির সাবেক সভাপতি সাইফুল ইসলাম, সাবেক সহ-সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মনির হোসেন, রুপসি চাঁদপুর ফাউন্ডেশনের সাবেক সভাপতি মাওলানা মাসুম ও সাবেক সভাপতি আমিন খান জাকির, কমিউনিটি বোর্ড মেম্বার ডিএইচ কেয়ারের শাহরিয়ার, বাংলাদেশ সোসাইটির সাংস্কৃতিক সম্পাদক শাহনাজ আলম, বাংলাদেশ সোসাইটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হোসেন খান, কমিউনিটি এ্যাক্টিভিস্ট মজিবর রহমান ও রাব্বি সৈয়দ, পেনিসেলভিনিয়া থেকে আগত ডাক্তার কাঞ্চন, কমিউনিটি এ্যাক্টিভিস্ট আমিন মেহেদি বাবু, অধ্যাপিকা হোসনে আরা ও জামিলা উদ্দিন, লেখক সাংবাদিক ফাহিম রেজা নুর, ডাক্তার মাসুদুল হাসান, হাজীগঞ্জ ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের আবুল বাশার, নিউইয়র্ক সিটি মেয়রের এশিয়ান এ্যাডভাইজরি কাউন্সিলের সদস্য ও জ্যাকসন হাইটসের কমিউনিটি বোর্ড মেম্বার ফাহাদ সোলাইমান ও কানেকটিকাটের নবনির্বাচিত স্টেট সিনেটর মোঃ মাসুদুর রহমানের স্ত্রী ইয়েলিনা রহমান।