দিনাজপুরে ভারপ্রাপ্ত ভূমি কর্মকর্তা হারুনুর রশিদের ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। জানা গেছে, দিনাজপুর পৌর ভূমি কর্মকর্তা ফখরুল ইসলাম দায়িত্বে থাকাকালীন সময়ে সহকারী ভূমি কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন হারুনুর রশিদ।
গত ২০২০ সালে আগস্ট মাসে ফখরুল ইসলাম বদলি হয়ে অন্যত্র চলে গেলে তদস্থলে হারুনুর রশিদ ভারপ্রাপ্ত পৌর ভূমি কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। তিনি দায়িত্ব পালনের সুবিধার্থে ২০২০ সালে আগস্ট মাসে জাহাঙ্গীর আলমকে অফিসের কাজে সহযোগিতায় করার জন্য ডেকে নেয়। তাকে দিয়ে হোল্ডিং, খাজনা বই বের করে দেয়াসহ অফিস সহায়কের কাজ করিয়ে পারিশ্রমিক দেয়নি।
২০২১ সালের এপ্রিল মাসে ডাটা এন্ট্রি ও রেজিস্ট্রেশন অপারেটর হিসেবে জাহাঙ্গীরকে নিয়োগ দেয়। সহকারী পৌর ভূমি কর্মকর্তা হারুনুর রশিদের কথামত জাহাঙ্গীর অপারেটর হিসেবে কাজ করতে থাকে। ওই বছর নভেম্বর মাস পর্যন্ত তাকে দিয়ে ডাটা এন্ট্রি ও হোল্ডিং রেজিস্ট্রেশনের কাজ করিয়ে নেয়। এদিকে জাহাঙ্গীরকে অপারেটর হিসেবে দায়িত্ব দেয়ার সময় অভি রাহাত ও মিম নামে তিনজনকে ডাটা এন্ট্রি ও হোল্ডিং রেজিস্ট্রেশনের অপারেটর হিসেবে কাজে নিয়োগ করে।
২০২১ সালের নভেম্বর মাসে কোন কারণ ছাড়াই দেনা পাওনা না মিটিয়ে জাহাঙ্গীরকে কাজ থেকে অব্যাহতি দেয়। এবং বাকি তিনজনকে বহাল রাখেন। জাহাঙ্গীর তার কাজের পাওনা টাকা মিটিয়ে দেওয়ার বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত পৌর ভুমি কর্মকর্তা হারুনুর রশীদের সাথে কথা বললে নানা তালবাহানা করে। উপায়ন্ত না পেয়ে জাহাঙ্গীর ২৭শে সেপ্টেম্বর জেলা প্রশাসক বরাবরে একটি অভিযোগ দায়ের করেন।
যার প্রেক্ষিতে গত ৩০ শে অক্টোবর সদর সহকারি কমিশনার (ভূমি) অফিসের কানুন-গো ছাইফুল ইসলাম সত্যতা যাচাইয়ের জন্য উভয়ের সাথে কথা বলে তাদের পৃথক পৃথকভাবে লিখিত নিয়ে স্বাক্ষর করিয়ে নেন। এরপর তাদের জানান প্রতিবেদন পাঠিয়ে দিবো। এ রিপোর্ট লেখা প্রতিবেদন পাঠিয়েছে কিনা জানা যায়নি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভুক্তভোগী ভূমির মালিকগন জানান, হারুনুর রশিদ পৌর ভুমি অফিসে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা থাকাকালিন সময়ে প্রকৃত ভূমি মালিকদের নানা সমস্যা দেখিয়ে মোটা অঙ্কের ঘুষ বানিজ্য করে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়েছে। অবৈধপথে অর্থ উপার্জন করার সুবিধার্থে ডাটা এন্টি ও হোল্ডিং রেজিষ্ট্রেশন অপারেটের জাহাঙ্গীর আলমকে অব্যাহতি দেন।
ভারপ্রাপ্ত পৌর ভুমি কর্মকর্তা হারুনুর রশীদ অফিস চলাকালীন সময়ে বাহিরে সময় কাটান। তার অনুপস্থিতিতে অফিস সহায়ক এজাবুর রহমানসহ ডাটা এন্ট্রি ও হোল্ডিং রেজিষ্ট্রেশন অপারেটর মীম,অভি ও রাহাত ভুমি অফিস পরিচালনা করে। এরমধ্যে অপারেটর মীম সহকারী ভুমি কর্মকর্তার চেয়ারে বাকি দু’জন অপারেটরকে অফিস সহায়ক ও ডাটা এন্ট্রি কাজ করে থাকে। ভুমি অফিসের অফিস সহায়ক এজাবুর রহমান ভূমি মালিকদের বিপাকে ফেলে খাজনা খারিজের ভয়ভীতি প্রদর্শন করে হাতিয়ে নেয় মোটা অঙ্কের অর্থ।
ভূমি মালিকরা জানান,আমাদের খাঁজনা দিতে এসেও বাড়তি টাকা গুনতে হয়। খারিজ এর কথা বলে নানা সমস্যার কথা শুনিয়ে ভুমি কর্মকর্তার ভয় দেখিয়ে বলে স্যারকে সন্তুষ্ট না করলে খারিজ বাতিল হয়ে যাবে। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী একজন ভূমির মালিক তার জমি নাম জারি খারিজ করতে গেলে জমির মালিকানা দলিল, আর এস রেকর্ড, খারিজ খতিয়ান, ওয়ারিসন সনদপত্র, আইডি কার্ড এর কপি,পাসপোট সাইজ এর ছবি এসব কাগজের প্রয়োজন হয়। ভূমি মালিকরা সরকারি নিয়মানুযায়ী অনলাইনে খারিজের আবেদন করেন।
আবেদনের প্রেক্ষিতে এসএমএস-এর মাধ্যমে অফিসে আসেন। ভূমি কর্মকর্তাকে খারিজের কেস নং জানিয়ে কথা বলেন, এই সময় অফিস সহায়ক এজাবুর রেজিষ্টার এনে নানা অজুহাত দেখিয়ে জানায়, স্যার খারিজ দেয়া যাবে না। সূচিতে দাগের ভূল, আকার এ- কারের ভুল, হাল-সনের খাজনা নেই, ভায়া দলিল নেই। এরকম নানা কথা শুনে ভূমি মালিক বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে।
ভূমি মালিকরা বিপাকে পড়ে অফিস সহায়কের সহযোগিতায় ভূমি কর্মকর্তার সাথে পৃথক বৈঠক করেন। এক পর্যায়ে উদ্ধতন কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে খারিজটি করতে হবে বলে মোটা অঙ্কের অর্থের দাবি করে।দরকষাকষির এক পর্যায়ে পরিমাণ মত টাকা হাতিয়ে নেয়। আবার ওয়ারিশদেরকে বঞ্চিত করে ভূয়া ওয়ারিশান সনদপত্র বানিয়ে একক ভাবে খারিজ করে দিয়ে ভুমি কর্মকর্তা হাতিয়ে নেন লক্ষ লক্ষ টাকা।
শুধু তাই নয় অফিস সহায়ক এজাবুব ভূমি মালিককে মোবাইলে ডেকে খারিজ রিপোর্ট এর টাকা দাবি করে বলেন, স্যারকে রাজি খুশি করতে হবে না করলে খারিজটি বাতিল হয়ে যাবে। ভূমি মালিকগন খাজনা দিতে আসলে অতিরিক্ত টাকা নেয়। ভূমি মালিক শহিদুল ইসলামের কাছে ৩ হাজার টাকা নিয়ে ৭২ টাকার খাজনার রশিদ দেয়। ভূমির মামলা, খারিজ বাতিল সহ বিভিন্ন তদন্তে প্রতিবেদনে হাতিয়ে নেয় মোটা অংকের টাকা।
জনৈক মামুনের কাছে খারিজ করে দেবার কথা বলে ৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। এমনকি মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে একই দলিল দিয়ে দু’বার খারিজ করে দেয়ার জ্বলন্ত উদাহারন সৃষ্টি করেছেন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হারুনর রশিদ। ঘটনা এখানেই শেষ নয়, রফিকুল নামে এক ভূমি মালিকের কাছে ৮’শ টাকার খাজনার রশিদ দিয়ে ১০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়।
মোস্তাফিজুর নামে আরেক জমি মালিকের কাছে ১০ হাজার টাকা নিয়ে ৫’শ টাকার রশিদ কেটে দেয়। এমনকি মৃত ব্যক্তির নামে খাজনা নেওয়ার কোনো নিয়ম না থাকলে ও তিনি নিয়েছেন এবং খারিজ ও করে দিয়েছেন। হারুনুর রশীদ ভারপ্রাপ্ত পৌর ভুমি কর্মকর্তা প্রায় ৩ বছর অবস্থানের পর বদলী হয়ে ৪ নং শেখপুরা ইউনিয়ন ভুমি অফিসে যোগদান করেন। ভারপ্রাপ্ত ভূমি কর্মকর্তা হারুনর রশিদ এক ভুমি মালিককে বলেন, টাকা হলেই অসম্ভব কে সম্ভব করা যায়। এ বিষয়ে জানতে ভূমি কর্মকর্তা হারুনুর রশিদের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।