প্রতারণা তার পেশা। দীর্ঘ ২৫ বছর বিভিন্ন মানুষকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে সর্বশান্ত করে আসছে মনোয়ারা নামের এক প্রতারক নারী। চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন থানায় রয়েছে তার নামে একাধিক প্রতারণার মামলা। চট্টগ্রাম বন্দর থানা পুলিশ গত ১০ই নভেম্বর গভীর রাতে নিউ মুরিং এলাকা থেকে মনোয়ারা বেগম (৫০) ও তার সহযোগী ছেলে রবিন (৩০) কে গ্রেফতার করেন। বন্দর থানার অফিসার্স ইনচার্জ মো. মাহফুজ জানান, সিআর মামলা নং ১১৬/২০২২ এর ওয়ারেন্টভুক্ত প্রতারণা মামলার আসামী মনোয়ারা বেগম ও মো. রবিন মা-ছেলেকে গ্রেফতার করে জেল হাজতে প্রেরণ করেছি। মনোয়ারা বেগম ৩৮নং ওয়ার্ড ওমর হাজী বাড়ী, ২নং সাইট পাড়া মোঃ আবদুস সাত্তারের মেয়ে। তারা নগরীর বিভিন্ন এলাকায় মানুষের সরলতার সুযোগ নিয়ে প্রতারণা করে আসছিল। ঘটনার বিবরনে জানা যায়, ২০১৯ সালে বন্দর থানার ৩৮ নং ওয়ার্ডে হালিশহর মাইজপাড়ার সহজ সরল রুমা আক্তারের সাথে পরিচয় হয় মনোয়ার বেগমের। রুমার স্বামী একজন রেইন টেকার গাড়ীর ড্রাইভার। স্বামীর সংসারের স্ব”ছলতার জন্য কাপড় সেলাই ও থ্রি পিচ কাপড়ের ব্যবসা করতো। মনোয়ারা বেগম কাপড় সেলাই এর অজুহাতে প্রায় সময় রুমার বাসায় যাতায়াত করতো। এইভাবে রুমার সাথে শখ্যতা গড়ে উঠে মনোয়ারা বেগমের । ধোকাবাজ মনোয়ারা বেগম মেয়ের বিবাহ ও ডাঙ্গাচরে ভূমির বিরোধ নিষ্পত্তির অজুহাতে চার লক্ষ টাকা হাওলাত চাই রুমার কাছে। রুমা আর্থিক সংকটের কথা জানিয়ে মনোয়ারার কাছে অপারগতা প্রকাশ করেন। মনোয়ারা বেগম নগরীর নিমতলা এলাকায় তার একটি ফø্যাট রয়েছে বলেও জানান। তা বিক্রি করে হাওলাতের টাকা পরিশোধ করবেন। কিš‘ কোন ভাবেই রুমাকে মন গলাতে না পেরে শুরু হয় মনোয়ারার মূল প্রতারণার ফাঁদ। নিজের মেয়ের পাত্র ঠিক ও বাড়িঘর দেখানোর কথা বলে রুমাকে নিয়ে যায় নগরীর বড়পুল নাপিত পাড়ার বিষু মঞ্জিলে। সেখানে লাল কাপড়ের উপর বসিয়ে রুমার মাথার উপর ঝাড়ফুক দিয়ে অজ্ঞান করে ফেলে তার সহযোগী অন্যান্য সদস্যরা। এর পর এক বোতল পানি নিয়ে রুমার বাসায় চলে আসে মনোয়ারা। বিষয়টি রুমার পরিবার স্বামী জানতে পেরে মনোয়ারাকে তাদের বাসায় আসতে নিষেধ করলেও পরে পুরো পরিবার তার মোহে আসক্ত হয়ে পড়ে। এভাবে শুরু হয় তার প্রতারণার পর্ব। এভাবে কব্জায় আনতে শুরু করে রুমাকে। রুমা তার আত্মীয়-স্বজন, বিভিন্ন এনজিও ও সমিতি থেকে বিভিন্ন পর্বে চার লক্ষ টাকা মনোয়ারার হাতে তুলে দেন। এই টাকা সঠিক সময়ে পরিশোধ করতে না পারায় সুদে আসলে রুমার ঘাটে ঋণের বোঝা চাপতে থাকে। হঠাৎ উধাও হয়ে যায় মনোয়ারা বেগম। আরো জানা যায় রুমা ছাড়াও একই এলাকার পারভীন ও ডলি মনোয়ারার হাতে প্রতারণার শিকার হন। দীর্ঘ সময় গাঁ ঢাকা দেওয়ার পরে মনোয়ারা বেগম এর সাথে দেখা হয় রুমার। একাধিক বার টাকা দেওয়ার তারিখ দেওয়া হলেও রুমাকে বিভিন্ন ভাবে নাজেহাল করা হয় বলে জানান রুমা। ঋণের টাকা পরিশোধ করতে গিয়ে বর্তমানে রুমার পরিবার পথে বসার উপক্রম। শেষ পর্যন্ত রুমা বাদী হয়ে গত ৩ এপ্রিল চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি ফৌজদারি মামলা দায়ের করেন। ভূক্তভোগী রুমা ও তার পরিবার এ ধরনের প্রতারকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।