দুই সহোদর ফরিদপুর শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক (বহিস্কৃত) মো. সাজ্জাদ হোসেন বরকত ও ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি (বহিস্কৃত) ইমতিয়াজ হোসেন রুবেলসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে করা দুই হাজার কোটি টাকার মানিলন্ডারিং আইনের মামলাটি পুনরায় অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। তদন্তে ত্রুটি থাকায় আজ বৃহস্পতিবার ঢাকার ১০ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম এ আদেশ দেন।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর মাহবুব হাসান জানান, মামলায় ১০ জন আসামির বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল হয়েছে। এ ছাড়া ৪২ জনকে বাদ দেওয়া হয়েছে। বাদ দেওয়া ৪২ জনের মধ্যে ফরিদপুর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নিশান মাহমুদ শামীম ও বিল্লাল হোসেন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছিলেন। এই দুজনের নাম বাদ দেওয়া এবং দুই ভাইয়ের ৫ হাজার একর সম্পত্তি থাকার কথা বললেও থানায় আদালত মূলত মামলাটির অধিকতর তদন্তের জন্য পাঠিয়েছেন।
এর আগে প্রায় এক বছর যাবৎ ১০টির বেশি তারিখে মামলায় চার্জগঠন ও আসামিদের অব্যাহতির আবেদনের উপর আদালত শুনানি গ্রহণ করেন। যার মধ্যে তদন্তে ত্রুটি বিচ্যুতি থাকায় কয়েকটি তারিখে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার উপস্থিতিতে শুনানির পর আদালতে আজ বৃহস্পতিবার অধিকতর তদন্তের সিদ্ধান্ত দিলেন।
মামলার চার্জশিটের অপর আসামিরা হলেন- সাবেক স্থানীয় সরকার মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খোন্দকার মোশারফ হোসেনের ভাই খোন্দকার মোহতেশাম হোসেন বাবর, এএইচএম ফুয়াদ, ফাহাদ বিন ওয়াজেদ ওরফে ফাহিম, কামরুল হাসান ডেভিড, ফরিদপুর শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি নাজমুল ইসলাম খন্দকার লেভী ও শহর যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসিবুর রহমান ফারহান, মুহাম্মদ আলি মিনার ও তারিকুল ইসলাম ওরফে নাসিম।
২০২১ সালের ৩ মার্চ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির সহকারী পুলিশ কমিশনার (এএসপি) উত্তম কুমার সাহা চার্জশিট সিএমএম আদালতে দাখিল করেন। মামলায় এর আগে দুই সহোদরের ৫ হাজার ৭০৬ বিঘা জমি, ৫৫টি গাড়ী ক্রোক ও ১৮৮টি ব্যাংক হিসাবে থাকা ৯ কোটি ৮৮ লাখ টাকা ফ্রিজের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
মামলার বিবরণে বলা হয়, আসামি বরকত ও রুবেল ফরিদপুর জেলার কোতয়ালী থানাধীন ব্রাক্ষণকান্দা গ্রামের মৃত আব্দৃস সালাম মন্ডলের ছেলে। তারা প্রথম জীবনে ফরিদপুর জেলার রাজবাড়ী মোড়ে স্থানীয় প্রভাবশালী নেতা চাঁন খন্দকারের অফিসে চা-পান সরবরাহ করত। ১৯৯৪ সালে চাঁন খন্দকারের নির্দেশে এ দুই ভাই ফরিদপুর শহর আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক অ্যাডভোকেট মহিউদ্দিন খোকনকে নির্মমভাবে হত্যা করলে বরকতসহ অন্যান্যদের নামে ফরিদপুর কোতয়ালী থানায় মামলা হয়। পরবর্তীতে মামলাটির তদন্ত শেষে তাদের বিরুদ্ধে পুলিশ অভিযোগপত্র দাখিল করে।
২০০২ সালের পর বরকত ও রুবেল তাদের গুন্ডাবাহিনী নিয়ে ফরিদপুর বাসস্ট্যান্ড, ট্রাকস্ট্যান্ডে চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসা ব্যাপকভাবে শুরু করে। মামলায় বলা হয়, ২০০৮ সাল থেকে বরকত ও রুবেল সহোদর ফরিদপুর জেলার এলজিইডি, বিআরটিএ, রোডস এন্ড হাইওয়ে, পৌরসভা, জেলা পরিষদ, পাসপোর্ট অফিস, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতসহ একাধিক প্রতিষ্ঠানের ঠিকাদারী তারা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়। সেখানে তাদের লোকজন দিয়ে পরিচালনা করে অবৈধ পন্থায় কোটি কোটি টাকা চাঁদা করে এবং মাদক ব্যবসায় তাদের মনোনীত লোকজন দিয়ে পরিচালনা করে প্রচুর অংকের টাকা অবৈধভাবে অর্জন করেন।
মামলায় বলা হয়, ঢাকা শহরের কাফরুল থানাধীন মহাখালী ডিগএইচএস বাড়ী নং-৩১৬, রোড নং-২১, লেভেল নিউ ডিওএইচএস এ অফিস ভাড়া নিয়ে বাংলাদেশের সকল এলজিইডি অফিসের টেন্ডার নিয়ন্ত্রণে রাখে। বিগত দুই দশকের মধ্যে চাঁদাবাজির মাধ্যমে তারা অবৈধ অর্থ দিয়ে সাউথ লাইন যাত্রী পরিবহনের এসি/ননএসি ২৪টি বাস, ১০টি ট্রাক, দুইটি পাজেরো, দুইটি মাইক্রোবাস, ১টি নিশান মিনিবাস নামান । যার অধিকাংশ নম্বরহীন।
এ ছাড়া ১টি গেষ্ট হাউজ, ৮ হাজার বর্গফিটের উপর নবনির্মিত বিণ্ডিং, বরকত এগ্রো প্রা. লিমিটেড, মেসাস এসবি ডেইরি ফার্ম, নর্থ চ্যানেল বাগানবাড়ী, এসবি ব্রিকফিল্ড, এসবি পাথর ক্রসিং, এসবি প্রেস, এসবি ট্রেডার্স, বরকত কনষ্ট্রাকশন এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ও ১টি পেট্রোল পাম্প প্রতিষ্ঠা করে।
মামলায় আরও বলা হয়, আসামিরা অবৈধ পন্থায় অর্জিত টাকা দ্বারা উল্লেখিত সম্পদের মালিক হয়েছেন। প্রাথমিক অনুসন্ধানে তাদের সম্পত্তির মূল্য অনুমান ২ হাজার কোটি টাকা।