দেশে ফের মার্কিন ডলারের দাম বেড়েছে। বৃহস্পতিবার (২ জুন) আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলার ৯০ পয়সা বাড়িয়ে ৮৯ টাকা ৯০ পয়সা নির্ধারণ করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে আবারও টাকার মান কমেছে ৯০ পয়সা। এক মাসের ব্যবধানে ৫ দফা বাড়ানো হয়েছে ডলারের দাম। আলোচ্য সময়ে টাকার মান কমেছে ৩.৪৫ টাকা।
এর আগে, গত ২৯ মে দেশে ডলারের রেট ৮৯ টাকা বেঁধে দিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কিন্তু আজ এই রেট উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এরপরেই ডলারের দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘ওপেন মার্কেটে চাহিদা বাড়ছে, সেই বিবেচনায় নিয়েই দর নির্ধারণ করা হয়েছে। যারা দেশে রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন তারা প্রতি ডলারে ৮৯ টাকায় স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছে না। তাই প্রবাসীদের খুশি করার জন্য প্রকৃত দরের উপর মূল্যায়ন করে ডলারের দাম ৮৯ টাকা ৯০ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে।’
বাজারের পরিস্থিতি বিবেচনায় ব্যাংকগুলোর চাহিদা অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার সরবরাহ করছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর কাছে ৬ বিলিয়নের বেশি ডলার বিক্রি করা হয়েছে। যখনই প্রয়োজন হচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার সরবরাহ করছে।’
এদিকে, গত এক মাসের মধ্যে ডলারের দাম বেড়ে খোলাবাজারে ১০২ টাকা অতিক্রম করে রেকর্ড গড়েছিল। পরে কিছুটা কমে বর্তমানে ৯৬ থেকে ৯৮ টাকায় ডলার কেনাবেচা হচ্ছে।
ডলারের দাম পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ২০২০ সালের জুলাই থেকে গত বছরের আগস্ট পর্যন্ত আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে ডলারের দাম ৮৪ টাকা ৮০ পয়সায় স্থিতিশীল ছিল। কিন্তু এরপর থেকে বড় ধরনের আমদানি ব্যয় পরিশোধ করতে গিয়ে ডলার সংকট শুরু হয়। যা এখন পর্যন্ত অব্যাহত আছে।
২০২১ সালের আগস্টের শুরুতেও আন্তঃব্যাংকে প্রতি ডলারের মূল্য একই ছিল। ৩ আগস্ট থেকে বাড়তে বাড়তে গত বছরের ২২ আগস্ট প্রথমবারের মতো ডলারের দাম ৮৫ টাকা ছাড়ায়।
চলতি বছরের ৬ জানুয়ারি পর্যন্ত আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলার কেনাবেচা হয়েছিল ৮৫ টাকা ৮০ পয়সা। যা ৯ জানুয়ারি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৬ টাকা। গত ২৩ মার্চ তা বেড়ে ৮৬ টাকা ২০ পয়সায় বেচাকেনা হয়। ফের ২৭ এপ্রিল ডলার প্রতি ২৫ পয়সা বেড়ে ৮৬ টাকা ৪৫ পয়সায় বেচাকেনা হয়েছে।
গত ১০ মে ডলার প্রতি আরও ২৫ পয়সা বেড়ে ৮৬ টাকা ৭০ পয়সায় বেচাকেনা হয়েছে। ১৬ মে আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলার কেনাবেচা ৮৭ টাকা ৫০ পয়সা নির্ধারণ করে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কিন্তু ২৩ মে ফের ৪০ পয়সা বাড়িয়ে ডলারের দাম ৮৭ টাকা ৯০ পয়সা নির্ধারণ করা হয়। এরপরেও বাজার স্থিতিশীল হয়নি।
সংকট নিরসনে বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) এবং ব্যাংকের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশের (এবিবি) দাবির পরিপ্রেক্ষিতে রোববার (২৯ মে) বাংলাদেশ ব্যাংক আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে ডলার ৮৯ টাকা বেঁধে দেয়। আর আমদানিকারকদের কাছে বিক্রির জন্য বিসি সেলিং রেট নির্ধারণ করা হয় ৮৯ টাকা ১৫ পয়সা।
যদিও ব্যাংকগুলো আন্তঃব্যাংক লেনদেনে প্রতি ডলারের বিনিময় মূল্য ৮৯ টাকা ৮০ পয়সার প্রস্তাব করেছিল। কিন্তু তাতেও বাজার স্থিতিশীল না হওয়ায় আজ আরও ৯০ পয়সা বাড়িয়ে ৮৯ টাকা ৯০ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা ব্যাংকগুলোর প্রস্তাবের চেয়েও বেশি ও ডলারের দামের সর্বোচ্চ রেকর্ড।
নিয়ম অনুযায়ী, একটি ব্যাংক তার মূলধনের ১৫ শতাংশের সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা প্রতিষ্ঠানের কাছে রাখতে পারে। এর অতিরিক্ত হলেই ব্যাংকটিকে বাজারে ডলার বিক্রি করতে হয়।