২০২১ সাল। নানা ঘটনার জন্ম দিয়ে শেষ হতে চলেছে বছরটি। বছরজুড়ে নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে সরগরম ছিল আদালতপাড়া। যার মধ্যে অন্যতম একটি ইস্যু ছিল নানা বিষয়ে বিতর্কিত-সমালোচিত ধর্মীয় বক্তারা। হেফাজত ইসলামের মামুনুল হকের মধ্য দিয়ে এ সমালোচনা শুরু হয়।
মামুনুল হক, আমির হামজাসহ অন্যদের বিতর্কিত কর্মকাণ্ড নিয়ে ২০২১ সালের ডেইলি বাংলাদেশের আদালতপাড়ার ফিরে দেখার শেষ পর্ব আজ।
মামুনুল হক:
গত ১৮ এপ্রিল দুপুর ১২টা ৫০ মিনিটের দিকে মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদরাসা থেকে মামুনুল হককে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও বিভাগ।
পরদিন ১৯ এপ্রিল ২০২০ সালের মোহাম্মদপুর থানার একটি ভাঙচুর ও নাশকতার মামলায় তাকে সাতদিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদপুর থানার এসআই সাজেদুল হক। শুনানি শেষে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম সেদিন তার সাতদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এরপর বিভিন্ন নাশকতার মামলায় তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
ধর্ষণ মামলায় বিচার শুরু:
ধর্ষণ মামলায় মামুনুল হকের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। গত ৩ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক আনিসুর রহমান এ অভিযোগ গঠন করেন। এর মধ্য দিয়ে মামুনুল হকের বিচার শুরু হয়। গত ৩০ এপ্রিল সোনারগাঁ থানায় ধর্ষণ মামলা করেন মামুনুল হকের কথিত স্ত্রী জান্নাত আরা ঝর্ণা।
রাষ্ট্রদ্রোহিতার দুই মামলা:
মামুনুল হকের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার দুইটি মামলা করা হয়। গত ৬ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের কেন্দ্রীয় সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল ও বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠা ও নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট আবদুল মালেক বাদী হয়ে ঢাকার আদালতে মামলা করেন।
সম্পদ আত্মসাতের মামলা:
২০ কোটি টাকার সম্পদ আত্মসাতের অভিযোগে মামুনুল হকসহসহ ৪৩ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা হয়েছে। ১৫ জুন ঢাকা মহানগর হাকিম মোর্শেদ আল মামুন ভূঁইয়ার আদালতে মুহাদ্দিস মাওলানা আবদুর রাজ্জাক কাসেমী বাদী হয়ে এ মামলা করেন।
শিশুবক্তা রফিকুল মাদানী:
গত ৭ এপ্রিল রফিকুল ইসলামকে তার গ্রামের বাড়ি থেকে আটক করে র্যাব। পরদিন র্যাব বাদী হয়ে গাজীপুরের গাছা থানায় মামলা করে। এরপর রাষ্ট্রবিরোধী ও উসকানিমূলক বক্তব্য দেওয়ায় রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে র্যাবের করা মামলায় ৮ এপ্রিল তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়।
রাজধানীর মতিঝিল থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের করা মামলায় ‘শিশুবক্তা’ মাওলানা রফিকুল ইসলাম মাদানীসহ দুইজনের বিরুদ্ধে চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দাখিল করেছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গত ২১ অক্টোবর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে এ অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
আমির হামজা:
ধর্মীয় বক্তা আমির হামজারর গত ২৪ মে কুষ্টিয়া থেকে তাকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট গ্রেফতার করে। এরপর সংসদ ভবনে তলোয়ার নিয়ে হামলার পরিকল্পনার অভিযোগে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে করা মামলায় তার পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
পরবর্তীতে এ মামলায় আমির হামজা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। এরপর গত ২১ জুন রাজধানীর দারুস সালাম থানায় করা সন্ত্রাস বিরোধ আইনের আরেক মামলায় আমির হামজা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন। বর্তমানে কারাগারে আটক রয়েছে।
মুফতি ইব্রাহিম:
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচিত-সমালোচিত বক্তা কাজী ইব্রাহিমকে গত ২৮ সেপ্টেম্বর ভোরে মোহাম্মদপুরের জাকির হোসেন রোডের বাসা থেকে ডিবি পুলিশ আটক করে। পরে ডিবি পুলিশ তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করলে তাকে এ মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। মামলায় তার বিরুদ্ধে কোভিড টিকা নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানোসহ সরকার ও প্রতিবেশী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিদ্বেষ ছড়ানোর অভিযোগ করা হয়। এছাড়া জেডএম রানা নামের একজন গত ২৮ সেপ্টেম্বর রাতে ইব্রাহীমের বিরুদ্ধে পৃথক আরেকটি প্রতারণার মামলাও করেন। ২৯ সেপ্টেম্বর রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলার দুদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। গত ২ অক্টোবর শেষে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।