কোভিড-১৯ মহামারির লকডাউনের কারণে যেকোনো জমায়েতই এখন ঝুঁকিপূর্ণ। গরুর হাট তো আরও বিপজ্জনক। কিন্তু তার বিকল্প বের করে ফেলেছেন অনেক খামারি। শহরের মতো এখন টেকনাফেও অনলাইনে বিক্রি হচ্ছে কোরবানির গরু-মহিষ। এতে সাড়াও পাচ্ছে ।
পশুর হাটে গিয়ে দেখা যায়, করোনা ভাইরাস পরিস্থিতিতে গত বছরগুলোর তুলনায় এবার অনেক কম ব্যাপারি বাজারে গরু এনেছেন। যে কয়েকজন ব্যাপারি গরু এনেছেন তারাও বিক্রি নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন। কারণ, এবার বাজারে ক্রেতার আনাগোনা কম। এখনও বিক্রি শুরু করতে পারেনি অনেক ব্যাপারি। অন্যদিকে পশুর হাটে ক্রেতার আনাগোনা কম হলেও টেকনাফে অনলাইনে বিক্রি হচ্ছে কোরবানির পশু বেচা-কেনা।
ফেসবুক পেইজের মাধ্যমে সীমান্ত উপজেলা টেকনাফে পাচঁজন খামারি ইতি মধ্য কোরবানি পশু বিক্রি করছে। এতে তাঁরা সাড়া পাচ্ছেন। তাছাড়া করোনাভাইরাস মহামারির কারণে ক্রেতারাও ঝুঁকছেন অনলাইনে। টেকনাফ পৌরসভার ডেইল পাড়া বাসিন্দা খামারি জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রানা। গত বছর কোরবানি ঈদে তিনি ২৫ লাখ টাকা পশু বিক্রি করেছে।
এবারে এই খামারি দুইটি অনলাইন পেইজে কোরবানি পশু বিক্রি করছে। এতে সাড়াও পাচ্ছে। ইতি মধ্য অনলাইনে আটটি গরু ১৫ লাখে দামের বিক্রি করেছেন। এ বিষয়ে খামারি জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রানা জানান, ‘কোরবানি ঈদে বিক্রির জন্য মিয়ানমার ও ভারতের ৩০টি গরু লালন পালন করা হয়েছে। গত বছর ২৫ লাখ টাকার কোরবানি পশু বিক্রি করেছি। এবারের আরো বেশি বিক্রির টার্গেট রয়েছে।
তাছাড়া করোনা ভাইরাস বৃদ্ধি পাওয়ায় অন্য বছরের তুলনায় এবারে পশু হাটে ব্যাপারি অনেকটা কমেছে। ফলে এবারে ফেসবুক পেইজে অনলাইনে কোরবানি পশু বিক্রি করছি। ইতি মধ্য অনলাইনে ৮টি পশু ১৫ লাখ টাকা দামে বিক্রি করেছি। আরো কিছু অনলাইনে সাড়া পাচ্ছি, কিন্তু দামে কম হওয়ায় এখনো বিক্রি করেনি।’
খামারিদের ফেসবুক পেইজে দেখা যায়, খামারিরা ফেসবুক ভিত্তিক বিভিন্ন পেজ ও গ্রুপে পশুর ছবি পোস্ট করেন, সঙ্গে ওজন ও দামও লিখে দেন। তারপর ক্রেতাদের পছন্দ হলে মুঠোফোনে কথা বলে সরাসরি খামারে এসে পছন্দের গরু কিনছেন। অনলাইনের এই হাটে কোনও ঝক্কিঝামেলা নেই। কিছু মৌসুমী ব্যবসায়ীও এবার হাটে গরু তোলার পাশাপাশি অনলাইনে গরু বিক্রি করছেন। টেকনাফ বুল ফাইট রানা নামে পেইজে, চিতাবাঘ নামে গরু দাম আড়াই লাখ, লাল তোপান (লাল গরু) দাম হাকা হয়েছে তিন লাখ, মাডার ফোর ২ লাখ, বিচ্ছু ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা, রানা মাস্তান তিন লাখ, কালা বাগা দুই লাখ ৯০ হাজার টাকা এবং কালা বাবু নামে একটি গরু তিন লাখ টাকা দাম দেওয়া হয়েছে।
উপজেলা প্রাণীসম্পদ কার্যালয় জানায়, সীমান্ত উপজেলা টেকনাফে আড়াই শতাধিক পশু খামার রয়েছে। এর মধ্য অর্ধশতাধিক বড় খামার আছে। তাছাড়া কোরবানি মৌসুমে আরো অনেকে খামারজাত করেন। এসব খামারে প্রায় ২০ হাজার গরু, মহিষ-ছাগল রয়েছে। যা কোরবানি ঈদে হাটে বিক্রির প্রস্তুতি চলছে। এছাড়া অনেকে অনলাইনে পেইজে মাধ্যমে কোরবানি পশু বিক্রি করছে।
তবে এ উপজেলায় কোরবানি পশু চাহিদা রয়েছে সাড়ে ৮ হাজার। ব্যবসায়ী মোহাম্মদ ইকবাল বলেন, ‘প্রত্যেক বছর পশুর হাটে গিয়ে কোরবানির গরু কিনতাম। এবার সিদ্ধান্ত নিয়েছি হাটে না গিয়ে অনলাইনে গরু কিনবো। করোনাভাইরাসের কারণেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। অনলাইনে একটি গরু ঠিক করেছি। দামও খুুব বেশি না। ফেসবুক পেইজে অনলাইনের বর্ণনার সঙ্গে বাস্তবে মিল থাকলে কিনে নিয়ে আসবো।’
জানতে চাইলে টেকনাফ উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ড: মোহাম্মদ শওকত আলী বলেন, ‘শহরের মত টেকনাফে অনলাইনে কোরবানি পশু বিক্রি হচ্ছে। এটি খুব ভাল দিক। আমরা এসব খামারিদের উৎসাহিত করছি। কেননা দিন দিন করোনা ভাইরাস বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে পশু হাটে যত লোকজনের জমায়েত কম হবে, তত সবার জন্য উপকার হবে। এবারে চাহিদা অনুযায়ী কোরবানির পশু প্রস্তুত রয়েছে।’
তিনি আরো জানান, তাছাড়া সবাই বড় আকৃতির গরু কিনতে পারেন না। অনেক সময় বিক্রি না হলে খামারিরা ক্ষতিগ্রস্থ হন। তারপরও প্রাণী সম্পদ বিভাগ সবসময় খামারিদের পাশে আছে। ওই খামারিদের গরুগুলো আমরা দেখেছি। সেটি সুস্থ, সবল আছে। আশা করছি কাঙ্খিত দামে গরুটি বিক্রি করতে পারবেন খামারিরা।‘
এ বিষয়ে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ পারভেজ চৌধুরী জানান, ‘শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি মেনে যেন ক্রেতা-বিক্রেতারা পশু বেচা-কেনা করে সেজন্য প্রচারণা চালনো হচ্ছে। পশুর হাটে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে কিনা সরেজমিনে গিয়ে সেটিও তদারকি করবে আমাদের টিম।’