উত্তর জনপদে শীতের তীব্রতা বেড়েছে। ঘন কুয়াশায় আচ্ছাদিত হয়ে পড়েছে চারদিক। বইছে হালকা বাতাস। এতে জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে। নিম্ন আয়ের মানুষ পড়েছেন ভোগান্তিতে। হাসপাতালগুলোতে বেড়েছে শীতজনিত রোগী ভর্তির সংখ্যা। আমাদের প্রতিনিধি ও সংবাদদাতাদের পাঠানো খবর:
পঞ্চগড় :তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের সিনিয়র পর্যবেক্ষক জীতেন্দ্র নাথ রায় জানান, শনিবার সকাল ৯টায় তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে ১১ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। গত পাঁচ দিন ধরে তাপমাত্রা ৮ থেকে ১২ ডিগ্রিতে ওঠানামা করছে। দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ১৫ থেকে ২০ ডিগ্রিতে ওঠানামা করে। এদিকে রাত থেকে শুরু করে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত গোটা জেলা কুয়াশায় ঢেকে রয়েছে। অনেকেই খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। দিনের বেলায় হেড লাইট জ্বালিয়ে চলছে যানবাহন। পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও) ডা. সিরাজউদ্দৌলা পলিন জানান, শীত বেড়ে যাওয়ায় হাসপাতালে শীত ও শীতজনিত রোগী ভর্তি বেড়েছে।
জয়পুরহাট :কনকনে শীতে যবুথবু হয়ে পড়েছে জনজীবন। অসহায় ছিন্নমূল মানুষের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে রেলওয়ে হকার্স মার্কেটের কম দামি গরম কাপড়ের দোকানগুলোতে। শনিবার জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক স ম মেফতাহুল বারি জানান, অতিরিক্ত ঠান্ডার কারণে জমিতে থাকা আলুতে লেটব্রাইট রোগ দেখা দিতে পারে।
লালমনিরহাট :শৈত্যপ্রবাহের কারণে স্থানীয়রা জবুথবু অবস্থায় রয়েছে। স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যহত হচ্ছে। গতকাল শনিবার সকাল থেকে সূর্যের মুখ দেখা যায়নি। সকালে ১০ থেকে ১২ ডিগ্রি ও দুপুরে ১২ থেকে ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। ঠান্ডায় শিশু ও বৃদ্ধরা ডাইরিয়া, নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্টজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
গঙ্গাচড়া (রংপুর) :গত কয়েক দিন ধরে হাড় কাঁপানো ঠান্ডা ও শৈত্যপ্রবাহে গঙ্গাচড়ায় তিস্তার চরাঞ্চল ও তিস্তা কূলবর্তী গ্রামসহ উপজেলার সব জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে। লোকজন খড়কুটো জ্বালিয়ে রাতে ও দিনে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে। লক্ষ্মিটারী ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদী বলেন, তিস্তার চরাঞ্চলসহ বিভিন্ন এলাকায় শীতে মানুষের অবস্থা কাহিল হয়ে পড়েছে।
বদলগাছী (নওগাঁ) :উপজেলা সদর ইউপির গোরশাহী গ্রামের আবুল হোসেন ও খালেক বলেন, তীব্র শীতে মানুষের পাশাপাশি গবাদি পশুকে সাবধানে রাখা হচ্ছে। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডা. কানিস ফারহানা বলেন, কয়েক দিন ধরে ঠান্ডাজনিত রোগী বেশি আসছে আমরা তাদেরকে সেবা দিয়ে যাচ্ছি। বদলগাছী আবহাওয়া অফিসের উচ্চ পর্যবেক্ষক হামিদুল হক জানান, গতকাল শনিবার তাপমাত্রা ছিল ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
চিলমারী (কুড়িগ্রাম) :চিলমারী উপজেলায় টানা তিন দিনের ঘন কুয়াশা, হিমেল হাওয়া ও কনকনে শীতে জনজীবন প্রায় থেমে গেছে। কৃষক ও শ্রমিকরা অতিরিক্ত ঠান্ডার কারণে কাজে যেতে পারছেন না। হাসপাতালে সর্দি, কাশি ও শ্বাসকষ্টের রোগী বেশি ভর্তি হচ্ছে। সোনারী পাড়া এলাকার রহিমা বেওয়া (৭৫) জানান, শীতের কাপড়ের অভাবে অতিকষ্টে রয়েছি। গাবের তল এলাকার নজরুল ইসলাম জানান, মাত্রাতিরিক্ত ঠান্ডার ফলে দুটি বকরি মারা গেছে। ইরি-বোরোর বীজতলা লালচে হলুদ বর্ণ হয়ে যাচ্ছে।
রাজিবপুর (কুড়িগ্রাম) :মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে পাহাড়ি সীমান্তঘেঁষা এ অঞ্চলে। দিনের বেশির ভাগই দেখা মিলছে না সূর্যের। রাজিপুরের ভ্যানচালক মজিদ বলেন, ভ্যান নিয়ে রাস্তায় বের হয়েছি, কিন্তু যাত্রী অনেক কম পাচ্ছি। শনিবার সকাল ১১টায় উপজেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ দশমিক ২ ডিগ্রি রেকর্ড করা হয়েছে রাজারহাট কৃষি গবেষণা ও আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারে। উপজেলা স্বাস্থ্য প. প. কর্মকর্তা ডা. মোহা. সারওয়ার জাহান জানান, শীতজনিত রোগ বেড়েছে।
চাটমোহর (পাবনা) :চাটমোহরসহ চলনবিলাঞ্চলে শৈত্যপ্রবাহ চলছে। ঠান্ডার কারণে ছিন্নমূল মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। শনিবার দুপুর পর্যন্ত কুয়াশার চাদরে ঢাকা ছিল প্রকৃতি। হাসপাতালে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। এ অঞ্চলে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
দেবীগঞ্জ (পঞ্চগড়) :দেবীগঞ্জে গত দুদিন থেকে শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়েছে। কনকনে ঠান্ডায় জবুথবু হয়ে পড়েছে জনপদ। অনেকে আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে। এদিকে শীতবস্ত্রের দোকানগুলোতে ভিড় বেড়েছে।