বরিশাল জেলার মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার ১৬ টি ইউনিয়নের একটি উলানিয়া। উপজেলার দ্বিতীয় বৃহত্তম বন্দরে সপ্তাহে হাট বসে ২ দিন। সোম ও বৃহস্পতিবার বিকেলে এ হাট জমে ওঠে। রাত ১০-১১ টা পর্যন্ত জমজমাট থাকে। যদিও মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা সদরের প্রধান বাণিজ্য কেন্দ্র পাতারহাটে হাট জমে শুক্র ও মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত। তবে গত দেড় যুগ ধরে উলানিয়া বাজারে হাটের সেই পুরনো দৃশ্য আর চোখে পড়ে না। কারণ হলো মেঘনা নদীর ভয়াবহ ভাঙনে উপজেলার বিশাল অংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বিশেষ করে উলানিয়ার পাশ্ববর্তী গোন্দিপুর ইউনিয়ন পুরোপুরি বিলীন হয়ে এখন মেঘনা নদীর মাঝখানে ক্ষুদ্র চর জেগেছে। আবার উলানিয়ার পাশ্ববর্তী ভোলা জেলার রাজাপুর ইউনিয়নের রামদাসপুর ও কাপেরহাট এবং সাতাশ দাগ পুরোপুরি বিলীন হয়ে গেছে। ফলে এখন আর হাটে রামদাসপুর ও বঙ্গেরচর থেকে ট্রলার আসে না। অথচ প্রতি সোম ও বৃহস্পতিবার দুপুরে এ ২ স্থান থেকে ট্রলার থেকে আসত। তারা বাজারে নিয়ে আসত হাস-মুরগীসহ নানা সবজি। আবার যাওয়ার সময় কিনে নিয়ে যেত হরেক রবম দ্রব্য। নদীভাঙনের শিকার হয়ে অনেক পরিবার উলানিয়া ছেড়ে ঢাকা, বরিশাল,গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জে বসতি গড়েছে। ফলে হাটের সেই ভিড় আর নেই। তোফায়েল আহমেদ শামীম জানান, ১৯৯৬-১৯৯৮ আমরা উলানিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়তাম। হাটবার দিন মাছ বাজারের সামনে দিয়ে হাটতে পারতাম না। কুমারপট্টি গেলেই লোকজনের ধাক্কায় উলানিয়া করোনশেন হাইস্কুলের সামনে চলে যেতাম। আবু ইউনুস টিপু বলেন, ২০ বছর আগে উলানিয়া স্কুল মাঠে হাজার হাজার মণ সুপারি কেনাবেচা হতো। মরিচে ভরে যেত মাঠ। শীতের সময় কুমারপট্টিতে রসের হাড়ি, চিতুই পিঠার সাজ, মুড়ি ভাজার সরঞ্জামাদি কিনতে হাজারো লোকের ভিড় হতো। রফিকুল ইসলাম আকাশ বলেন, উলানিয়া কৃষি ব্যাংকের সামনে হাস-মুরগী, কবুতর, হোগলা কেনার দিনগুলো খুব মিস করছি। ঈদগাহ বাজারে বিক্রি হতো বাঁশের তৈরি সরঞ্জামাদি। শীতের সময় ধান বাজারে খেজুরের গুড়ের পসরা বসত। গরু বাজারে ব্যাপক বেচাকেনা হতো সেসময়। সেসময় গরুর মাংসের কেজি ছিল ৮০ টাকা। সময়ের ব্যবধানে উলানিয়া বাজারের যেমন সেই ভিড় নেই। টাকার মান কমে সেই মাংস এখন ৫০০ টাকা কেজি।