মহামারি করোনা ভাইরাসের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে খুলনাসহ চার জেলার ৬০ হাজার ৮৮০ মৎস্য চাষিকে আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে সরকার। ছয়টি ক্যাটাগরিতে ১০ থেকে ১৮ হাজার টাকা করে প্রণোদনার এ আর্থিক সহায়তা পাবেন ক্ষতিগ্রস্থ নিম্ন্ন ও মধ্য আয়ের চাষিরা। বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় চলমান একটি প্রকল্প থেকে মৎস্য চাষিদের এ সহায়তা দেয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করার মাধ্যমে সুবিধাভোগীদের মোবাইল ব্যাংক এ্যাকাউন্টে এ অর্থ প্রদান করা হবে। খুলনা বিভাগীয় উপ প্রকল্প পরিচালকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় চলমান মৎস্য অধিদফতরের ‘সাসটেইনেবল কোস্টাল অ্যান্ড মেরিন ফিশারিজ প্রজেক্ট’ তাদের প্রকল্পভূক্ত উপকূলীয় ১৬ জেলার ৭৮ হাজার চাষিকে এ সহায়তা দিচ্ছে সরকার। তন্মাধ্যে খুলনা বিভাগের খুলনা, সাতক্ষীরা, যশোর ও বাগেরহাট জেলার ২৭ উপজেলার ৬০ হাজার ৮৮০ চাষি এ অর্থ সহায়তা পাচ্ছেন। উপজেলা থেকে তালিকা প্রস্তুত করে জেলা কার্যালয়ে জমা দেয়া হয়েছে। তাদের মোবাইল ব্যাংকিংয়ের অ্যাকাউন্টে দেয়া হবে এ নগদ অর্থ। খুলনা জেলার নয় উপজেলায় ১২০ জন কাঁকড়া চাষি ও ৩০ জন কুঁচিয়া সংগ্রহকারীসহ মোট ৯ হাজার ৮৫৯ জন, যশোরের দুটি উপজেলায় ১৮৩১ জন, বাগেরহাটের নয় উপজেলায় কাঁকড়া চাষি ১০৬৩ জন ও কুঁচিয়া সংগ্রহকারী ১২ জন সহ মোট ২৮ হাজার ৪১৪ জন চাষি এবং সাতক্ষীরার সাত উপজেলায় কাঁকড়া ৫৩৭ চাষি ও কুঁচিয়া সংগ্রহকারী ৬৮ জন সহ মোট ২০ হাজার ৭৭৬ জন মৎস্য চাষি এই অর্থ সহায়তা পাবেন। খুলনার মধ্যে সবচেয়ে বেশি সহায়তা পাচ্ছেন ডুমুরিয়া উপজেলায়। এ উপজেলায় ১১ জন কাঁকড়া চাষিসহ মোট পাচ্ছেন ৪ হাজার ১১৪ জন ক্ষতিগ্রস্থ চাষি। প্রাকৃতিক দূর্যোগে চরম ক্ষতিগ্রস্থ কয়রা উপজেলায় পাচ্ছে ৫৪১ চাষি। এছাড়া বটিয়াঘাটায় ৫৩৩, দাকোপে ৬২৭, রূপসায় ৮৫৪, ফুলতলায় ৯০৩, দিঘলিয়ায় ৬৬৯, পাইকগাছা ১৬১৮ জন চাষির নাম চূড়ান্ত করে পাঠানো হয়েছে। যশোরের কেশাবপুর ৭৮০জন ও মনিরামপুরে ১০৫১ জন চাষির তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলায় সবচেয়ে বেশি পাচ্ছে। এ উপজেলায় ৫ হাজার ৩৭২ চাষির নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে। সবচেয়ে কম পাচ্ছে কলারোয়া উপজেলায়। এ উপজেলায় ৫২৭ জন চাষি সুবিধা পাচ্ছে। এছাড়া সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় ১ হাজার ১৮৭, শ্যামনগরে ৪ হাজার ৮০৫, আশাশুনিতে ৪ হাজার ১৮৪, দেবহাটায় ১ হাজার ৭১২ ও তালায় ২ হাজার ৯৮৯ জন চাষির তালিকা চূড়ান্ত হয়েছে। বাগেরহাটে সবচেয়ে বেশি পাবে চিতলমারী উপজেলায়। এ উপজেলায় ৪ হাজার ৬৮৫ জন চাষি এ সহায়তা পাবেন। এছাড়া সদর উপজেলায় ৪ হাজার ৪২, মোল্লাহাটে ৪ হাজার ৪৬২, মোংলায় ২ হাজার ৪৮৮, ফকিরহাট ৪ হাজার ৩২, রামপালে ৪ হাজার ৭৪, মোরেলগঞ্জে ২ হাজার ৪৩৪, কচুয়ায় ১ হাজার ৪৬২ ও সিডরে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ শরণখোলায় ৭৩৫ জন। বিভিন্ন উপজেলার মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, ক্ষতিগ্রস্থদের ছয়টি ক্যাটাগরিতে এ সহায়তা দেয়া হচ্ছে। সেগুলো হলো- ক্ষুদ্র মৎস্যচাষি, ক্ষুদ্র চিৎড়িচাষি, মাঝারি মৎস্যচাষি, মাঝারি চিৎড়িচাষি, কুঁচিয়াচাষি এবং কাঁকড়াচাষি। সাদা মাছ ও চিংড়ি চাষিদের ঘের অবশ্যই ৩ একরের কম জমিতে হতে হবে। ৩ একরের বেশি জমির ঘের মালিকরা এ প্রকল্পের আওতায় আসবে না। তবে কাঁকড়া চাষির ক্ষেত্রে জমির কোন বাধ্যবাধকতা নাই। আর কুঁচিয়া সংগ্রহকারীরা সরঞ্জামাদি মেরামতের জন্য এই সুবিধা পাবেন। বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ড. মোঃ খালেদ কনক বলেন, চিংড়ি খাদ্য, রেণু ক্রয় বাবদ বিভিন্ন ক্যাটাগীতে চাষিদের এ সহায়তা দেয়া হচ্ছে। এই প্রকল্পের সুবিধা নিয়ে করোনা পরিস্থিতিকালীন ক্ষতিগ্রস্থ চাষিরা তাদের ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে উঠতে পারবে বলে আশা করি।