ইসলামী গবেষক ও চিন্তাবিদ, সুরেশ্বর দরবার শরীফ পরিচালনা কমিটির মহাপরিচালক সাইয়্যেদ শাহ সূফী বেলাল নূরী আল সুরেশ্বরী (মাঃ জিঃ আঃ) গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে তুলে ধরেছেন মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার সঙ্গে তার স্মৃতির নানা দিক। তিনি বলেন, ১৯৭০ সালে তিনি জগন্নাথ কলেজের ছাত্র। বঙ্গবন্ধু এম. এ. রেজার মাধ্যমে সুরেশ্বর দরবার শরীফের পীর সাহেব জালাল নূরী হুজুরের কাছে দোয়া চান। তখন বাবা জালাল নূরী আফিয়ানহু হুজুর বঙ্গবন্ধুকে সুরেশ্বর দরবার শরীফ জিয়ারতের জন্য আমন্ত্রণ জানান। বঙ্গবন্ধু আমন্ত্রণ গ্রহণ করেন এবং ১৯৭০ সালের আগষ্ট মাসে জিয়ারতের উদ্দেশ্যে সুরেশ্বর দরবার শরীফে যান। বঙ্গবন্ধুর আগমনের খবর জানতে পেরে রওজা শরীফের বিশাল মাঠ প্রাঙ্গন লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। বাবাহুজুর বঙ্গবন্ধুকে বলেন, ইনশাআল্লাহ আপনি নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়লাভ করবেন এবং প্রধানমন্ত্রীর চেয়েও উচ্চ মর্যাদা আল্লাহপাক আপনাকে দান করবেন। তবে ক্ষমতায় গেলে আপনি আমাদের জন্য কি করবেন? বঙ্গবন্ধু প্রশ্নের উত্তরে বলেন, হুুজুর, আপনাদের জন্য আমি কি করতে পারি আপনিই বলুন। তখন বাবা হুজুর বললেন, আমরা সূফী-দরবেশরা, তরিকতের পথের পথিকরা শান্তিপ্রিয় সহজ-সরল নির্বিবাদী মানুষ। ইসলামের লেবাসধারী এক শ্রেণীর উগ্র-কট্টরপন্থী তথাকথিত মোল্লাদের দ্বারা আমরা নির্যাতিত, অপদস্থ, তাদের অত্যাচার ও অপ-প্রচারে আমরা জর্জরিত। তাই আমরা যেন নিশ্চিন্তে, নির্বিঘ্নে ও শান্তিতে ধর্মকর্ম পরিপালন করতে পারি এটাই আপনার কাছে আমার আবেদন। তখন বঙ্গবন্ধু সাথে সাথেই বললেন, আমি কথা দিচ্ছি হুজুর, আমি ক্ষমতায় গেলে এই দেশে ধর্মনিরপেক্ষ শাসন পদ্ধতি কায়েম করবো। বাবা হুজুর সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সুরেশ্বরীয়া সকল ভক্ত-প্রেমিক-আশেক-মুরিদ এবং অন্যান্য দরবার-খানকাসমূহের পীর-মাশায়েখ ও ভক্ত-মুরিদদের প্রতি আওয়ামী লীগের পক্ষে নির্বাচনে কাজ করার জন্য ও ভোট দেয়ার জন্য এবং বঙ্গবন্ধুর হাতকে শক্তিশালী করার জন্য উদাত্ত আহবান জানান। ৭১-এর স্বাধীনতা যুদ্ধে সুরেশ্বর দরবার শরীফের পক্ষ থেকে মুক্তিযুদ্ধাদেরকে যথাসাধ্য সহযোগিতা করি এবং তাদেরকে খাদ্য ও আশ্রয় দিয়ে সেবা প্রদান করি। বাবাহুজুরের আদেশে আমি বেলাল নূরী মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ ও ট্রেনিং গ্রহণের নিমিত্তে আমার ফুফাতো ভাই তৌহিদুল ইসলাম কয়েস ও রাকিবকে সাথে নিয়ে ভারতের উদ্দেশ্যে রওয়ানা করি। কুমিল্লা বেগুনবাড়ি বর্ডার দিয়ে যাত্রা করে আমরা আসামের শিলচরে যেয়ে উপস্থিত হই এবং সেখানে যেয়ে আমরা নানাহ সমস্যার সম্মুখীন হই। এ সময় আমরা স্বাধীন বাংলাদেশ মিশনের সাথে যোগাযোগ করি। সেই সময়কার স্বাধীন বাংলাদেশ মিশনের ফরেন সেক্রেটারী কামাল সিদ্দিকী সাহেব একটি চিঠি লিখে দেন যে, তারা তিনজন বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা, তাদেরকে সকল প্রকার প্রয়োজনীয় সাহায্য-সহযোগিতা করার জন্য ভারত সরকারকে অনুরোধ জানাই। পরবর্তীতে স্বাধীন সার্বভৌম ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশ সরকার কায়েম হয়। এর অল্প কয়েক বছরের মধ্যেই ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ সালে দুষ্কৃতকারীরা এই মহান নেতা, বঙ্গ শার্দুল, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ তাঁর পরবিারর্বগকে অত্যন্ত নৃশংসভাবে হত্যা করে।
নির্বাচন পরবর্তী বৈরী পরিবেশের সময় জননেত্রী শেখ হাসিনা সুরেশ্বর দরবার শরীফে ২রা অগ্রহায়ণ ওরশে আমার সাথে মোনাজাতে অংশ গ্রহণ করার সদিচ্ছা ব্যক্ত করেন। এ উপলক্ষে আমি মোবাইল এন্টিনা সংযোগের ব্যবস্থা করলেও নেটওয়ার্ক না পাওয়ায় মাননীয় নেত্রী সেই মোনাজাতে শামিল হতে পারেননি। কিন্তু রাত প্রায় সাড়ে এগারটার দিকে তিনি আবার আমার বিশিষ্ট মুরিদ গোপালগঞ্জ নিবাসী গাজী মঞ্জরুর ইসলাম এর মাধ্যমে আমাকে ফোন দেন। আমার কথার উত্তরে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেছিলেন, হুজুর, নির্বাচনে জয়ী হলে তো আসবোই, তবে তার আগেই সুরেশ্বর দরবার শরীফ জিয়ারতে আসবো। তখন আমি তাকে জানিয়েছলাম, যেহেতেু আপনি নিয়ত করছেনে তাই যত বাঁধাই আসুক না কেন আপনি কিন্তু‘ সুরশ্বের দরবার শরীফ জিয়ারত করে যাবনেই। এই কথা বলার কিছুদিনের মধ্যেই তিনি দরবার শরীফে আসার সদিচ্ছা ব্যক্ত করেন এবং আমার আমন্ত্রণে তিনি শরিয়তপুরের কৃতি সন্তান আবদুর রাজ্জাক ও সিনিয়র নেতা সাদেজা চৌধুরীসহ অন্যান্য নেতাদেরকে সফরসঙ্গী করে বিরোধী দলীয় নেত্রী হিসেবে লঞ্চ কাফেলাযোগে সুরেশ্বর দরবার শরীফ জিয়ারতের উদ্দেশ্যে আগমন করেন ২০০২ সালের ১১ এপ্রিল। আমি নেত্রীসহ সফরসঙ্গীদেরকে সাদর অভ্যর্থনা জানাই এবং তাদেরকে নিয়ে প্রথমেই রওজা শরীফ জিয়ারত করি। এ বিজয়ের মাসে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানরে স্মৃতির উদ্দেশ্যে অগাধ শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি ও আমার পক্ষ থেকে সুরেশ্বর দরবার শরীফের আওলাদগণ এবং সুরশ্বের দরবার শরীফরে অসংখ্য ভক্তবৃন্দরে পক্ষ থেেক বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জানাচ্ছি দোয়া এবং শুভ কামনা।