চাকরিপ্রত্যাশীদের মধ্যে পেশা হিসেবে ব্যাংকিং জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। ব্যাংকিং পেশায় ক্যারিয়ার গড়তে চাইছেন এখন অনেকেই। সমন্বিত সাত ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার পদের নিয়োগ পরীক্ষা আগামী ৫ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে। ৬৭টি কেন্দ্রে ১ লাখ ৪০ হাজার ১৫৫ জন পরীক্ষার্থী এ পরীক্ষায় অংশ নেবেন। ৭৭১টি পদে নিয়োগ পেতে এক ঘণ্টার এমসিকিউ পরীক্ষায় উত্তীর্ণরাই স্বপ্নপূরণের জন্য লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ পাবেন।প্রার্থী বেশি থাকায় বাছাই পরীক্ষায় হবে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা। শেষ সময়ের প্রস্তুতিপর্বটাও বুঝে-শুনে সারতে হবে। পরিকল্পিত, গোছালো প্রস্তুতির জন্য ঠিক করতে হবে কী কী পড়তে হবে, কতটুকু পড়তে হবে। শেষ সময়ের প্রস্তুতিতে বেশি সময় দিলে প্রার্থীরা এগিয়ে থাকবেন।
ব্যাংকের পরীক্ষা পদ্ধতি
মূলত তিনটি ধাপে ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। প্রথমে ১০০ নম্বরের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে এমসিকিউ পদ্ধতিতে। প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীরাই পরবর্তী সময়ে ২০০ নম্বরের (নম্বর কম বা বেশি হতে পারে) লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন। তারপর সর্বশেষ ধাপ হলো ২৫ নম্বরের ভাইভা।
প্রাথমিক বাছাই পরীক্ষা
এ অংশে ভালো করার জন্য সময়জ্ঞান, তাৎক্ষণিক বুদ্ধিমত্তা, সার্বক্ষণিক মনোযোগ ও মনোবল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তা ছাড়া ভুল উত্তরের জন্য নম্বর কাটার বিধান থাকায় বাড়তি সতর্কতা অবশ্যই জরুরি। ব্যাংকের ক্ষেত্রে বাংলা, ইংরেজি, গণিত, সাধারণ জ্ঞান, বিজ্ঞান ও কম্পিউটার প্রযুক্তি অংশ থেকে প্রশ্ন থাকে সব মিলিয়ে ১০০ নম্বরের। বিসিএসসহ অন্যান্য সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষার প্রস্তুতিও সহায়ক হয় ব্যাংকের পরীক্ষার ক্ষেত্রে।
বাংলার ক্ষেত্রে সাহিত্য অংশ থেকে অধিকাংশ প্রশ্ন এলেও বাংলা ব্যাকরণের বানান বা বাক্য শুদ্ধিকরণ, প্রবাদ প্রবচন, বাগ্ধারা, সন্ধি, সমাস, প্রকৃতি ও প্রত্যয়, এককথায় প্রকাশ থেকে প্রশ্ন আসে। নবম-দশম শ্রেণির বাংলা ব্যাকরণ পুরো পড়ে ফেললে ভালো হয়। ইংরেজিতে সমার্থক শব্দ, বিপরীত শব্দসহ ব্যাকরণ অংশ থেকে প্রশ্ন থাকে। বাক্যে ভুল নির্ণয় ও সংশোধন, অপূর্ণ বাক্য সম্পূর্ণ করা এবং প্রদত্ত প্যাসেজ থেকে প্রশ্নোত্তর বেশি বেশি অনুশীলন করলে যেকোনো ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষায় দ্রুত উত্তর দেওয়া সম্ভব। অন্য অংশের জন্য হাতে বেশি সময় থাকে। তুলনামূলকভাবে গণিতে বেশি সময় লাগে। এ অংশে সাধারণ গণিতের পাশাপাশি গাণিতিক বিশ্লেষণক্ষমতা যাচাইয়ের জন্য টেস্ট থাকে। গণিত অংশে ভালো করতে হলে বেশি করে অনুশীলনের বিকল্প নেই। ক্যালকুলেটর ছাড়া ইংরেজি ভাষায় অঙ্ক সমাধানের অভ্যাস গড়ে তুলুন।যেহেতু আর কয়েক দিন পরই পরীক্ষা। তাই শর্ট প্রস্তুতিতে আগে বিগত সালের পরীক্ষাগুলোর প্রশ্ন সমাধান করে অ্যানালাইসিস করে দেখতে পারেন। দেখবেন কিছু প্রশ্ন হুবহু অপশনসহ পুনরায় আসে। সম্ভব হলে পরীক্ষার আগে পুরোনো প্রশ্নগুলো ভালোভাবে সমাধান করে নিন।
এমসিকিউ প্রস্তুতি যেভাবে
গত কয়েকটি পরীক্ষা প্রশ্নে দেখা গেছে (এমসিকিউ ১০০ নম্বর) বাংলা, ইংরেজি, গণিত, সাধারণ জ্ঞান, কম্পিউটার, বিজ্ঞান, সমসাময়িক বিশ্ব থেকে প্রশ্ন হয়। এমসিকিউ অংশে বাংলা, ইংরেজি, গণিত, সাধারণ জ্ঞান ও কম্পিউটারসংক্রান্ত বিষয়গুলো আগে পড়তে হবে। তবে যারা বিসিএস বা অন্য চাকরির প্রস্তুতি নিচ্ছেন তাঁদের জন্য বাংলা ও সাধারণ জ্ঞান অনেকটাই পড়া হয়ে যাবে। তবে এর মানে এই নয় যে, বাংলা, ইংরেজি ও সাধারণ জ্ঞান তাদের না পড়লেও চলবে। গণিতের কিছু গুরুত্বপূর্ণ টপিক আছে যেগুলো থেকে প্রায় প্রশ্ন পরীক্ষায় আসে সেগুলো আগে শেষ করতে হবে। বিজ্ঞান ও কম্পিউটার অংশটি খুবই গুরুত্বসহকারে পড়তে হবে। তবে মনে রাখতে হবে কোনো অংশই কম গুরুত্ব দেওয়া যাবে না। কোনো একটি অংশ কম গুরুত্ব দিলে পরীক্ষায় কম নম্বর পাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
প্রতিটি বিষয়কে প্রতিদিন সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সময়, সুযোগ এবং সাধ্যমতো একটা পরিকল্পনা করে পড়তে থাকুন। বেসিক ক্লিয়ার করে পড়াশোনা চালিয়ে গেলে সফলতা আপনার কাছে আসবেই। বেশি বেশি বই না পড়ে ভালো মানের অল্প বই বারবার পড়াই ভালো। বেসিক ক্লিয়ার করে পড়লে মেমোরাইজ জোন তৈরি হবে, মনে থাকবে বেশি দিন। বহু নির্বাচনী (এমসিকিউ) প্রশ্ন থাকবে ১০০টি। প্রতিটি সঠিক উত্তরের জন্য ১ নম্বর করে বরাদ্দ। নেগেটিভ মার্কিং থাকলে প্রতিটি ভুল উত্তরের জন্য ০.২৫ নম্বর করে কেটে নেওয়া হয়।
শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিতে যা করণীয়
প্রস্তুতির শুরুতেই ব্যাংকের বিগত সালের সব প্রশ্ন (সমাধানসহ) সমাধান করে ফেলুন। বিগত বছরের প্রশ্নপত্র বিশ্লেষণ করা সবচেয়ে বেশি জরুরি। সচরাচর আসে এমন প্রশ্নগুলোর ধরন কী, কোন কোন টপিক থেকে প্রশ্ন থাকার প্রবণতা বেশি, সেগুলো খুঁজে বের করুন। আর কোন টপিকস থেকে সাধারণত প্রশ্ন থাকে না, সেগুলোও নোট করুন। এ কাজটি যত ভালোভাবে করতে পারবেন, আপনার প্রস্তুতি পরিকল্পনা সাজানো তত সহজ হবে।
পরীক্ষায় কী ‘পড়বেন’, তার চেয়ে বেশি জরুরি হলো ‘কী বাদ দেবেন’। যখন জানা হয়ে যাবে, কোন ধরনের প্রশ্ন পরীক্ষায় আসে, কোন কোন টপিক থেকে বেশি বেশি প্রশ্ন আসে, তখন সেসব টপিকস নিয়ে নিজেই একটা সাজেশন বা গাইডলাইন তৈরি করতে পারবেন। এই গাইডলাইন ধরেই প্রস্তুতি শুরু করে দিন।
প্রিলিমিনারি পরীক্ষার জন্য পর্যায়ক্রমে সব বিষয়ের প্রস্তুতি নিতে হবে। সময় কম, দৈনন্দিন রুটিন ঠিক করে ফেলুন। প্রতিদিনের প্রস্তুতিতে যেমন ভালো হবে প্রস্তুতি, তেমনি বাড়বে আত্মবিশ্বাসও।
অনেক সময় দেখা যায়, কেউ ইংরেজিতে দক্ষ কিন্তু গণিতে একটু দুর্বল। আবার কেউ গণিতে দক্ষ, তবে ইংরেজিতে কাঁচা। শুধু ব্যাংকের চাকরিই নয়, অধিকাংশ চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় ভালো করার মূলমন্ত্র ‘ইংরেজি’ ও ‘গণিত’ ভালো করা। বিগত বছরের প্রশ্ন বিশ্লেষণ ও সমাধানের পর ইংরেজি ও গণিতে বাড়তি সময় দিন। বিষয় দুটিকে সমানভাবে গুরুত্ব দিলেই দুই বিষয়ে যত দক্ষ হবেন, ‘চাকরি ততই হাতের নাগালে’ চলে আসবে।
ইংরেজিতে Synonyms, Antonyms, Analogy, Fill in the blanks, Sentence correction, Sentence convert/change, ইংরেজি সাহিত্যসহ ইত্যাদি টপিক থেকে প্রশ্ন থাকে।
গণিতে দুর্বলতা থাকলে এ নিয়ে ভয় না পেয়ে অনুশীলন চালিয়ে যান। সপ্তম থেকে দশম শ্রেণির গণিত বই থেকে বেসিক ঝালাই করে নিতে পারেন এ সময়ে। গণিত বুঝে বুঝে অনুশীলন করুন, মুখস্থ করতে গেলে বাড়তে পারে বিপদ। প্রিলিমিনারি পরীক্ষার জন্য অল্প সময়ে অনেক অঙ্কের সমাধান করতে হয়, এ জন্য শর্টকাট টেকনিক শিখতে হবে। নিয়মিত অনুশীলনে কেটে যাবে গণিতভীতি।
কম্পিউটার ও বিজ্ঞানকে অবহেলা করার সুযোগ নেই। গণিত ও ইংরেজির কোনো বিষয়ে একটু দুর্বলতা থাকলে কম্পিউটার, তথ্যপ্রযুক্তি দিয়ে এগিয়ে থাকতে পারবেন। তাই এ বিষয়ের প্রস্তুতি সময়মতো ঝালিয়ে নিন। বিগত সালের প্রশ্ন, এসএসসি ও এইচএসসির তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বই এবং বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে প্রস্তুতি নিতে পারেন।
বাংলা, সাধারণ জ্ঞান, মানসিক দক্ষতা প্রভৃতি কোনো বিষয়েই অবহেলা করার সুযোগ নেই। সে জন্য সব বিষয়েরই প্রস্তুতি নিতে হবে জোরালোভাবে। বাংলার ক্ষেত্রে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে ব্যাকরণ অংশে। ব্যাকরণ অংশে ভালো প্রস্তুতির জন্য মুনীর চৌধুরী রচিত নবম-দশম শ্রেণির ব্যাকরণ বইটির এখনো কোনো বিকল্প নেই।
বাংলা সাহিত্যের প্রস্তুতির জন্য খুব বেশি চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। এ অংশ থেকে প্রশ্ন খুব কম আসে। বাংলা সাহিত্য অংশে গুরুত্বপূর্ণ ১০-১২ জন সাহিত্যিক সম্পর্কে ধারণা রাখলে আর চাকরির পরীক্ষায় আসা আগের বছরগুলোর প্রশ্ন সমাধান করলে সহজেই প্রিলিমিনারিতে ভালো করা যেতে পারে।প্রস্তুতিতে নানা কারণে ঘাটতি থাকলে হাল ছেড়ে দেবেন না। যতটুকুই প্রস্তুতি নিয়েছেন আর যতটুকু পড়ার সুযোগ আছে, কাজে লাগিয়ে বসে যান পরীক্ষায়।
পরিকল্পনা ও রুটিন
দিনভর একই বিষয় পড়তে পড়তে হয়তো ভালো লাগবে না, বিরক্তি চলে আসতে পারে। তাই দিনের কখন কোনো বিষয় পড়বেন, তার শর্ট রুটিন বা সূচি তৈরি করুন। সুবিধা অনুযায়ী সময় ও বিষয় ভাগ করে নিন। যেমন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত গণিত; দুপুরে গোসল-খাওয়া শেষে বিশ্রাম নিতে নিতে পত্রিকার খুঁটিনাটি পড়তে পারেন, যেগুলো পড়লে সাধারণ জ্ঞান বাড়বে। রাতে আপনার সুবিধা অনুযায়ী যেকোনো একটি বিষয় পড়তে পারেন এবং একটি বাংলা থেকে ইংরেজি ও একটি ইংরেজি থেকে বাংলা অনুবাদ চর্চা করতে পারেন। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে অবশ্যই সারা দিন কী কী পড়লেন, সেগুলো স্মরণ করার চেষ্টা করুন।