টুর্নামেন্টের শুরুর দিকে না থাকলেও, বিরতির পর আবার শুরু হওয়া পাকিস্তান সুপার লিগের (পিএসএল) প্লে-অফ পর্বে অংশ নিতে পাকিস্তান গিয়েছেন বাংলাদেশ দলের ওয়ানডে অধিনায়ক ও বাঁহাতি ওপেনার তামিম ইকবাল, খেলেছেন লাহোর কালান্দার্সের হয়ে।আশা জাগিয়েও চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি তামিমের লাহোর। মঙ্গলবার রাতের ফাইনালে ম্যাচে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী করাচির কাছে তারা হেরে গেছে ৫ উইকেটের ব্যবধানে। লাহোরের করা ১৩৪ রানের জবাবে ৫ উইকেট হারিয়ে ১৮.৪ ওভারেই ম্যাচ জিতে নিয়েছে করাচি কিংস। ফলে রানার্সআপ হয়েছে তামিমের দল লাহোর।
এ তো গেলো লাহোরের দলীয় পারফরম্যান্স। বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের আসল নজর ছিল তামিমের ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সের দিকে। বিশেষ করোনা পজিটিভ হয়ে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ যেতে না পারায় এবারের পিএসএলে বাংলাদেশিদের সকল মনোযোগ কেন্দ্রীভূত হয়েছিল তামিমের দিকে।তা কেমন করলেন তামিম? সূত্রের খবর অনুযায়ী, পিএসএলের তিন ম্যাচ খেলার বিনিময়ে ৭৫ হাজার ডলার পেয়েছেন তামিম। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ৬৩ লাখ ৭২ হাজার টাকার মতো। এর প্রতিদান কি দিতে পেরেছেন দেশসেরা এ ওপেনার? নাকি তাকে দলে নিয়ে ক্ষতির মুখেই পড়েছে লাহোর?উত্তর জানতে হলে দেখতে হবে তামিমের তিন ম্যাচের পারফরম্যান্স। যেখানে প্রথম ম্যাচটি ছিল পেশোয়ার জালমির বিপক্ষে প্রথম এলিমিনেটর ম্যাচ। যেখানে ১৭১ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে তামিম আউট হন ১০ বলে ১৮ রান করে, সংক্ষিপ্ত ইনিংসটিতে ছিল ২ চার ও ১ ছয়ের মার।রানরেটের চাহিদা মেটানোর লক্ষ্যে আক্রমণাত্মক শুরু করলেও ইনিংস বড় হয়নি তামিমের। পরে মাত্র ৪৬ বলে ৭৪ রানের ঝড় তুলে লাহোরকে দ্বিতীয় এলিমিনেটর ম্যাচের টিকিট এনে দেন মোহাম্মদ হাফিজ। যেখানে তাদের সামনে পড়ে কোয়ালিফায়ার ম্যাচে হেরে যাওয়া মুলতান সুলতানস।প্রথম ম্যাচে পরে ব্যাট করলেও মুলতানের বিপক্ষে আগে ব্যাট করে তামিমের লাহোর। এ ম্যাচে নিজের প্রথম ম্যাচের ব্যাটিংকে ছাপিয়ে যান তামিম, তবে আবারও দোষী হন ইনিংস বড় করতে না পারার দায়ে। এবার তিনি ৫ চারের মারে ২০ বলে ৩০ রান করে আউট হন।এই ম্যাচে লাহোরের রক্ষাকর্তা হন সাউথ আফ্রিকান অলরাউন্ডার ডেভিড উইজ। যিনি প্রথমে ২১ বলে ৪৮ রানের টর্নেডো ইনিংস খেলেন। পরে আবার বল হাতেও নেন ৩টি উইকেট। উইজের এমন পারফরম্যান্সের সুবাদে ২৫ রানে জেতে লাহোর। পেয়ে যায় প্রথমবারের মতো ফাইনালে খেলার টিকিট।কিন্তু মঙ্গলবার রাতে করাচির ন্যাশনাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ফাইনাল ম্যাচে করাচি কিংসের কাছে পাত্তাই পায়নি লাহোর। পেসারদের দুর্দান্ত বোলিং এবং বাবর আজমের অনবদ্য ফিফটিতে ভর করে ৮ বল হাতে রেখেই ৫ উইকেট সহজ জয় পেয়েছে করাচি। যা তাদের এনে দিয়েছে প্রথম পিএসএল শিরোপা।ফাইনাল ম্যাচে আগে ব্যাট করতে নেমে করাচির মন্থরগতির উইকেটের কাছেই মার খেয়ে গেছে লাহোর। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৩৫ রান করেছেন তামিম ইকবাল। কিন্তু এতে খরচ হয়ে গেছে ৩৮টি বল। প্রায় ঘণ্টাখানেকের এই ইনিংসে ৪টি চারের সঙ্গে ১টি ছক্কা হাঁকান তামিম।তার এমন ধীর ইনিংসের পর বাকিদের কাছ থেকে প্রয়োজন ছিল মারকাটারি ব্যাটিং। কিন্তু বাকিরা আরও ব্যর্থতার পরিচয় দিলে ১৩৪ রানের বেশি করতে পারেনি লাহোর। ফলে সহজ সুযোগ পেয়ে শিরোপা নিজেদের ঘরে তুলে নিয়েছে করাচি কিংস।এদিকে তিন ম্যাচ মিলিয়ে মোট ৬৮ বল খেলেছেন তামিম, ২৭.৬৬ গড়ে করেছেন ৮৩ রান। ফলে স্ট্রাইকরেট দাঁড়ায় ১২২.০৫, টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের সঙ্গে যা বড্ড বেমানান। প্রথম দুই ম্যাচে স্ট্রাইকরেট ঠিক রেখে খেলতে পারলেও, শেষ ম্যাচে বলপ্রতি রানও করতে পারেননি তিনি।এর মধ্যে তামিম বাউন্ডারি হাঁকিয়েছেন ১১টি, ওভার বাউন্ডারি ছিল ২টি; অর্থাৎ ৮৩ রানের মধ্যে চার-ছক্কার মারেই ১৩ বলে তিনি করেছেন ৫৬ রান। বাকি ৫৫ বলে এসেছে মাত্র ২৭ রান। এতে বোঝা যায়, বাউন্ডারি না পাওয়া বলগুলোর বেশিরভাগই ডট খেলেছেন তামিম। যা তার নিজের ও দলের ওপর চাপ বাড়িয়েছে।তবে মজার বিষয় হলো, দুই এলিমিনেটর ও ফাইনাল অর্থাৎ এ তিন ম্যাচে লাহোরের পক্ষে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান করেছেন তামিম। প্রথম এলিমিনেটর ম্যাচে ৭৪ রানের ইনিংস খেলার সুবাদে সবচেয়ে বেশি ৯৫ রান হাফিজের। এরপরই তামিমের সংগ্রহ ৮৩ রান। তিন ম্যাচেই অন্তত দুই অঙ্কে যেতে পেরেছেন তামিম।স্ট্রাইকরেট বিবেচনায় বেশ পিছিয়ে থাকলেও, তিন ম্যাচে ধারাবাহিকভাবে রান করার দিক থেকে নিজের কাজটি ভালোভাবেই করেছেন তামিম। ফলে ঠিক জোর দিয়ে বলা যাবে না যে, লাহোরের পক্ষে ভালো করতে পারেননি তামিম। আবার এটিও বলার সুযোগ নেই যে, পিএসএল মাতিয়েছেন দেশসেরা এ ওপেনার। সবমিলিয়ে ভালো-খারাপের মিশেলেই শেষ হয়েছে তামিমের এবারের পিএসএল যাত্রা।