চট্রগ্রাম ও সিলেটের চিরহরিৎ বনাঞ্চলের বিপন্ন লজ্জাবতী বানরের দেখা মিলেছে এখন টাঙ্গাইলের মধুপুর ন্যাশনাল পার্কখ্যাত দোখলা বনে। শাল গজারি গুল্মহীন পত্র-পল্লব ঝরা বনাঞ্চলে বিলুপ্ত প্রায় এমন প্রানীর সন্ধান মেলায় বন্যপ্রাণী বিশারদগণ ও বিভিন্ন মিডিয়া ব্যাক্তিত্বরা বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। মধুপুর জাতীয় উদ্যান সদর রেঞ্জের লহুরিয়া বিটের গভীর জঙ্গলে সৌখিন ভিডিও গ্রাফার আব্দুর রহমান রুপমের ক্যামেরায় ধরা পড়ে বিলুপ্ত প্রায় এ লজ্জাবতী বানরটি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও টুইটারে তাৎক্ষনিক প্রাণীটির সচিত্র খবর ভাইরাল হয়ে যায়। এর আগে প্রায় দশ বছর আগে চট্রগ্রামের বনাঞ্চলে এই লজ্জাবতী বানরটি দেখা গিয়েছিল। লজ্জাবতী বানর সাধারণত লরিসিডি পরিবারের হয়ে থাকে। এরা নিশাচর ও লাজুক স্বভাবের হয়। আর লাজুক স্বভাবের হয় বলেই এর নাম লজ্জাবতী। এরা লম্বায় ৩৮ সে.মি. এবং ওজনে প্রায় ২কেজির মত হয়ে থাকে। লজ্জাবতী বানরের মাথা গোলাকার, মুখ চ্যাপ্টা, চোখ দুটি মায়বী ও বেশ বড়। শরীর সাদা ও বাদামী রঙ্গের ঘন পশমে ঢাকা থাকে। তবে কান ও লেজ ছোট থাকে। মাথার উপড় থেকে একটি গাঢ় দাগ পিট বেয়ে লেজের দিকে নেমে গেছে। এরা একাকী ও নিরবে থাকতে পছন্দ করে। সারাদিন গাছের ঘন পাতার উচু ডালে আধারে ঘুমিয়ে কাটায়। সন্ধ্যার পর খাবারের খোজে নিচে নেমে আসে। সাধারণত পোকামাকড়, ছোট ফলমুল, গাছের নরম বাকল, ঝিগা গাছের আঠালো জাতীয় খাবার এরা খেয়ে থাকে। লজ্জাবতী বানর ২০ বছর পর্যন্ত বেচে থাকে। বছরে একবার একটি মাত্র বাচ্চা প্রসব করে। ভিডিও গ্রাফার রুপম জানান, ‘‘ভয়েস অব মধুপুর’’ এ প্রচারের জন্য বানর ও হনুমানের উপর একটি ডকুমেন্টেশন নির্মাণ কাজে শুটিং করার সময় ওই বিটের বাঁশঝাড়ে এই লজ্জাবতী বানরকে ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখা যায়। দোখলা রেঞ্জ কর্মকর্তা আব্দুল আহাদ বলেন, মধুপুর বনাঞ্চলে বানর, হরিণ, হনুমান, বাঘডাস, বন বিড়াল, খরগোশ, বনমুরগিসহ নানা প্রজাতীর বন্যপ্রাণী দেখা গেলেও কখনও লজ্জাবতী বানর দেখতে পাওয়া যায়নি। মধুপুর পাহাড় জুড়ে এখন কলা চাষ হয় খাদ্য সংকটে ক্ষুধার্ত বানর কলার ট্রাকে চড়ে বসে। এতে করে কিছু বানর বিভিন্ন স্থানে চলে যায় এই ভাবে মনে হয় কিছু অনাহারী বানর সিলেট থেকে ট্রাকে চড়ে এই বনে এসে জঙ্গলে আশ্রয় নিয়েছে। সাবেক বিভাগীয় বন কর্মকর্তা শামসুল হক জানান, প্রাকৃতিক বন উজাড়, খাদ্য সংকট, আবাস্থল ধ্বংস, অবৈধ শিকার ও বিদেশী গাছের বনায়নে লজ্জাবতী বানরসহ বিভিন্ন প্রজাতীর বন্যপ্রাণী বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। মধুপুর বনাঞ্চলের সহকারী বন সংরক্ষক, জামাল হোসেন, বলেন প্রায় দেড় বছর যাবত এ লজ্জাবতী বানরটি এ বনাঞ্চলে ঘুরে বেড়াচ্ছে। অতিথি হিসেবে এটির আগমন ঘটেছে বলে মনে হয়। কখন কিভাবে এসেছে তা বিস্তারিত জানিনা। টাঙ্গাইল বিভাগীয় বন কর্মকর্তা জহিরুল হক জানান, মধুপুর বনাঞ্চলে লজ্জাবতী বানরের বসবাসের কোন ইতিহাস নেই। এটি চিরহরিৎ বনের প্রাণী হবে। শুষ্ক মৌসুমে পাতা শুণ্য হয়ে গেলে বানর হনুমানের খাদ্য সঙ্কট দেখা দেয়। এখানে লজ্জাবতী বানর টিকে থাকা খুবই কঠিন।