গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় ঘনবসতি এলাকা ও ফসলি জমিতে স্থাপন করা ইটভাটাগুলো বছরের পর বছর ধরে চললেও রহস্যজনক কারণে ব্যবস্থা নিচ্ছেনা প্রশাসন। ফলে দিন দিন এসব ইটভাটার সংখ্যা বেড়েই চলেছে। অল্প উচ্চতার চিমনির কালো ধোঁয়ায় এলাকার পরিবেশ বিপন্ন হয়ে পড়েছে। পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র ছাড়াই কৃষি জমিতে ইট প্রস্তুতকরণের (ইটভাটা) স্থাপন করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বিভিন্ন ভাটায় কয়লার পরিবর্তে জ্বালানি হিসেবে কাঠের গুঁড়ি ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রকাশ্যে এ ধরণের ঘটনা ঘটলেও কেউ তা দেখছে না। গাইবান্ধা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী জানা গেছে, গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় ৪০টি ইটভাটার মধ্যে চালু রয়েছে ৩৮টি তার মধ্যে জেলা প্রশাসকের দপ্তর থেকে লাইসেন্স প্রাপ্ত মাত্র ২টি ভাটা ও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র রয়েছে ৩টি ইটভাটা। লাইসেন্স না পাওয়া ইটভাটাগুলোর বেশীর ভাগই স্থাপন করা হয়েছে কৃষি জমিতে ও ঘনবসতি এলাকায় এমনকি স্কুল,মাদ্রাসা রয়েছে । লাইসেন্স প্রাপ্তির তিন বছর পর নবায়নের নিয়ম থাকলেও নবায়ন করেনি কোন ইটভাটা মালিক। এসব ইটভাটা বছরের পর বছর ধরে চলছে। আর পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের লাইসেন্স বিহীন চলছে ৩৬টি ইটভাটা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ইটভাটা মালিক অভিযোগ করে বলেন, কালো ধোঁয়ায় পরিবেশ দূষিত হয় বলে বেশি উচ্চতার ইটের চিমনি বাধ্যতামূলক করেছে সরকার। এই ইটের চিমনী তৈরীতে খরচ বেশী হওয়ায় সরকারের এ নিয়মনীতি উপেক্ষা করে গোবিন্দগঞ্জের অনেক ইটভাটার মালিক এ আদেশ মানছেন না। এখনও অল্প উচ্চতার ইটের চিমনি ব্যবহার হচ্ছে অধিকাংশ ভাটায়। এমনকি প্রশাসনের সামনে এভাবে ইটভাটা স্থাপন করা হলেও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। এজন্য তিনি অনুসন্ধান কমিটির দায়িত্ব অবহেলার বিষয়টি তুলে ধরেন। সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী, পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র হাতে পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ জেলা প্রশাসকের কাছে ইট প্রস্তুতকরনের (ইটভাটা স্থাপনের) লাইসেন্স চেয়ে আবেদন করতে হয়। সেই আবেদন অনুসন্ধান কমিটি অনুসন্ধান পুর্বক জেলা প্রশাসকের কাছে লাইসেন্স প্রদানের বিষয়ে সুপারিশ করবে। প্রয়োজনে জেলা প্রশাসক বিষয়টি নিজে যাচাই করবেন। তার পর নির্ধারিত ফি নিয়ে লাইসেন্স প্রদান করবেন। আইনে পরিষ্কার করে বলা আছে, জিগঝাক ভাটায় ইট পোড়ানোর কাজ করতে হবে। সেখানে আইনকে উপেক্ষা করে ফিক্সড চিমনিতে ইট পোড়ানো হচ্ছে। সর্বনিম্ন ৪৫ ফুট থেকে সর্বোচ্চ ১২০ ফুট উচ্চতা সম্পন্ন জিকঝাক চিমনি স্থাপন করতে খরচ হয় ২০ থেকে ২৫ লক্ষ টাকা।কিন্তু ফিক্সড চিমনিতে ৪ থেকে ৫ লক্ষ টাকা খরচ হওয়ায় আইনের তোয়াক্কা না করে ভাটা মালিকরা ফিক্সড চিমনিতে ইট পোড়াচ্ছে। এক্ষেত্রে পরিত্যক্ত অনাবাদি জমি, নিচু জলাশয়ের ধারে, নদীর পাশে এবং কমপক্ষে চারদিকে ১ কি.মি. জনশূন্য এলাকায় ইটভাটা স্থাপনের অনুমোদন দেয়ার কথা। কিন্তু গোবিন্দগঞ্জে যেসব ইটভাটার লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে সে গুলিও স্থাপন করা হয়েছে ঘনবসতি এলাকায় ও কৃষি জমিতে। এদিকে ইটভাটা মালিক পরিবেশ ছাড়পত্র ও জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে লাইসেন্স না নিয়েই বছরের পর বছর ইটভাটা চালিয়ে যাচ্ছে। ফলে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক এক ইটভাটা মালিক আক্ষেপ করে বলেন, প্রতিবছর ভাটায় আগুন দেয়ার আগে রাজস্ব ও আয়কর বাবদ সাড়ে ৩ লাখ টাকা দিতে হয়। এছাড়াও সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তাদের খুশি রাখতে হয়। কিন্তু বছরের পর বছর আমাদের অবৈধভাবে ভাটা চালাতে হয়। এ ব্যাপারে গাইবান্ধার পরিবেশ দেখভালের দায়িত্বে থাকা পরিবেশ অধিদফতরের কর্মকর্তা মিহিল্লার ঘোষ এর সাথে মোবাইল ফোনে কথা বললে তিনি তর্থ্য দিতে ইতোস্তা বোদ করেন এবং মোবাইল ফোনে টেকে দেন।