মাগুরার মহম্মদপুরে পায়ে হেটে বাজারে বাজারে পত্রিকা বেঁচে সততার সাথে বেঁচে থাকার প্রাণপন লড়াই করে চলেছে প্রতিবন্ধি মো: ইলিয়াস হোসেন। সে ভিক্ষা না করে পত্রিকা বিক্রি করে হাল ধরেছে সংসারের। ইলিয়াসের এই সামান্য আয় দিয়ে পাঁচ সদস্য পরিবারের চাহিদা মেটাতে হিমশিম খেতে হয় তার। দু-বেলা দু-মুটো খেয়ে বা না খেয়ে কাটে তার দিন। উপজেলার বিনোদপুর ইউনিয়নের খালিয়া গ্রামের মৃত সালাম মোল্যার ছেলে ইলিয়াস। ইলিয়াসের স্ত্রী ইয়াসমিন খাতুনও প্রতিবন্ধি। ছোটকালে আগুনে পুড়ে দুই পায়ের পাতাসহ নিচের অংশ নেই। তাই পত্রিকা বিক্রির করে এসে স্ত্রীকে সংসারের কাজে সাহায্য করতে তার। স্ত্রী, বৃদ্ধ মা এবং ইয়াসির (৬) ও মারিয়াম নামের দুই বছরের মেয়েসহ পাঁচ সদস্য নিয়ে ইলিয়াসের সংসার। তার এই সামান্য আয় দিয়ে কোনো রকম পূরণ করে থাকে অভাবি সংসারের চাহিদা। ইলিয়াস জানায়, কোনো জমিজমা নাই আমার। শুধু বাড়ীতে চার শতক জমি পেয়েছি। পরিবার পরিজন নিয়ে থাকার জন্য নিজের জমিতে একটি ঘরও করতে পারিনি। ছোট ভাইয়ের ঘরে বৌ-বাচ্চা নিয়ে থাকি। চেয়ারম্যান ও আমারদের ওয়ার্ডে মেম্বরের মধ্যমে প্রতিবন্ধি ভাতা পেয়েছি। এই ভাতার টাকা এবং পত্রিকা বেঁচে কোনো রকম চলে সংসার। টাকা জমাতে পারিনা ঘর দেবো কি করে। পত্রিকার হকারি কেনো করা হয় জানতে চাইলে ইলিয়াস বলে, আমার দুই হাত ও দুই পা প্রতিবন্ধি। আমি কোনো কাজ করতে পারি না। আমারতো ভিক্ষা করতে হতো। কিন্তু মানুষের কাছে হাত পেতে কিছু নিতে ভালো লাগে না তাই পত্রিকা বিক্রি করি। তাছাড়া এই কাজে ভালো ভালো মানুষের সাথে কথা বলা বা মিশা যায়। এটা নিজের কাছেও ভালো লাগে। সরেজমিনে যেয়ে আরো জানা যায়, দুই পা ও দুই হাত জন্মগত ভাবেই প্রতিবন্ধি ইলিয়াসের। তাই সে সাইকেল চালাতে পারে না। পায়ে হেটে আলেকদিয়া বাজার, বিনোদপুর বাজার ও খালিয়া বাজারসহ বিভিন্ন জায়গায় ৬১টি পত্রিকা দেয়। এতে তার প্রতিদিন আয় হয় ১শ টাকা। কিন্তু এক বাজার থেকে অন্য বাজরে যেতে হয় ভ্যানে। ভ্যান খরচ বাদে ইলিয়াসের প্রতিদিন থাকে ৫০ থেকে ৬০ চাকা। এই টাকায় তার সংসার চালাতে খুব কষ্ট হয়। কষ্ট হলেও ইলিয়াসের ইচ্ছা সততার সাথে আয় করে ছেলে-মেয়ে মানুষ করার। ওয়ার্ড মেম্বর মেজবাহউল ইসলাম বলেন, প্রতিবন্ধি ইলিয়াস আসলেই খুব অসহায়। পরিবার নিয়ে কষ্টে খাটে তার দিন। তাই একটু সহায়তার উদ্দেশ্যে চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলে তার প্রতিবন্ধি ভাতা এবং ১০ টাকা ধরে চালে কার্ড করে দেওয়া হয়েছে। বিনোদপুর ইউপি’র চেয়ারম্যান শিকদার মোঃ মিজানুর রহামান জানান, ইলিয়াসের অসহায়ের কথা শুনে তাকে ও তার স্ত্রীকে প্রতিবন্ধি ভাতা এবং দশ টাকা ধরে চালের কার্ড করে দেওয়া হয়েছে। ইলিয়াসের মাকেও বিধবা ভাতার কার্ড করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও ইইলয়াস যে কোনো সময় যে কোনো সমস্যায় আমার কাছে আসলে আমি ব্যক্তিগত ভাবে তাকে সহযোগিতা করে থাকি। আমি তার মঙ্গল কামনা করি।