নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল শীতলক্ষ্যা নদীর পশ্চিম পাড়ে মালামাল লোড-আনলোড শুল্ক ও লেবার হ্যান্ডলিং চার্জ আদায় কেন্দ্রে (ঘাট) নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দর (বিআইডব্লিউটিএ) কর্তৃপক্ষের অনিয়মের বিরুদ্ধে রুল জারি করেছে হাইকোর্ট। সরকারকে রাজস্ব বঞ্চিত করার কৌশল হিসেবে নিয়ম বহির্ভুত কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে ১৪ জনকে বিবাদী করে মেসার্স মাহমুদা ট্রেডার্স প্রতিষ্ঠান মালিক মো: ইউসুফ আলীর করা রিট শুনানী শেষে গত বুধবার (৪ নভেম্বর) বিচারপতি মো: মজিবুর রহমান ও মহি উদ্দিন এর বেঞ্চ রিটকারীকে ঘাটটি পুন:বহাল এবং বিবাধী পক্ষকে দুই সপ্তাহের মধ্যে কারণ দর্শানোর আদেশ দেন। বৃহস্পতিবার (৫ নভেম্বর) দুপুরে ওই ঘাটের মূল ফটকে আদেশের সাইনবোর্ড লাগানো হয়। রিট শুনানী করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আফসানা রশিদ। বিবাদীরা হলেন, নৌ-পরিবহন মন্ত্রনালয়ের সেক্রেটারি, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহনের চেয়ারম্যান, পরিচালক, অতিরিক্ত পরিচালক, নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দরের যুগ্ন পরিচালক শেখ মাসুদ কামাল, শুল্ক আদায়কারী কর্মকর্তা মো: রফিকুল ইসলাম, এস এম মাসুদ, শুল্ক প্রহরী মো: রবিউল আউয়াল, আক্তার হোসেন, ডেপুটি কমিশনার নারায়ণগঞ্জ, পুলিশ সুপার নারায়ণগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি। রিটকারী ইউসুফ আলী জানায়, শীতলক্ষ্যা নদীর পশ্চিম পাড়ে কাঁচপুর সেতুর উত্তরে সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল এলাকায় শুল্ক ও লেবার হ্যান্ডলিং চার্জ আদায়ের এক নম্বর জেটি (ঘাট) যথাযথ নিয়ম মোতাবেক শর্তসাপেক্ষে বিগত ২০১৫ সালে ১ বছরের জন্য ৭ লাখ ২৬ হাজার ৮৪০ টাকায় মাহমুদা ট্রেডার্সকে ইজারা দেয় নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দর কর্তৃপক্ষ। ইজারা প্রাপ্তির ৫ মাস পর কাঁচপুর সেতুর কাজ শুরু হওয়ায় বিনা নোটিশে কর্তৃপক্ষ ইজারা বাতিল করে। এতে আমি আর্থিক ভাবে চরম ক্ষতিগ্রস্থ হই। তখন কর্তৃপক্ষ আশ্বস্থ করেন সেতু নির্মাণ শেষ হলে ঘাটটি আবার মাহমুদা ট্রেডার্সকে ইজারা দেওয়া হবে। তাই আমি কোন অপত্তি করিনি। আমার ইজারা বাতিলের পর সেতু নির্মাণ সমাগ্রী লোড-আনলোড করার জন্য বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে জাইকা নিজ অর্থায়নে নদীর তীরে এক নম্বর আরসিসি জেটি নির্মাণ করে। সেতুর কাজ শেষে জাইকা ওই এক নম্বর জেটিসহ সমস্থ ফোরশোর (নদীর তীর) নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করে দেয়। তখন সাবেক ইজারাদার হিসেবে নতুন করে ইজারা নেওয়ার জন্য আমি আবেদন করি। কিন্তু কর্তৃপক্ষ আমার অতীতের ক্ষতির কথা বিবেচনা না করে নতুন ঘাট হিসেবে ইজারা প্রদানের জন্য গত ২৫ আগস্ট বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ ঢাকা নদী বন্দর বিভাগ পরিচালক বরাবর একটি চিঠি প্রেরণ করেন নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দরের যুগ্ন-পরিচালক শেখ মাসুদ কামাল। পত্রে প্রস্তাব করা হয় রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যে জাইকার কাছ থেকে বুঝে পাওয়া এক নম্বর জেটি বা ঘাট বা পয়েন্ট হিসেবে ২০২০-২১ অর্থ বছরে ২৭-০৮-২০২০ ইং তারিখ হতে ইজারা প্রদান করতে। যার ইজারা মূল্য ধরা হয় ১ কোটি টাকা। পরদিন ২৬ আগস্ট কর্তপক্ষ নিজেরাই শুল্ক আদায় করবে বলে চিঠি ইস্যু করেন। পরবর্তীতে একই মাসের ৩১ তারিখ শেখ মাসুদ কামাল স্বাক্ষরিত এক দপ্তর আদেশ দেয় এক সেপ্টেম্বর থেকে শিমরাইল এলাকার এক নম্বর ঘাটে যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক সরাসরি শুল্ক ও লেবার হ্যান্ডলিং চার্জ আদায় করার জন্য পরবর্তী নির্দেষ না দেওয়া পর্যন্ত মো: রফিকুল ইসলাম ও এস এম মাসুদকে শুল্ক আদায়কারি, মো: রবিউল আউয়াল ও মো: আক্তার হোসেনকে শুল্ক প্রহরী হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হল। এর কিছুদিন পরই মেসার্স বিসমিল্লাহ ট্রেডার্স এর মালিক বাকেরকে লেবার ঠিকাদার হিসেবে আনুষ্ঠানিক দায়িত্ব দিয়ে মালামাল লোড-আনলোড ও রাজস্ব আদায় শুরু করে। যা সম্পূর্ণ করা হয়েছে নিয়মবহির্ভুত ভাবে। ইউসুফ আলীর অভিযোগ, সরকারকে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিতে কৌশল হিসেবে নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দর কর্তৃপক্ষ এই শুল্ক আদায় পয়েন্টটি নিয়ে অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতা করেছে। অথচ একই এলাকায় শিমরাইলে দুই ও তিন নম্বর জেটি ১ বছরের জন্য ৬৫ লাখ টাকা, আটি ওয়াপদা এলাকার কাঁচপুর ল্যান্ডিং স্টেশন ১ কোটি ৪৫ লাখ টাকায় ইজারা দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। আর এক নম্বর জেটি এক কোটি টাকা ইজারা মূল্য ধরেও ইজারা না দেওয়ায় সরকারকে মোটা অংকের রাজস্ব বঞ্চিত করা হয়েছে। কারণ দরপত্র আহবান করে ইজারা দিলে প্রতি বছর সরকার কোটি কোটি টাকা রাজস্ব পেত। কর্তৃপক্ষ নিজেরা শুল্ক আদায় করে সঠিক ভাবে সরকারি রাজস্ব খাতে জমা দিবেনা। তাছাড়া বিআইডব্লিউটিএর অনিয়ম স্বেচ্ছাচারিতায় ভবিষ্যতে যেন আর কোন ইজারাদার ক্ষতিগ্রস্থ না হয় এজন্যই রিট করি। এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দরের যুগ্ন-পরিচালক শেখ মাসুদ কামালের সঙ্গে কথা হলে সরকারকে রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার কৌশল সঠিক না দাবি করে তিনি জানান, উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত মতে নিজেরাই শুল্ক আদায় করার উদ্যোগ নিয়ে নিজস্ব লোকদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। গত দুই মাসে কত টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে জানতে চাইলে তিনি এড়িয়ে যান। হাইকোর্টের রুল জারি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এমন কোন আদেশ দাপ্তরিক ভাবে পাইনি। যদি রুল জারি হয়ে থাকে তা মোকাবেলা করবো।