দীর্ঘ মানসিক চাপ সয়েছিলেন সাকিব।জুয়াড়ির কাছে প্রস্তাব পাওয়ার বিষয়টি আইসিসির দুর্নীতি দমন ইউনিটের (এসিইউ) কাছে গোপন করার অপরাধে এক বছর নিষিদ্ধ থাকতে হয়েছে সাকিব আল হাসানকে। ২৯ অক্টোবর থেকে সাকিবের সে নিষেধাজ্ঞা কেটেও গেছে। বাঁহাতি অলরাউন্ডার আছেন মাঠে ফেরার অপেক্ষায়। ফেরার আগে কাল নিজের ইউটিউব চ্যানেলে সংবাদমাধ্যম ও ভক্তদের অনেক প্রশ্নের উত্তর দিলেন সাকিব।কদিন আগে সাকিব নিজেই সাংবাদিক ও ভক্তদের কাছে প্রশ্ন আহ্বান করেছিলেন। প্রায় ৩৫ মিনিট ধরে তিনি সে সব প্রশ্নেরই উত্তর দিলেন কাল। ভারতীয় জুয়াড়ি দীপক আগারওয়াল কাছে থেকে একাধিকবার প্রস্তাব পেয়ে সাকিব বিষয়টি আইসিসির দুর্নীতি দমন ইউনিটকে জানাননি-এটি নিয়ে তারা তদন্ত শুরু করে ২০১৮ সালের শেষ দিকে। আইসিসির তদন্ত চলছিল লম্বা সময় ধরে। ২০১৯ সালের শুরুতে সাকিব তাদের কাছে নিজের দোষ স্বীকারও করে নেন। তার মানে বাংলাদেশ অলরাউন্ডার ২০১৯ বিশ্বকাপ খেলতে গিয়েছিলেন অনেক দুশ্চিন্তা নিয়ে-এই বুঝি আইসিসির তদন্তের ফল এল!
ভুল করার শাস্তি কী হয় না হয়-এই টেনশন নিয়েই সাকিব দুর্দান্ত খেললেন ২০১৯ বিশ্বকাপে। ৮ ম্যাচে ৮৬.৫৭ গড়ে ২ সেঞ্চুরি ও ফিফটিতে করলেন ৬০৬ রান, বোলিংয়ে পেলেন ১১ উইকেট-টুর্নামেন্ট সেরার পুরস্কারটা তাঁর না হাতে উঠলেও তিনি যে গত বিশ্বকাপের সেরা অলরাউন্ডার, অস্বীকার করবে না কেউ। কিন্তু মনের ভেতর সংশয়, ভীষণ মানসিক চাপ নিয়ে এত ভালো খেলা সম্ভব হয়েছিল কীভাবে? কাল এ প্রশ্নের বিশদ উত্তরই দিলেন সাকিব, ‘আমার তো মনে হয় খুবই চ্যালেঞ্জিং। যেটা বলছিলেন, হ্যাঁ, অনেক দিন ধরে এটার তদন্ত চলছিল। বা নিয়মিত আমার সঙ্গে ওরা (এসিইউ) যোগাযোগ করছিল। স্বাভাবিকভাবেই আমার জন্য এটা অনেক অস্বস্তিকর পরিস্থিতি ছিল। এটা একজন খেলোয়াড়ের জন্য কোনো ভালো অনুভূতি না। ভালো কোনো কথা নয় যেটা নিয়ে আপনি ঘুমাতে যেতে পারেন। সেদিক দিয়ে অবশ্যই কঠিন একটা সময় ছিল। তারপরও আমি জানতাম…এও বুঝতে পারছিলাম হয়তো কিছু একটা হতে পারে। আবার কখনো মনে হচ্ছিল নাও হতে পারে। আমি নিশ্চিত ছিলাম না, কী ফল অপেক্ষা করছে। শেষ পর্যন্ত যখন জানলাম, তত দিনে আপনারাও জেনে গেছেন। ওই যে সময়টা যখন তদন্ত চলছিল স্বাভাবিকভাবেই আমার জন্য সহজ ছিল না ব্যাপারটা।’
অনেকে মনে করেন, যেহেতু আইসিসি তদন্ত করছে, সাকিব তাই আইসিসির টুর্নামেন্টে দুর্দান্ত কিছু করার লক্ষ্য ঠিক করেন। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার অবশ্য উড়িয়েই দিচ্ছেন বিষয়টি। তিনি মনে করেন এটির সঙ্গে বিশ্বকাপের পারফরম্যান্সের কোনো সম্পর্ক নেই, ‘ওই ঘটনা আসলে বিশ্বকাপের পারফরম্যান্সের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। তদন্ত শুরু হয়েছিল নভেম্বর-ডিসেম্বরের (২০১৮) দিকে। বিশ্বকাপের আগেই নিষিদ্ধ হতে পারতাম। সেটা হয়নি। তবে ওটা আমাদের মাথায় কাজ করেনি যে এটার কারণে ভালো করতে হবে। তবে হ্যাঁ বিশ্বকাপে আমার ভালো করার খুবই ইচ্ছে ছিল। এর আগে যতগুলো বিশ্বকাপ খেলেছি, বলার মতো ভালো করিনি। নিজের যে সুনাম, মনে হয়নি যে বিশ্বমঞ্চে সেটি তুলে ধরতে পেরেছিলাম। আমার কাছে মনে হচ্ছিল এটাই সেরা সময়, বয়সও সমর্থন করছিল। অভিজ্ঞতার দিক দিয়ে ক্রিকেটে একটা সেরা সময় থাকে, সে দিক দিয়ে আমার জন্য একেবারে যথার্থ একটা সময় ছিল এটা। তখন চেষ্টা করেছি সেটা কাজে লাগাতে।’
একজন খেলোয়াড় যখন ফিক্সিং বা জুয়াড়িদের কাছে অনৈতিক প্রস্তাব পাওয়া কিংবা সেটি দুর্নীতি দমন ইউনিটকে না জানানোর অপরাধে নিষিদ্ধ হন, ফিরে আসার পরও তাঁর দিকে অনেক সতীর্থ অবিশ্বাসের চোখে তাকায়। সাকিব অবশ্য মনে করেন না, সতীর্থরা তাঁকে অবিশ্বাস করবেন, ‘কার মনে কী আছে বলা কঠিন। (তাদের) সন্দেহ হতেই পারে। অবিশ্বাস তৈরিই হতে পারে, সেটা আমি কখনোই অস্বীকার করি না। তবে এর মধ্যে সবার সঙ্গে আমার যোগাযোগ ছিল। ওভাবে তাই অনুভব করি না। আমি মনে করি এখানে কোনো সমস্যা হবে না। তারা আমাকে আগে যেভাবে বিশ্বাস করত, এখনো সেভাবেই করবে। যদি ওভাবে বলেন করতেই পারে, এটা আসলে অস্বাভাবিক কিছু না। মনের কোনায় এমন সন্দেহ জাগতেই পারে এবং সেটা নিয়ে আসলে আফসোসের কিছু নেই। ঘটনটা এমনই। তবে আমার ধারণা, আমার প্রতি যে বিশ্বাসটা ছিল এখনো সেটাই থাকবে।’
এই ঘটনা যে তাঁর জীবনবোধ পাল্টে দিয়েছে সেটিও খুলে বলেছেন সাকিব, ‘করোনা আর আমার নিষেধজ্ঞা জীবনকে ভিন্নভাবে ভাবতে শিখিয়েছে। অনেক বেশি আইডিয়া তৈরি করতে শিখিয়েছে। এমন কঠিন সময় না পড়লে কেউ এত শিখতে পারে না বলেই বিশ্বাস। এমন জায়গা থেকে যখন কেউ ফিরে আসে অনেক পরিপক্কতার সঙ্গে ফিরে আসে। আমি এখন অনেক ভিন্নভাবে চিন্তা করি যেটা এক বছর আগে হয়তো করতাম না। সামনে এটা আমাকে অনেক সহায়তা করবে বলে মনে করি।’