শেষ পর্যন্ত গুঞ্জনই সত্যি হলো। ৭ বছর পর ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ঘরোয়া আসর আই লিগে ওঠা কলকাতা মোহামেডানে যোগ দিচ্ছেন জামাল ভূঁইয়া। এ জন্য চুক্তিও সেরে ফেলেছেন বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের অধিনায়ক।জামালের সঙ্গে কলকাতা মোহামেডানের এ চুক্তি ত্রিপক্ষীয়। অন্য পক্ষটি সাইফ স্পোর্টিং ক্লাব। চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের অধিনায়ক ৫ মাস খেলবেন কলকাতার এতিহ্যবাহী দলটিতে। ২১ এপ্রিলে ঢাকার সাইফ স্পোর্টিংয়ে আবার যোগ দেবেন জামাল। আজ বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে জাতীয় দলের অনুশীলনের পর তিনি নিজেই জানালেন এই তথ্য।
নব্বই দশকের পর এই প্রথম বাংলাদেশের কোনো ফুটবলার ভিন দেশের লিগে খেলতে যাচ্ছেন। যেন একটা বন্ধ দুয়ারই খুলে ফেলছেন জামাল। কে জানে, জামালের মতো হয়তো আরও অনেকেই বিদেশি লিগে খেলার সুযোগ পেতে পারেন। আগামী ১৩ ও ১৭ নভেম্বর ঢাকায় নেপালের সঙ্গে জাতীয় দলের দুটি ফিফা প্রীতি ম্যাচের পর তিনি কলকাতার যাবেন বলে আজ জানিয়েছেন।কিন্ত সাইফ স্পোর্টি! ছেড়ে কেন ৫ মাসের জন্য ভিন্ন একটা চ্যালেঞ্জ নিচ্ছেন? এই প্রশ্নে ডেনমার্কে জন্ম নেওয়া এই ফুটবলার বলেন, কলকাতা মোহামেডানের সাধারণ সম্পাদক ওয়াসিস আকরাম ভাইয়ের কাছে আমার প্রথম প্রশ্ন ছিল, কলকাতা মোহামেডান কী চ্যাম্পিয়ন দল গড়বে? নাকি মাঝারি বা নিচু সারির? তিনি বলেন, ” আমরা ভালো খেলোয়াড় নিয়ে দল গড়ব। আই লিগে চ্যাম্পিয়ন হয়ে আইএসএলে খেলতে চাই”। তখন আমি বলি, ঠিক আছে, আমি খেলব। তবে মাঝারি বা নিচু সারির দল হলে খেলব না।”
কলকাতা মোহামেডানের ঐতিহ্যও জামালকে টেনেছে বলে জানালেন, ‘কলকাতা মোহামেডান একটি ঐতিহ্যবাহী দল। তাদের অনেক সমর্থক আছে। আমি ক্লাবটির কাছে অনেক প্রত্যাশা করি। সর্বোচ্চ সুযোগ সুবিধা, ভালো মাঠ চাই। তারা আমাকে বলেছে, সর্বোচ্চ সমর্থনই দেবে দলকে। এসব ভেবে চিন্তেই আমি তাদের হ্যাঁ বলেছি।’সপ্তাহ দুয়েক আগে বিষয়টা প্রথম সংবাদমাধ্যমে আসার পর কেন গুজব বলেছিলেন জামাল। এখন কীভাবে সত্যি হলো? এই প্রশ্নে তাঁর কথা, ‘আগে গুজবই ছিল। বিষয়টা চূড়ান্ত হয়েছে গত কয়েক দিনে।’ তাঁর কথা, ‘ সাইফের সঙ্গে আমার চুক্তি শেষ হয়েছে। কিন্তু সাইফ আমাকে ছাড়তে চায়নি। অন্যদিকে আমি কলকাতার প্রস্তাবটা ভালো মনে করেছি। তাই সম্মতি দিয়েছি। কলকাতা মোহামেডানের সঙ্গে আমার যা চুক্তি তাতে আমি ওদের হয়ে ৫ মাস খেলব। তারপর এপ্রিলে আমি আবার সাইফে যোগ দেব। এটা পারস্পরিক বোঝপড়ার ফল।
নেপালের মতো দেশের একজন ফুটবলার ইন্দোনেশিয়ার লিগে জাকার্তার একটি ক্লাবে খেলে। তাদের গোলকিপার খেলে আই লিগের দল মিনার্ভা পাঞ্জাবে। কলকাতা মোহামেডানে যে খেলোয়াড়টির জায়গায় এশিয়ান কোটায় জামালকে নিয়েছে , সেই খেলোয়াড়টি নেপালেরই। ফুটবল বোদ্ধা মনে করেন, উন্নতির জন্য বাইরের লিগে খেলার বিকল্প নেই। জামালও সেটিই মনে করেন। এক প্রশ্নে বলেন, আমি আই লিগে খেলবে। ভালোভাবে যদি নিজের কাজটা করতে পারি তাহলে আমার পর বাংলাদেশের আরও খেলোয়াড় সেখানে যেতে পারে। তরুণদের সামনে দরজা খুলতে পারে। এতে দেশের ফুটবল উপকৃত হবে। আমি বাংলাদেশের ফুটবলের দূত হতে চাই।’
শুধু তাই নয় জামাল হতে পারেন আদর্শ। তবে সেই কঠিন পরিশ্রমের বিকর্ল্প দেখছেন না। তিনি বলেন, ‘আমি পরিশ্রম করব। ভালো খেলব আশা করি।’ গত অক্টোবরে বিশ্বকাপ এ এশিয়ান কাপের বাছাইয়ে কলকাতার মাটিতে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ১-১ ম্যাচে আলো কাড়েন জামাল। ওই ম্যাচের পর তাঁকে নিয়ে আগ্রহ দেখায় অনেকেই। তিনি বলেন, ‘কলকাতা মোহামেডানই একমাত্র ক্লাব নয়, যারা আমাকে প্রস্তাব দিয়েছে।’ঢাকায় সাইফ স্পোর্টিংয়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার চাপ নেই। দলটি বারবরই বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে চতুর্থ হয়ে এসেছে। তবে কলকাতা মোহামেডানে ভিন্ন চ্যালেঞ্জ। জামাল বলেন, ‘সাইফ ও কলকাতা মোহামেডান দুইটি রকম দল। সাইফ পুরোপুরি তারুণ্য নির্ভর। গত মৌসুমে খেলোয়াড়দের গড় বয়স ছিল ২১। অন্যদিকে কলকাতা মোহামেডান নিচ্ছে সেরা সব খেলোয়াড়। তাদের লক্ষ্য ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ লিগ জয় করা। কাজেই দুই জায়গায় চ্যালেঞ্জটা দুই রকম। কলকাতায় এখন আমাদের আই লিগে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার চাপ থাকবে। সেই চাপ আমরা জয় করে চ্যাম্পিয়ন হতে চাইব।’