বাংলাদেশ অর্থনৈতিক কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান ও সচিব পবন চৌধুরী বলেছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরের সাথে মিরসরাইবাসীর জন্য আবেগের জায়গা। তারা নিজের ঘর বাড়ি, পৈত্রিক ভিটা-মাটি সরকারের ডাকে সারা দিয়ে দেশের উন্নয়নে অংশীদার হয়েছেন। এটি মিরসরাইবাসীর ত্যাগের ফসল। এ শিল্পনগর পুরোপুরি চালু হলে দেশের ১৫ লক্ষ লোকের কর্মসং¯’ান হবে। এত যে আয় হবে সে আয় দিয়েই বাংলাদেশ সমৃদ্ধ হবে।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশকে সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে নিতে তারুণ্যের শক্তিকে কাজে লাগিয়েই আকাঙ্খিতঅর্থনৈতিক মুক্তির পথে হাঁটছেন। সেই লক্ষ্যেই সরকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরসহ ১০০টি নতুন অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ার পরিকল্পনা নিয়েছে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে দেশে অন্ততঃ এক কোটি নতুন কর্মসং¯’ান হবে বলে আশা করা হ”েছ। এতে দেশের অর্থনীতির চেহারাই পাল্টে যাবে এবং সমৃদ্ধির পথে অনেকটা এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ। শনিবার মিরসরাই উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন আয়োজিত মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর) প্রকল্পের আওতায় ভূমি অধিগ্রহনে ক্ষতিগ্রস্ত১৩২ জনের মাঝেতৃতীয় দফায় ২২ কোটি ৫১ লক্ষ টাকার চেক বিতরণ অনুষ্টানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।তিনি বলেন, এ প্রকল্পে জমি দিয়ে যারা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত তাদের জন্য ৫ শতক করে জায়গার উপর বিনামূল্যে ৪০০টি ঘর নির্মাণ করে দিতেপুরাতন বেড়িঁবাধের সাথে জায়গা নিধরিণ করা হয়েছে। সেখানে হবে একটি আবাসন পল্লী যেখানে থাকবে স্কুল-কলেজ, রাস্তা-ঘাট, মসজিদ, কমিউনিটি ক্লিনিক ¯’াপনসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা।অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এল.এ) মোঃ আবু হাসান সিদ্দিকের সভাপতিত্বে ও ভূমি অধিগ্রহন কর্মকর্তা কায়সার খসরুর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত চেক বিতরণ অনুষ্টানে বিশেষ অতিথি ছিলেন মিরসরাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ জসিম উদ্দিন। বক্তব্য রাখেন মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মিনহাজুর রহমান ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুবল চাকমা।বেজা’র নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী আরো বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর উপমহাদেশের অন্যতম বড় অর্থনৈতিক অঞ্চল ‘মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল’ নির্মাণ কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। চট্টগ্রাম বন্দরের অনতিদূরে সমুদ্র উপকূলে গড়ে ওঠা এ মনোরম অর্থনৈতিক অঞ্চলের নামকরণ করা হয়েছে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর। মিরসরাই থেকে ফেনীর সোনাগাজী পর্যন্ত বিস্তৃত এ অঞ্চল গড়ে উঠছে ৩০ হাজার একর ভূমির ওপর, যেখানে ২৫টি আলাদা জোন নির্মাণের পরিকল্পনার বাস্তবায়ন চলছে। অর্থনৈতিক এ মহাযজ্ঞে ইতোমধ্যে ১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ নিশ্চিত হয়েছে। ধারণা করা হ”েছ প্রকল্পটির মাধ্যমে ২০৩০ সালের মধ্যে ১৫ লাখ থেকে ২০ লাখ মানুষের কর্মসং¯’ান হবে। পবন চৌধুরী বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে এক হাজার ৫৪ একর জমিতে গড়ে ওঠবে ‘ইন্ডিয়ান ইকোনমিক জোন’। পাশাপাশি একটি আইটি পার্ক করতে ৭২০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে ভারত। এছাড়া জাপান, সিঙ্গাপুর, সৌদি আরব, ভারত, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়ার বিভিন্ন কোম্পানিও এখানে বিনিয়োগ করবে। এ শিল্পনগরে বিনিয়োগের জন্য ব্যাপক আগ্রহ ও আবেদন লক্ষ করা গেছে। এমনকি করোনাকালেও দেড় বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ প্রস্তব পাওয়া গেছে, যার মধ্যে এক বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ নিশ্চিত করা হয়েছে। মেগাপ্রকল্পে আর যা আছে একটি অগ্রাধিকারমূলক মেগাপ্রকল্প হিসেবে বিবেচনা করে সরকার ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর’ প্রতিষ্ঠায় বিশেষ গুরুত্ব দি”েছ। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এল.এ) মোঃ আবু হাসান সিদ্দিক জানান, “মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল ¯’াপন” শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় (এল.এ মামলা নং-১৩/২০১৭-১৮) মূলে অধিগ্রহনকৃত ক্ষতিগ্র¯’ ২১জন ভূমির মালিকের হাতে প্রথম পর্যায়ে ৫ কোটি ১৪ লাখ টাকার, ২য় পর্যায়ে ৫২ জন ভূমির মালিকের হাতে ৬ কোটি ২২ লাখ টাকার ও ৩য় পর্যায়ে ১৩২ জনভূমি মালিকের হাতে ২২ কোটি ৫১ লাখ টাকার ক্ষতিপূরণের এল.এ চেক উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে সরাসরি বিতরণ করা হয়।তিনি আরো জানান, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেনের নির্দেশনা মোতাবেক “মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল ¯’াপন” প্রকল্পের জন্য অধিগ্রহনকৃত ভূমির ক্ষতিগ্রস্ত কিছু মালিকের দোরগোড়ায় গিয়ে ক্ষতি-পূরণের চেক বিতরণের উদ্যোগ গ্রহন করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার দালালের খপ্পরে পড়ে যাতে কোন ধরণের হয়রানি বা ভোগান্তির শিকার না হয় সে লক্ষ্যে দফায় দফায় উপজেলা মিলনায়তনে ক্যাম্প করা হ”েছ। ফলে অধিগ্রহনে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি সরাসরি আমাদের কাছে এসে তার সমস্যার কথা বলতে পারছে।স্বল্পসময়ে ক্ষতিপূরণ প্রদানের নিমিত্তে এল.এ মামলা সমুহের কার্যক্রম সুষ্ঠু ও দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহন (এল.এ) শাখার উদ্যোগে মৌজা ভিত্তিক কার্যক্রম চলমান রয়েছে। হয়রানি ও ভোগান্তি ছাড়াই ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিকদের হাতে চেক বিলি করতে ভূমি অধিগ্রহণ শাখার ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তাগণ, সার্ভেয়ার, কানুনগো, অতিরিক্ত ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা ও অফিস সহকারীরা অধিগ্রহণকৃত জমিতে সরেজমিন তদন্ত ও শুনানি গ্রহণ সাপেক্ষে উপজেলা নির্বাহী অফিসার, ¯’ানীয় জনপ্রতিনিধি, গণ্যমান্য ব্যক্তি ও সাংবাদিকদের উপ¯ি’তিতে চেক বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।ক্ষতিপূরণের চেক গ্রহনকারী দক্ষিণ মঘাদিয়া এলাকার বাসিন্দা ও ক্ষতিগ্রস্ত ভূমির মালিক জামশেদ, হোসনে আরা বেগম ও মনোয়ারা বেগম জানান, এলাকায় বসে এল.এ চেক সরাসরি পাওয়ায় জনগণের মধ্যে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। দালালদের খপ্পর হেকে হয়রানিমুক্ত সেবা পেয়ে তারা খুশী। আগে দালালদের কারণে তাদের অনেক ভোগান্তি হতো। তাছাড়া কোন বিষয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে তা ঘটনা¯’লে সবার উপ¯ি’তিতে নিষ্পত্তি সহজতর হয়েছে।২০১৬ সালে চট্টগ্রামের মিরসরাই, সীতাকুন্ড ও ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার ৩০ হাজার একর জমি নিয়ে পথচলা শুরু হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর প্রতিষ্ঠার। এর মধ্যে ১৬ হাজার একর জমি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হয়েছে। বাকি অংশ ভূমি উন্নয়নের কাজ শেষে দেওয়া হবে বলে জানান বেজার ম্যানেজার মো. শরীফুল বাশার। এ প্রকল্পের কাজ ৫ বছর শেষ হতে চলছে। বাংলাদেশের প্রথম পরিকল্পিত এ শিল্পনগরীতে প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে বিভিন্ন প্রকল্প নেওয়া হ”েছ। সরকারের এ সাড়ে ৪’শ কোটি টাকার প্রকল্পে আগামী ২০২৫ সালে সম্পন্ন হতে পারে। এ শিল্প জোনে বিনিয়োগের জন্য পানি, বিদ্যু ও গ্যাসসহ সব ধরনের অবকাঠামো সুবিধা নিশ্চিত করার বিষয়ে ভাবছেন বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান।এ প্রকল্পের সাথে রয়েছে সোনাগাজীতে বিমান বন্দর, কক্সবাজারের মেরিন ড্রাইভের সাথে ২৩ কিলোমিটার সুপার ড্রাইভ নির্মাণ হবে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য বনায়নের প্রকল্প রয়েছে। চট্টগ্রামের মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর) প্রকল্পের আওতায় ভূমি অধিগ্রহনে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ক্ষতিপুরণের এল.এ চেক বিতরণ করছেন বেজা’র নির্বাহী চেয়ারম্যান ও সচিব পবন চৌধুরী।