এবার বোরো মৌসুমে ঠাকুরগাঁও জেলায় খাদ্য বিভাগের সরকারি ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান সফল হয়নি। সরবরাহের চুক্তি করে শর্ত ভঙ্গ করেছেন ৮৬০ জন চালকল মালিক। একছটাকও চাল দেয়নি এইসব মিল মালিক। তবে এর মধ্যে দায় এড়াতে যৎ সামান্য চাল দিয়েছেন ১৩৪ জন মিল মালিক। আর চুক্তি অনুযায়ী খাদ্য বিভাগ কে চাল সরবরাহ করেছেন ৮ শত জন। ঠাকুরগাঁও জেলা খাদ্য বিভাগের এবারের ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১১ হাজার ৩০৯ মেট্রিক টন। সংগ্রহ হয়েছে মাত্র ২ হাজার ১৩২ দশমিক ৮ শত মেট্রিকটন ধান। সরকার ঘোষিত চাল সংগ্রহ পুরাপুরি অর্জিত হয়নি ঠাকুরগাঁও জেলায়। ফলে খাদ্য শস্যের স্বাভাবিক মজুদ আশঙ্কাজনক হারে হ্রাস পাচ্ছে সরকারি গুদামে। মজুদ ঠিক রাতে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে সংশ্লিষ্ট বিভাগ। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ঠাকুরগাঁও জেলায় ১ হাজার ৬৬০টি অটো ও হাসস্কিন চাল কল রয়েছে। সব মিল মালিক বোরো মৌসুমে চাল সরবরাহ দেবে বলে খাদ্য বিভাগের সঙ্গে চুক্তি করেছিল। তবে এর মধ্যে ৮শত ৬০ জন চুক্তি ভঙ্গ করেছে। এ কারণে এই বছর বোরো মৌসুমের চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হয়নি জানিয়েছেন – ঠাকুরগাঁও জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোঃ মনিরুল ইসলাম। তিনি বলেন এবার ঠাকুরগাঁও জেলায় ৩২ হাজার ৮শত ৬৬ দশমিক ৯৫০ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহ হওয়ার কথা ছিল । কিন্তু সংগ্রহ হয়েছে মাত্র ১৭ হাজার ৭শত ২২ দশমিক ৭১০ মেট্রিক টন। সংগ্রহ অভিযান সফল না হওয়ায় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সরকারি দরের চেয়ে খোলাবাজারে ধান-চাল দাম বেশি হওয়ার কারণে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। ঠাকুরগাঁও জেলা খাদ্য বিভাগের তথ্য মতে ঠাকুরগাঁও জেলার হরিপুর ও রানীশংকৈল উপজেলায় এবার কম পরিমাণে ধান-চাল সংগ্রহ হয়েছে। সূত্র জানায়, খাদ্য অধিদপ্তরের তালিকায় ঠাকুরগাঁও জেলায় ১ হাজার ৬শত ৪০টি হাস্কিং মিল থাকলেও ৫ শত টির বেশি ভুয়া মিল রয়েছে । এইসব মিলের বাস্তবে কোন অস্তিত্ব নেই। ডিও ব্যবসায়ী ও খাদ্য বিভাগের একশ্রেণীর অসৎ গুদাম কর্মকর্তাদের যোগসাজশে প্যাড সর্বস্ব ভুয়া মিল মালিকরা কাগজে-কলমে চাল সরবরাহ দেয়। এ যেন কাজির গরু কিতাবে আছে বাস্তবে নেই। তাজুল ইসলাম নামে এক মিল মালিক এর সত্যতা আছে বলে দাবী করে তিনি বলেন, ৬/৭ টি ছাড়া বাকি অটো রাইস মিল গুলো সারা বছর বন্ধ থাকে। এসব মিলমালিকরা অধিক মুনাফার জন্য শুধু ধান কিনে মজুদ করে। বাজার দর বৃদ্ধি পেলে অন্য জেলার ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে দেয়। ঠাকুরগাঁও জেলা খাদ্য বিভাগের চাল সংগ্রহ অভিযান সফল না হওয়ার এটি একটি কারণ বলে দাবি করেন স্থানীয় নাগরিক কমিটির নেতা। অপরদিকে চাউল ব্যবসায়ী কপিল মালিক মোস্তফা কামাল বলেন, প্রতিকেজি ৩৬ টাকা চাল ও ২৬ টাকা মূল্যে ধান কেনার ঘোষণা দেয় সরকার। তবে সরকার দলের চেয়ে প্রতি কেজি চাল ৬-৭ টাকা বাজারে বেশি ছিল। লোকসান হবে জেনেটিক ওরে শর্ত ভঙ্গ করেছেন মিল মালিকরা। তবে ঠাকুরগাঁও জেলা চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ হাসান রাজু বলেন, ঠাকুরগাঁও জেলার সব অটো মিলে চাল উৎপাদন হয় না। চুক্তি করে তবে চাল সরবরাহ দেয় না তারা। পক্ষান্তরে চাতাল ব্যবসায়ীদের কালার সটার মিল নেই। এটি স্থাপন করা দুঃসাধ্য ব্যাপার। অন্যের কারখানা নিয়ে গিয়ে চাল সটার করা খরচ বেশি পড়ে। এ কারণে হাস্কিং মিল মালিকরা সরকারকে চাল দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। তিনি বলেন, আগে সটার ছাড়া চাল কিংস কিনেছে খাদ্য বিভাগ। সেই চালের পুষ্টিগুণ ছিল। সটার করা পর চাল দেখতে চকচক করে তবে এই চাল এর পুষ্টিগুণ নেই। ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে মেডিসিন বিভাগের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডাক্তার মোজাম্মেল হোসেন বলেন, চালের শরীর জুড়ে বাঁদামী রংয়ের আবরণ থাকে। আধুনিক পদ্ধতিতে চাল তৈরি কড়াই চেচালে পুষ্টির অপচয় হচ্ছে। ভাত খেয়ে পেট ভরছে তবে পুষ্টি পায় না মানুষ। এদিকে যেসব রাইস মিলের সঙ্গে খাদ্য বিভাগের চুক্তি এবং নির্ধারিত সময়ের পরও চাল দিতে ব্যর্থ হয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে ঠাকুরগাঁও জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক জানালেন কেন্দ্রীয়ভাবে এই ব্যাপারে কখনো কোনো নির্দেশনা আসেনি। সরজমিন তদন্ত করে ভুয়া মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে বলে জানান তিনি।