চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির নেতৃত্বে কারা আসছেন- এ নিয়ে দলের ভেতর-বাইরে আলোচনা শুরু হয়েছে। ৯ অক্টোবর রাজধানীর নয়াপল্টনস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে চট্টগ্রামের বিএনপি নেতাদের সঙ্গে স্কাইপে বৈঠক করেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এ সময় তিনি নগরীর বর্তমান মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি ভেঙে দেয়ার ইঙ্গিত দেন।
এ কারণে আহ্বায়ক কমিটি গঠনের বিষয়টি সামনে এসেছে। বর্তমান কমিটির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেনই কি থাকছেন আহ্বায়ক? নাকি এ পদে দেখা যাবে অন্য কাউকে। সদস্য সচিবসহ অপর পদগুলোতেই বা কারা আসছেন- এসব নিয়ে চলছে নানা গুঞ্জন।
সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম নগর বিএনপিতে কেন্দ্রীয় নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, আবদুল্লাহ আল নোমান ও মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিনকেন্দ্রিক আলাদা বলয় রয়েছে। অন্তর্কোন্দল এড়াতে এই তিনটি বলয়ের মধ্যে সমন্বয় করেই আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হতে পারে।
জানতে চাইলে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক (চট্টগ্রাম বিভাগ) মাহবুবের রহমান শামীম বলেন, ‘৯ অক্টোবরের বৈঠকে আহ্বায়ক কমিটি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। পুরনো কমিটি ভেঙে আহ্বায়ক কমিটি গঠনের আভাস দিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। শিগগিরই এ কমিটি ঘোষণা করা হতে পারে। চট্টগ্রামের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হবে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান যে নির্দেশনা দেবেন, আমরা সেই অনুযায়ী কাজ করব। কারা আসবেন নতুন কমিটিতে তা এ মুহূর্তে বলা সম্ভব নয়। বিষয়টি এখনও আলাপ-আলোচনার পর্যায়ে। তবে এটুকু বলতে পারি, অল্প সময়ের মধ্যে আহ্বায়ক কমিটির ঘোষণা দেয়া হবে।’
তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেয়া চট্টগ্রাম নগর বিএনপির একাধিক নেতা জানান, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ৫৫ জন নেতার সঙ্গে আলাদাভাবে একান্তে কথা বলেছেন। আহ্বায়কের দায়িত্ব কাকে দেয়া যায় তাও জানতে চেয়েছেন। নেতারা যে যার পছন্দের নাম প্রস্তাব করেছেন।
এদিকে আহ্বায়ক করা হতে পারে এমন তিনজন নেতার নাম এ মুহূর্তে আলোচনায় রয়েছে। তারা হলেন নগর বিএনপির বর্তমান সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক একরামুল করিম ও সাবেক যুগ্ম সম্পাদক এরশাদ উল্লাহ। সদস্য সচিব হিসেবে বর্তমান কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর, সহ-সভাপতি নাজিমুর রহমান, সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক এসএম সাইফুল আলমের নাম শোনা যাচ্ছে।
সূত্র জানায়, দলের নেতাকর্মীদের একটি বড় অংশ আহ্বায়ক হিসেবে বর্তমান কমিটির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন ও সদস্য সচিব হিসেবে বর্তমান সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্করকে চাইছেন। তবে ডা. শাহাদাত হোসেনকে নিয়ে দেখা দিয়েছে জটিল সমীকরণ। কারণ আহ্বায়ক পদে যিনি থাকবেন তিনি পরবর্তীতে নিয়মিত যে কমিটি হবে তাতে সভাপতি পদে প্রার্থী হতে পারবেন না বলে দলের সিদ্ধান্ত রয়েছে।
ডা. শাহাদাতকে পরবর্তী কমিটির সভাপতি হিসেবেও চান নেতাকর্মীরা। তাই আহ্বায়কের দায়িত্ব নিলে তার সভাপতি হওয়া অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে যেতে পারে- এমন আশঙ্কাও করছেন কেউ কেউ। আবার শাহাদাত আসন্ন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী। সামনেই নির্বাচন। নগর কমিটির সভাপতি বা আহ্বায়ক পদ ছাড়া নির্বাচন করাটা তার জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠবে।
এ ব্যাপারে মাহবুবের রহমান শামীম বলেন, ‘পরিস্থিতি বিবেচনায় দল যে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এক্ষেত্রে প্রয়োজন হলে আহ্বায়ককেও পরবর্তী কমিটির সভাপতি করা যেতে পারে।’
এদিকে নগর বিএনপির একটি অংশ এরশাদ উল্লাহকে আহ্বায়ক ও এসএম সাইফুল আলম অথবা নাজিমুর রহমানকে সদস্য সচিব করার পক্ষে। এরশাদ উল্লাহ গত জাতীয় নির্বাচনে চান্দগাঁও-বোয়ালখালী আসন থেকে মনোনয়ন চেয়ে পাননি। আহ্বায়ক হিসেবে সাবেক সাধারণ সম্পাদক একরামুল করিমের নামও বলছেন কেউ কেউ। আবদুল্লাহ আল নোমান সভাপতি থাকাকালে তিনি নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। বিএনপির এই নেতা মাঝখানে দলীয় কর্মকাণ্ডে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়লেও গত কয়েক বছর ধরে সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন।
প্রসঙ্গত, চট্টগ্রাম নগর বিএনপির সর্বশেষ কমিটি গঠিত হয়েছিল ২০১৬ সালের ৬ আগস্ট। পরবর্তীতে ২০১৭ সালে ওই কমিটিকে পূর্ণাঙ্গ করা হয়। যার সদস্য সংখ্যা ২৭৫ জন। এই হিসেবে দুই বছর আগেই বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে।