করোনা মহামারীর প্রভাবে টালমাটাল বিশ্ব অর্থনীতি। এ অবস্থায় চলতি বছর পৃথিবীর অধিকাংশ দেশের অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধি না হয়ে সংকোচন হবে। মাত্র ২২টি দেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ইতিবাচক হবে।
এরমধ্যে শীর্ষ তিনটি দেশের তালিকায় থাকবে বাংলাদেশ। ২০২০ সালে বিশ্বের তৃতীয় সর্বোচ্চ ৩ দশমিক ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে বাংলাদেশে। ক্যারিবীয় দেশ গায়ানায় এ বছর সবচেয়ে বেশি ২৬ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে। দক্ষিণ সুদানে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪ দশমিক ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হতে পারে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এ পূর্বাভাস দিয়েছে। সংস্থাটির ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুক শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। ওয়াশিংটন থেকে মঙ্গলবার রাতে এটি প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে বাংলাদেশসহ বিশ্বের ১৯৫টি দেশের অর্থনীতির জন্য ২০২০ ও ২০২১ সালে জিডিপি প্রবৃদ্ধি নিয়ে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে।
আইএমএফের এ পূর্বাভাস পঞ্জিকাবর্ষকেন্দ্রিক (জানুয়ারি-ডিসেম্বর)। এর আগে বিশ্বব্যাংক চলতি অর্থবছরে (২০২০-২১) বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ১ দশমিক ৬ শতাংশ হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছিল। অন্যদিকে, এডিবির পূর্বাভাস হল ৬ দশমিক ৮ শতাংশ। আর সরকারের লক্ষ্যমাত্রা ৮ দশমিক ২ শতাংশ।
আইএমএফ বলছে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ভারতের প্রবৃদ্ধি মাইনাস ১০ দশমিক ৩ শতাংশ হতে পারে। এ অঞ্চলে ভুটান ও বাংলাদেশ ছাড়া আর কোনো দেশে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি হবে না বলে জানিয়েছে আইএমএফ।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালে যে দেশগুলোতে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ইতিবাচক হবে তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- গায়ানা, দক্ষিণ সুদান, বাংলাদেশ, চীন, লাওস, মিসর, মিয়ানমার, রুয়ান্ডা, বতসোয়ানা, ভিয়েতনাম ইত্যাদি। বাকি সব দেশের জিডিপি সংকুচিত হবে, প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক হবে। যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, জার্মানি, যুক্তরাজ্য, জাপানের মতো বড় অর্থনীতির দেশগুলোর প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক হবে বলে জানিয়েছে আইএমএফ।
এপ্রিলে প্রকাশিত আইএমএফের ‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুক ২০২০, দ্য গ্রেট লকডাউন’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ২০২০ সালে বাংলাদেশে ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হতে পারে। ঠিক ছয় মাস পরে প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস বাড়িয়েছে সংস্থাটি। এপ্রিলের পূর্বাভাসে ২০২১ সালে সাড়ে ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধির কথা বলা হয়েছিল। এখন আইএমএফ বলছে, আগামী বছর তা কমে ৪ দশমিক ৪ শতাংশ হতে পারে।
আইএমএফ তথ্যমতে, ২০২১ সালে মাথাপিছু মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) অল্প ব্যবধানে বাংলাদেশ ভারতকে ছাড়িয়ে যাবে। ডলারের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের মাথাপিছু জিডিপি ২০২০ সালে এক হাজার ৮৮৮ ডলার হয়ে ৪ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করা হচ্ছে।
অন্যদিকে ভারতের মাথাপিছু জিডিপি ১০ দশমিক ৫ শতাংশ কমে এক হাজার ৮৭৭ ডলার হবে বলে মনে করা হচ্ছে যা গত ৪ বছরে মধ্যে সর্বনিু। উভয় দেশের জিডিপির পরিসংখ্যান বর্তমান সমান। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে পাকিস্তান এবং নেপালের মাথাপিছু জিডিপির তুলনায় এগিয়ে থাকবে ভারত।
এর মাধ্যমে বাংলাদেশ, ভুটান, শ্রীলংকা এবং মালদ্বীপ ভারতের চেয়ে এগিয়ে থাকবে। শ্রীলংকার পরে দক্ষিণ এশিয়ায় করোনা মহামারীতে ভারতীয় অর্থনীতি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে, দেশটির মাথাপিছু জিডিপি বর্তমান পঞ্জিকা বছরে ৪ শতাংশ সঙ্কুচিত হবে বলে মনে করা হচ্ছে। প্রতিবেদনে নেপাল এবং ভুটান এ বছর তাদের অর্থনীতি বৃদ্ধি করবে বলে আশা করা হচ্ছে।