মাটির ঘর,মাটির বাড়ি, মাটির হবে বিছানা। চিরচেনা সৌন্দর্য, আত্মীয়-স্বজন বন্ধু-বান্ধব সবকিছু ছেড়ে একদিন চলে যেতে হবে মাটির ঘরে। দুনিয়ায় রাজ প্রাসাদ তৈরি করার পরেও আমাদের মৃত্যু নিশ্চিত। আমরা পৃথিবীতে ক্ষণস্থায়ী। রংবেরঙের হরেক রকম বাড়ি তৈরি হচ্ছে প্রতিদিন। শীতের দিন গরম, আর গরমের দিন ঠাণ্ডা, অনেকটা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত মাটির তৈরি বাড়িগুলো এখন আর দেখা মেলেনা গাজীপুরের শ্রীপুরে। আধুনিকতার উৎকর্ষতায় আর কালের বিবর্তনে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী মাটির ঘর এখন বিলুপ্তির পথে। অতীতে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় অধিক পরিমান মাটির ঘর থাকলেও এখন তা প্রায় বিলুপ্তির পথে। গ্রামের মানুষের আর কিছু থাক বা না থাক বসত ভিটার জায়গাটা ঠিকই থাকে এ কারনে আদিকাল থেকেই থাকার জায়গা অর্থাৎ বাড়িটা একটু বড় করে বানানোর প্রবণতা রয়েছে। মাটির বাড়িগুলোকে গরীবের রাজ প্রাসাদও বলা হয়ে থাকে। সরেজমিন দেখা যায়, গ্রাম বাংলার চিরচেনা মাটির ঘর এখন প্রাায় বিলুপ্তির পথে। আধুনিকতার ছোয়ায় ইটের বাড়ির দালান শুরু হলেও এখনো অনেক গ্রামেই মাটির বাড়ি দেখা যায়। গ্রামের মানুষ মাটির ঘর ভেঙে ফেলে নতুন করে টিন বা ইটের তৈরি ঘর নির্মাণ করছেন। প্রাচীনকাল থেকেই গ্রাম বাংলার মাটির ঘরের প্রচলন ছিল ব্যাপক। এটেল মাটি দিয়ে এসব ঘর তৈরি করা হতো। মাটি ও পানি ভিজিয়ে মাটি আঠালো করে সেই মাটি দিয়ে ২০-৩০ ইঞ্চি চওড়া করে দেয়াল তৈরি করা হয়। এ দেয়াল তৈরি করতে সময় লাগতো,কারণ একসঙ্গে বেশি উচু করে দেয়াল তৈরি করা যেত না। প্রতিবার এক দেড় ফুট উচু করে দেয়াল তৈরি করা হতো। এর পর ৬-৭ দিন রোদে শুকিয়ে আবার তার উপর একই পরিমান দেয়াল তৈরি করা হতো। এভাবে দেয়াল ১০-১২ ফুট উচু হলে কিছুদিন রোদে শুকানো হতো। তারপর এই দেয়ালের ওপর বাঁশের চাল তৈরি করে খড় বা টিন দিয়ে ছাউনি দেয়া হতো। একটি মাটির ঘর তৈরি করতে প্রায় দুই থেকে তিন মাস সময় লাগতো। বিশেষ প্রক্রিয়ায় ধানের তুষ দিয়ে দেয়ালের লেপ দেওয়া হয়। এর পর বাহিরের নিচের অংশে আলকাতরা ও উপরের অংশে অনেকেই চুনের প্রলেব দিতো এতে করে বাড়ির সুন্দর্য্য যেমন বৃদ্ধি পেত তেমনি বৃষ্টির হাত থেকেও রক্ষা পেত বাড়ির দেয়াল। অনেক বাড়ির মূল ফটকে বিভিন্ন ধরনের নকশা দিয়ে বাড়ির সৌন্দর্য বাড়ানো হতো। তবে বন্যা, ভূমিকম্প না হলে এসব ঘর শতাধিক বছর পর্যন্ত টিকে থাকতো। অনেকইে আবার মাটির ঘর দোতলা পর্যন্ত করতেন। যারা মাটির এই ঘর তৈরি করেন তাদের বলা হতো দেয়ালী। উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের সাইটালিয়া গ্রামের দেয়ালী আব্দুল কাদির জানান, মাটির বাড়ি তৈরি করার উপযুক্ত সময় হচ্ছে কার্তিক মাস কারন এ সময় বৃষ্টির সম্ভবনা কম থাকে। আমরা আগে বাড়ি তৈরি করতাম প্রতি হাত ১০ টাকা হিসাবে অনেক সময় চুক্তি ভিত্তিক ৫-৬ হাজার টাকায়ও বাড়ি তৈরি করতাম। তবে এখন আর মানুষ মাটির ঘর তৈরি করে না তাই আমরা যারা মাটির ঘর তৈরি করতাম তারা এখন অন্য কাজ করে সংসার চালাচ্ছি। বর্তমানে মাটির ঘরের স্থান দখল করে নিয়েছে ইট, সিমেন্ট, বালি ও রডের তৈরি পাকা ঘরগুলো। শ্রীপুর উপজেলার কাওরাইদ ইউনিয়নের সোনাব গ্রামের রহিমা খাতুন বলেন আগের ঘর ভালো ছিল ছেলে আগের মাটির ঘর ভেঙ্গে টিনের ঘর তৈরি করেছে এখন গরমের সময় গরম আর শীতের সময় শীত লাগে। অথচ আগের মাটির ঘরে গরমের সময় ঠান্ডা আর শীতের সময় গরম লাগতো।