নওগাঁ-৬ (রানীনগর-আত্রাই) আসনে উপ-নির্বাচনকে ঘিরে প্রচার প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রার্থীরা। রাতের অন্ধকারে ছুটে যাচ্ছেন ভোটারদের দরজায়। দিচ্ছেন নানান প্রতিশ্রুতি। আগামী ১৭ অক্টোবর উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এই প্রথম জেলায় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) এ ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। নতুন পদ্ধতিতে ভোট গ্রহন নিয়ে ভোটারদের মধ্যে রয়েছে নানা ধরনের শঙ্কা। তবে জেলা নির্বাচন অফিসার বলছেন-ইভিএম বিষয়ে ভোটারদের সঠিক ধারনা সহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করা হবে। এক সময়ের রক্তাক্ত জনপদ নামে পরিচিত এই আসনে দির্ঘদিন থেকে নেই কোন হানাহানি। তবে যে প্রার্থী বিজয়ী হোক না কেন শান্তিতে থাকতে চান এমন প্রত্যাশা এলাকাবাসীর। গত ২৭ জুলাই এ আসনের এমপি ইসরাফিল আলম রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়ার পর আসনটি শূন্য ঘোষণা করা হয়। এ আসন থেকে তিনজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন। তারা হলেন- ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগে মনোনিত প্রার্থী আনোয়ার হোসেন হেলাল, বিএনপি’র শেখ রেজাউল ইসলাম এবং ন্যাশনাল পিপলস পাটির ইন্তেখাব আলম রুবেল। তবে আ’লীগ ও বিএনপির মধ্যে হাড্ডাহাডি লড়াই হবে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। উপ-নির্বাচনকে ঘিরে এ দুই উপজেলার সর্বত্র পোষ্টার সাটানো হয়েছে। চলছে গণসংযোগ ও প্রচার প্রচারনা। শহর থেকে পাড়া মহল্লায় নির্বাচনী আমেজ বিরাজ করছে। এ আসনের মোট ভোটার ৩ লাখ ৬ হাজার ৭২৫ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৫৩ হাজার ৭৫৮ জন এবং নারী ভোটার ১ লাখ ৫২ হাজার ৯৬৭ জন।
২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে জামায়াতে মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি) উত্থান ঘটে। জেএমবি দখল করে জেলার আত্রাই, রানীনগর উপজেলা, নাটোরের বাগামারা এবং রাজশাহীর একাংশ। জঙ্গী এলাকা হিসেবে এক সময় এ দুই উপজেলা পরিচিত ছিল। আতঙ্কের অপর নাম বাংলাভাইয়ের অধ্যুষিত এলাকা। যার নেতৃত্বে ছিলেন সিদ্দিকুর রহমান ওরফে বাংলাভাই। প্রত্যান্ত এলাকা হওয়ায় এ উপজেলায় সবচেয়ে বেশি অপরাধ সংগঠিত হতো। প্রকাশ্যে দিবালোকে জঙ্গী নিধনের নামে নিরীহ মানুষকে হত্যা করে গাছে ঝুলিয়ে রাখা রাখা হতো। কুপিয়ে খন্ড খন্ড করে লাশ মাঠে ঘাটে ছড়িয়ে রাখার মতো বিভীষিকাময় ও লোমহর্ষক ঘটনা হয়ে থাকত। ভয়ে সবসময় আতঙ্কের মধ্যে থাকত এ দুই উপজেলার মানুষ। তবে ২০০৮ সালে আওয়ামীলীগ থেকে নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন পেয়ে তৎকালীন ঢাকা মহানগর শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক ইসরাফিল আলম সংসদ সদস্য হিসেবে বিজয়ী লাভ করেন। তিনি ক্ষমতায় আসার পর থেকে বাংলা ভাইকে দমন করতে পেরেছিলেন। এরপর থেকে এ দুই উপজেলায় শান্তির সুবাতাস বইছে। আওয়ামী লীগের মনোনিত প্রার্থী আনোয়ার হোসেন হেলাল বলেন, উন্নয়নের ধারা অব্যহৃত রাখতে নৌকা প্রতীককে বিজয়ী করার লক্ষে নেতাকর্মীরা স্বস্ফর্ত ভাবে প্রচার-প্রচারনা করছে। এলাকার উন্নয়নে মাদক, বাল্যবিবাহ বন্ধসহ বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডে এলাকাবাসীর পাশে থাকবো। আশা করছি এলাকার উন্নয়নে যেসব কাজ অসমাপ্ত রয়েছে সেগুলো বাস্তবায়ন করতে এলাকাবাসী নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন। জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী। বিএনপির মনোনিত প্রার্থী আত্রাই শেখ রেজাউল ইসলাম রেজু বলেন, নির্বাচনী প্রচারনা শুরু থেকে বাধাসহ নেতাকর্মীদের বিভিন্ন ভাবে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। আমাদের প্রচারনায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হচ্ছে। নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনকে বিষয়টি অবগত করা হয়েছে। নির্বাচনের পরিবেশ এখন পর্যন্ত নেই বলে মনে করছেন তিনি। যদি নির্বাচন স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু হয় তাহলে বিজয়ী হবেন বলে আশাবাদী। অপরদিকে, ন্যাশনাল পিপলস্ পাটির মনোনীত প্রার্থী ইন্তেখাব আলম রুবেল বলেন, ভোটাররা কেন্দ্রে গিয়ে তাদের পছন্দ মতো প্রার্থীকে ভোট দিবে। ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরী করতে প্রচারনা-প্রচারনা করা হচ্ছে। নওগাঁ জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মাহমুদ হাসান বলেন, ইভিএম-এর মাধ্যমে ভোটগ্রহনের জন্য ভোট গ্রহনকারীদের প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। এছাড়া ভোটারদের ইভিএম ব্যবহার হাতে-কলমে শিখিয়ে দেয়া হবে যাতে ভোট দিতে কোন ধরনের সমস্যা না হয়। ভোটের আচরন বিধি বিষয়ে উল্লেখযোগ্য তেমন অভিযোগ পাওয়া যায়নি। কিছু অভিযোগ পাওয়া গেলেও কোন সত্যতা মিলেনি। আর কয়েকটি অভিযোগ প্রার্থীদের সঙে আলাপ-আলোচনা করে সমাধান করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ রয়েছে।