কিশোরগঞ্জের হাওর এলাকায় রয়েছে অপার পর্যটন সম্ভাবনার। ইতোমধ্যে কিশোরগঞ্জের ইটনা-মিঠামইন-অষ্ট্রগ্রাম সড়ক বদলে দিয়েছে হাওরের পুরো দৃশ্য। এ সড়কটি নির্মাণের স্বপ্ন দেখেছিলেন ‘ভাটির শার্দুল’ রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। তাঁর হাত ধরেই হাওরের বিশাল জলরাশির বুকচিরে বাস্তবায়িত হয়েছে ৩৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কটি। এছাড়া গত মঙ্গলবার কিশোরগঞ্জের হাওরে সারাবছর চলাচল উপযোগী অলওয়েদার রোড বা ‘আভুড়া’ সড়ক নির্মাণে ২২৬ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। প্রশাসনিক জটিলতাসহ নানা কারণে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক রাস্তা নির্মাণের সময় ক্ষতিপূরণের টাকা পাননি। টাকা না পেয়েও রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের আশ্বাসে হাওর অধ্যুষিত ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রামের কৃষকরা তাদের জমি রাস্তা নির্মাণের জন্য ছেড়ে দেন। সেই জমিতে ৮৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয় প্রায় ৩০ কিলোমিটার ‘আভুরা’ সড়ক। আড়াই বছর পর সেই ক্ষতিপূরণের টাকার চেক মঙ্গলবার থেকে বিতরণ শুরু করেছে জেলা প্রশাসন। চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের জনবিভাগের সচিব সম্পদ বড়ূয়া ও প্রেস সচিব জয়নাল আবেদীন। প্রধান অতিথি ছিলেন রাষ্ট্রপতির বড় ছেলে কিশোরগগঞ্জ-৪ আসনের এমপি রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক। একই দিন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মধ্যে সেনানিবাসের জন্য ভূমি অধিগ্রহণের চেকও হস্তান্তর করা হয়। জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, অলওয়েদার রোডের জন্য অধিগ্রহণ করা ২২৬ একর জমির জন্য ক্ষতিপূরণ বাবদ ৮৭৮ জনকে দেওয়া হচ্ছে ২৩ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। তাদের পুনর্বাসনের জন্য দেওয়া হচ্ছে আরও ২৩ কোটি টাকা। আর মিঠামইন সেনানিবাসের জন্য অধিগ্রহণ করা ২২৫ দশমিক ৫৪ একর জমির জন্য ৫২১ জন ক্ষতিগ্রস্তকে দেওয়া হচ্ছে ৪৯ কোটি ২৭ লাখ টাকা। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) দুলাল চন্দ্র সূত্রধর জানান, অনুষ্ঠানে ৯৮ জন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের মধ্যে ছয় কোটি টাকার চেক বিতরণ করা হয়। বাকিদের টাকা পর্যায়ক্রমে দেওয়া হবে। তিন উপজেলা ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রামের মধ্যে সরাসরি সড়ক যোগাযোগের জন্য তৈরি করা নান্দনিক এই সড়কটি এখন হয়ে ওঠেছে সৌন্দর্য্যর্রে এক দুর্নিবার আকর্ষণের নাম। সড়কটি দেখতে দেশের নানা প্রান্ত থেকে ছুটে আসছেন সৌন্দর্য্য আর ভ্রমণপিপাসুরা। হাজারো পর্যটকের পদচারণায় এখন মুখরিত হাওরের একসময়ের অবহেলিত আর প্রত্যন্ত এই জনপদ। মিঠামইনের ইউএনও প্রভাংশু সোম মহান বলেন, অলওয়েদার সড়ক হাওরের সৌন্দর্য্যকে বৃদ্ধি করেছে। সড়কের কাজ এখনো শেষ হয়নি। কিশোরগঞ্জ-৪ (ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম) আসনের সংসদ সদস্য রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক বলেন, সড়কটি নির্মাণের ফলে পর্যটকরা এভাবে ভিড় করবেন প্রথমে আমরাও সেটি বুঝতে পারিনি। রাস্তাটি সত্যিকার অর্থে প্রয়োজনের জন্য তৈরি করা হয়েছে। এ সড়কটি হওয়ার ফলে তিন উপজেলার মানুষের যোগাযোগসহ পরস্পরের প্রতি সম্প্রীতির বন্ধন সৃষ্টি হয়েছে।