ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধিসহ ৫টি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক)। এগুলো বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ২৬৬ কোটি ১৩ লাখ টাকা। এরমধ্যে ইলিশ উৎপাদ বৃদ্ধি প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৪৬ কোটি টাকা। সরকারি তহবিল থেকে ৫ প্রকল্পের পুরো অর্থ ব্যয় করা হবে। মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রকল্পগুলো অনুমোদন দেয়া হয়। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা। পরে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান। এসময় পরিকল্পনা সচিব আসাদুল ইসলাম, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ইয়ামিন চৌধুরী, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য (সিনিয়র সচিব) শামীমা নার্গিস, আবুল কালাম আজাদ ও জাকির হোসেন আকন্দ উপস্থিত ছিলেন।
পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, প্রধানমন্ত্রী অপ্রয়োজনীয় রাস্তা নির্মাণ না করার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, নিজের বাড়ির সামনে অপ্রয়োজনীয় ভাবে রাস্তা নির্মাণ বা প্রশস্তকরণ করার মানসিকতা বাদ দিতে হবে। কৃষি জমি রক্ষায় নতুন রাস্তার চেয়ে বিদ্যমান রাস্তা সংস্কারে জোর দিতে হবে। তাছাড়া ভেবে দেখতে হবে যেসব নতুন রাস্তা তৈরি হচ্ছে সেগুলো সংস্কারের সামর্থ্য আমাদের আছে কিনা। এছাড়া ইলিশের উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি খাঁচায় অন্যান্য মাছ চাষের প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে হবে। পাশাপাশি অন্যান্য মাছের উৎপাদন বাড়াতে খাঁচায় মাছ চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জেলেদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। এতে একদিকে ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ সময়ে তারা বিকল্প কাজ হিসেবে অন্য মাছ যেমন চাষ করতে পারবেন, তেমনি মাছের উৎপাদনও বাড়াতে পারবেন।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, প্রত্যেক উপজেলায় টেকনিক্যাল স্কুল করার প্রতিশ্রুতি রয়েছে সরকারের। এরই অংশ হিসেবে ৪০টি উপজেলায় কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপনের প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, যারা বিদেশ থেকে ফেরত আসছেন তাদেরও প্রশিক্ষণ দেয়ার পাশাপাশি অর্থ প্রণোদনা দেয়া হবে। যাতে তারা আবারও বিদেশ যেয়ে বেশি আয় করতে পারবেন। ইলিশ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ইতোমধ্যেই জাতিসংঘ ইলিশ যে আমাদের সম্পদ সে বিষয়ে সনদ দিয়েছে। সেই হিসেবে ইলিশে বাংলাদেশের স্বত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এক প্রশ্নের উত্তরে এমএ মান্নান বলেন, প্রকল্প পাস হওয়া মানে টাকা খরচ নয়। আমরা প্রকল্প চলমান সময়েও নজরদারি করছি। আইএমইডি আছে তারা কাজ করছে। সুতরাং কিছু ক্ষেত্রে ব্যয় বেশি ধরা থাকলেও সেগুলোতে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বেশি করে ব্যয় করতে পারবেন না।
ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য জাকির হোসেন আকন্দ বলেন, বিশ্বে যে পরিমাণ ইলিশ উৎপাদন হয় তার বেশিরভাগ আমাদের এ অঞ্চলেই হয়। বাংলাদেশে উৎপাদন হয় ৬০ শতাংশ ইলিশ। নানা কারণে ইলিশ প্রজনন ও চলাচল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, সেজন্যই ইলিশ উন্নয়ন প্রকল্পটি অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৪৬ কোটি টাকা। এছাড়া অনুমোদিত অন্য প্রকল্পগুলো হল- জামালপুর জেলার দিগপাইত-সরিষাবাড়ি-তারাকান্দি সড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ। প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৭৬ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। সীমান্ত এলাকায় বিজিবির ৭৩টি কম্পোজিট আধুনিক বর্ডার অবজারভেশন পোস্ট নির্মাণ প্রকল্প; এর ব্যয় ধরা হয়েছে ২৩৩ কোটি ৫২ লাখ টাকা। ৮টি সরকারি শিশু পরিবারে ২৫ শয্যাবিশিষ্ট শান্তি নিবাস প্রকল্প; যার ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৩ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। ৪০টি উপজেলায় ৪০টি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও চট্টগ্রামে ১টি ইন্সটিটিউট অব মেরিন টেকনোলজি স্থাপন; যার ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৩৫ কোটি ৭৮ লাখ টাকা।