গলাচিপার রতনদী তালতলী ইউনিয়নের কৃষক জাহাঙ্গীর ফরাজি। দীর্ঘ প্রায় ২০ বছর ধরে কৃষি কাজে যুক্ত রয়েছে। এর আগে কখনোই বর্ষা মৌসুমে তরমুজ চাষ করেননি। গত বছর ভগ্নিপতি সখের বসে বর্ষা মৌসুমে শসা গাছের মাচার সাথে ১৭টি তরমুজ বীজ বপন করেন। ওই সময় ১৭টি গাছে ৭০টি তরমুজ হয়। এ দেখে উদ্ভুদ্ধ হয়ে নিজের ২০ শতাংশ জায়গায় বর্ষা মৌসুমে তরমুজ চাষ করেন। এতে মাত্র ২৫ হাজার টাকা খরচ করে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে কমপক্ষে ৩ লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি করতে পারবেন বলে তিনি আশা করেন। বর্ষায় তরমুজ চাষ করে সফলতা পেয়েছে কৃষক জাহাঙ্গীর। ফলন ভালো হওয়ায় অন্য কৃষকদের মধ্যেও আগ্রহ বেড়েছে। সরেজমিনে গলাচিপার রতনদীতালতলী ইউনিয়নের গ্রামর্দ্দন গ্রামে জাহাঙ্গীর ফরাজির ক্ষেতে গিয়ে এসব তথ্য জানাগেছে। তরমুজ চাষী মো. জাহাঙ্গীর ফরাজি (৪৫) জানান, গত বছর ভগ্নিপতি জাহাঙ্গীর মুন্সি তার বাড়িতে শসা বেদিতে ১৭টি তরমুজ বীজ বপন করেন। ওই সময় ফলন ভালো দেখে নিজে বর্ষা মৌসুমে তরমুজ চাষের পরিকল্পনা করেন। এর ফাঁকে খুলনায় মাছের পোনা কিনতে গেলে সেখানে কৃষকদের সাথে কথা বলেন। তাদের কাছে জেনে আসেন বর্ষা মৌসুমে তরমুজ চাষের পদ্ধতি। এর পর এ বছর কোরবাণীর পাঁচদিন আগে নিজের বাড়ি গ্রামর্দ্দনে ২০ শতাংশ জায়গায় মাটির বেদি করেন। সেখানে মাচা করে তরমুজ বীজ বপন করেন। নিয়মিত সার কীটনাশক ব্যবহার করেন। কিন্তু মৌসুমে যে পরিমাণ দিতে হয় সার কীটনাশক বর্ষা মৌসুমে তার চেয়ে অনেক কম ব্যবহার করতে হয়েছে। এতে ফলনও ভালো হয়েছে। মাটির দশটি বেডে মাচা করে দুই পাশে মাচা করে দিয়েছেন। গ্রীষ্ম মৌসুমে শ্রমিক ও সেচ ব্যবস্থায় এই ২০ শতাংশ জমিতে প্রায় লাখ টাকা খরচ হতো। আর বর্ষা মৌসুমে মাত্র ২৫ হাজার টাকার মধ্যেই সব হয়ে গেছে। আবার দামও পাওয়া যায় বেশি। বর্ষায় তরমুজ চাষ করতে গেলে নিজেকে একটু সতর্ক থাকতে হয়। কারণ সঠিক সময় সার ব্যবস্থাপনা, মাচা তৈরি করা, ডগা কাটা, ডগা মাচায় উঠিয়ে দিতে হয়। মাচায় উঠিয়ে দেওয়ার পর জাল পরিয়ে দেওয়া হয়। এর পর ফলন আসলে তরমুজ ব্যাগিং করতে হয়। এ প্রসঙ্গে গলাচিপা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এআরএসএম সাইফুল্ল্হ বলেন, গলাচিপায় জাহাঙ্গীর ফরাজি ও নলুয়াবাগী এলাকায় আলতাফ হোসেন নামের কৃষক বর্ষা মৌসুমে তরমুজ চাষ করছেন। দুজনেরই ফলন ভালো হয়েছে। আগামী বছর বর্ষা মৌসুমে তরমুজ চাষীর সংখ্যা বাড়বে বলে ধারণা করছি।’ তিনি আরো বলেন, ‘বার মাসই তরমুজ চাষ করা যায়। বর্ষা মৌসুমে মাচা পদ্ধতিতে তরমুজ চাষ করতে প্রথম বছর একটু বেশি খরচ হয়। কারণ প্রথম বছর মাটির বেদি, মাচায় তৈরি করতে খরচ বেশি। পরের বছর তা খরচ কমে যায়। লাভ ভালো হয়।’