সরকারের দেওয়া দুর্যোগ সহনীয় বাসগৃহ নির্মাণ প্রকল্পের হতদরিদ্রদের মাঝে বিনামূল্যের ঘরে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার কলিয়া ইউনিয়নের ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ভূমিহীনদের ঘর দেওয়ার কথা বলে ১০ জনের কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা করে মোট ৩ লক্ষ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে আদালতে মামলা হয়েছে। ভূমিহীনদের মধ্যে একজনের ছেলে সাহেব আলী বাদি হয়ে ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা মুহাম্মদ রাজা মোল্লাকে আসামী করে মানিকগঞ্জ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে গত বুধবার মামলা করেছেন। মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, কলিয়া ইউনিয়নের ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা মুহাম্মদ রাজা মোল্লা নীরালি বাজারে এসে প্রস্তাব দেয় প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের অধীনে ভূমিহীনদের মধ্যে বিনামূল্যে ঘর বিতরণ করা হবে। ১০ জনের একটি তালিকা তৈরীর জন্য নিরালী বাজারের সাহেব আলীকে অনুরোধ করেন। সাহেব আলী তার নিজের মা জমেলা খাতুনের নামসহ আরো ৯ জন ভূমিহীনের নামের তালিকা ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা মুহাম্মদ রাজা মোল্লার কাছে জমা দেন। এসময় ওই ভূমি কর্মকর্তা জানান, ঘর পেতে হলে জনপ্রতি ৩০ হাজার টাকা করে ঘুষ দিতে হবে। এর পর তালিকা নাম থাকার জমেলা খাতুন, রফিকুল ইসলাম, শহিদুল ইসলাম, হারু মিয়া, আলমগীর, গফুর মিয়া, রাশেদা, ছিদ্দিক, জিয়া ও হাকির কাছ থেকে ঘর পাওয়া আশায় ৩০ হাজার টাকা করে সংগ্রহ করে গত ২৫ জানুয়ারী ৩০ লক্ষ টাকা রাজা মোল্লাকে দেওয়া হয়। এর পর থেকে বিনামূল্যের প্রধানমন্ত্রীর ঘর দেওয়া কথা বলে করোনার কারণ দেখিয়ে ভূমিহীনদের ঘুরাতে থাকেন ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা মুহাম্মদ রাজা মোল্লা। জুন মাসের মধ্যে ভূমিহীনদের ঘর দেওয়া হবে বলে মুহাম্মদ রাজা মোল্লা সময় নেন। জুন মাসের মধ্যে ঘর দিতে না পারায় স্থানীয় আইনজীবী মামলার স্বাক্ষী ফয়জুল ইসলামের বাড়িতে গত ১৮ জুলাই এক গ্রাম্য শালীশের আয়োজন করা হয়। ওই শালীশে ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা স্বীকার করেন এক মাসের মধ্যে ঘর দিতে না পারলে ভূমিহীনদের নিকট থেকে যে টাকা নেওয়া হয়েছে তা ফেরত দেওয়া হবে। নির্ধারিত সময়ে টাকা না পেয়ে গত ৭ সেপ্টেম্বর ভূমিহীনরা মুহাম্মদ রাজা মোল্লার অফিসের গিয়ে টাকার জন্য চাপ প্রয়োগ করেন। এসময় রাজা মোল্লা হুমকির দিয়ে বলেন টাকা ফেরত দেওয়া হবে না। টাকার জন্য আবার আসলে মামলা দিয়ে জেলে নিয়ে যাওয়া হবে। ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তার এই আচরণ দেখে ভূমিহীনরা বিনামূল্যে সরকারি ঘর দেওয়া নামে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আদালতে মামলা করেছেন। স্থানীয় আইনজীবী ফয়জুল ইসলাম জানান, প্রধানমন্ত্রীর বিনামূল্যে ঘর দেওয়া কথা বলে কলিয়া ইউনিয়ন ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা মুহাম্মদ রাজা মোল্লা স্থানীয় দরিদ্রদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া ঘটনায় তার বাড়িতে শালীসের আয়োজন করা হয়েছিল। ওই শালীসে রাজা মোল্লা স্বীকার করেছিলেন এক মাসের মধ্যে ঘর দিবেন না হলে টাকা ফেরত দিয়ে দিবেন। রাজা মোল্লা কলিয়া ইউনিয়ন ছাড়াও পাশের ধামশ্বর ইউনিয়নে অতিরিক্ত দায়িত্বে রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে নানাবিধ হয়রানী ও ঘুষের অভিযোগ রয়েছে। এব্যাপারে জেলা প্রশাসকের কাছে কয়েক মাস আগে স্থানীয়রা লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এবিষয়ে কলিয়া ইউনিয়নের উপ সহকারী ভূমি কর্মকর্তা রাজা মোল্লার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন দাওয়াত খেতে আসছি পরে কথা বলবো। এবিষয়ে দৌলতপুর উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) জুয়েল আহমেদ জানান, বিনামূল্যে ঘর দেওয়া না দেওয়ার সাথে একজন ইউনিয়ন ভূমি-কর্মকর্তার কোন সম্পর্ক নেই। তার পরও যদি এই ধরণের ঘটনা ঘটে থাকে তাহলে অভিযোগকারীরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অথবা জেলা প্রশাসকের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দিতে পারতেন। বিষয়টি তদন্ত করে সত্যতা পেলে ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যেতো। যেহেতু আদালতে মামলা হয়েছে বিষয়টি আইনগত ভাবে সমাধান হবে।