বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধীদের সরকারি ভাতার ৪/৫ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে গাজীপুরের এক মহিলা আওয়ামী লীগের নেত্রীর বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত শেফালী খানম গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার জাঙ্গালীয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি। জাঙ্গালীয়া ইউনিয়নের প্রায় ৪০-৫০জন প্রতিবন্ধী, বিধবা ও বয়স্কদের সরকারি ভাতার কার্ড করে দিয়ে টাকা উঠিয়ে নিজে আত্মসাত করেছে বলে ¯’ানীয়দের অভিযোগ। ’ানীয় সূত্রে জানা যায়, কালীগঞ্জ উপজেলার জাঙ্গালীয়া ইউনিয়নের মহিলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শেফালী খানম ঐ ইউনিয়নের চেয়ারম্যানসহ বেশ কয়েকজন উপজেলার নেতাদের সাথে চলা ফেরা করেন। সে সুবাদে জাঙ্গালীয়া ইউনিয়নের কাউলিতা গ্রামের বিধবা, প্রতিবন্ধী ও বয়স্ক হতদরিদ্র ৪০-৫০টি পরিবারে কাছে তিনি নিজে গিয়ে সরকারি কার্ড করে ভাতার টাকা পাইয়ে দেয়ার আশ^াস দেন। পরে ওইসব পরিবারের কাছ থেকে কার্ড করে দেয়ার আগেই খরচ বাবদ ৫০০-১০০০ টাকা করে নিয়ে নেয়। এক পর্যায়ে ওই হতদরিদ্র পরিবার গুলো সরকারি ভাতার কার্ডও পায়। কিš‘ যখন সেই ভাতার টাকা ব্যাংক থেকে উত্তলোন করা হয় তখন মহিলা আ’লীগ নেত্রী শেফালী খানম কৌশলে সব টাকা হাতিয়ে নেয়। খালি হাতে বাড়ি ফেরে দরিদ্র অসহায় মানুষ গুলো। ভুক্তভোগীদের মধ্যে কেউ কেউ টাকা নেয়ার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে তাদের বলা হয় অফিস ম্যানেজ করতে লাগবে, পরের বারের টাকা আপনারা পাবেন। বিষয়টি নিয়ে গ্রামে বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। এমন খবর পেয়ে ওই গ্রামে সাংবাদিক প্রতিবেদন করতে এসেছে শুনে বয়স্ক ফেলাল উদ্দিন ফেলা, রাসিদা বেগম, হাওয়া বেগম, বিধবা সাজেদা বেগম, আমেনা বেগম, প্রতিবন্ধী ঈমান আলী, আওলাদ, সুমন চন্দ্র শীল, ববিতা রানীসহ আরো অনেকে ছুটে আসেন। কষ্টে-দু:খের জীবন কাহিনী শুনিয়ে ছলছল চোখে শেফালীর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগসহ সরকারি ভাতার টাকা আত্মসাতের বিষয়টি তুলে ধরেন। আবার ভয় পা”েছন মুখ খোলাতে নেত্রী শেফালী খানম কখন তাদের ক্ষতি করে ফেলে। এবিষয়ে ভুক্তভোগী বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী মিনহাজের মা পেয়ারা বেগম জানান, মহিলা আওয়ামলী লীগ নেত্রী শেফালী খানম তাদের বাড়িতে এসে তার ছেলেকে প্রতিবন্ধী কার্ড করে দেয়ার আশ^াস দেন। পরে তার কাছ থেকে সংশ্লিষ্টসকল কাজপত্রসহ খরচ বাবদ ১ হাজার চেয়ে নেয়। পরবর্তীতে সরকারি প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ডটি এনে দেয়। ওই কার্ডের ভিত্তিতে সরকারি ভাবে নয় হাজার টাকার একটি চেক দেয় কালীগঞ্জ উপজেলা সমাজ সেবা অধিদপ্তর। চেক ভাঙ্গাতে গেলে শেফলী খানম সাথে যায় এবং টাকা উত্তোলনের পর ৫শটাকা দিয়ে বাকি ৮হাজার ৫শ টাকা সে নিয়ে নেয়। আরো এক ভুক্তভোগী প্রতিবন্ধী জিয়াসমিনের মা হাসনেয়ারা জানান, তার কাছ থেকেও কার্ড করে দেয়ার কথা বলে প্রথমে কিছু টাকা নেয়। পরে ওই কার্ডের ভিতিতএত চেক দেয় উপজেলা সমাজ সেবা অধিপ্তর। কিš‘ ব্যাংক থেকে টাকা তুল্লে ৫শটাকা দিয়ে বাকি সব টাকা নিয়ে নেত্রী শেফালী বেগম। জিজ্ঞেস করলে সে জানায় অফিসের খরচ লাগবে। পরবর্তীতে টাকা দিলে সেই টাকা আপনি নিবেন। বিধবা আমেনা বেগম ও সাজেদা বেগম দু:খ প্রকাশ করে জানান, দরিদ্র সংসারে অনেক কষ্ট করে খেয়ে না খেয়ে জীবন যাবন করছেন। তার মধ্যেও নেত্রী শেফালীকে ভাতার কার্ড করার জন্য মানুষের কাছ থেকে চেয়ে এনে খরচ বাবদ কিছু টাকা এনেদেন। কার্ড পাওয়ার পর ভেবে ছিলেন ভাতার টাকা পাওয়ার পর ঐ ঋণের টাকা পরিশোধ করবেন। কিš‘ তা আর হলো না ব্যাংক থেকে ভাতার টাকা উত্তলনের পর নিচে নামার সাথে সাথে ছয় হাজার টাকার মধ্যে ৫শ টাকা দিয়ে বাকী সাড়ে ৫ হাজার টাকা শেফালী নিয়ে নেয়। এবিষয়ে জাঙ্গালীয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গাজী সারোয়ার হোসেন বলেন, বিষয়টি ভুক্তভোগীদের মধ্যে আমার কাছে কেউ অভিযোগ করেনি। বিভিন্ন মাধ্যমে শুনেছি। ভুক্তভোগীদের মধ্যে যদি কেউ অভিযোগ করতো তাহলে ব্যব¯’াগ্রণ করা যেত। তার পরেও বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখা হ”েছ। কালীগঞ্জ উপজেলা সমাজসেব অফিসার শাহাদাত হোসেন বলেন, এঘটনায় আমাদের কোন অফিসার জড়িত নয়। আমরা নিয়ম অনুযায়ী ভাতার টাকা বিতরণ করেছি। পরে ভাতাভোগীদের কাছ থেকে যদি কেউ টাকা নিয়ে থাকে সে দায় আমাদের নয়। তারপরেও অভিযোগ পাওয়ার পর আমরা বিষয়টি নিয়ে মাঠ পর্যায়ে তদন্ত করে অভিযুক্তর বিরুদ্ধে ব্যব¯’া গ্রহণ করবো। কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: শিবলী সাদিক বলেন, এ ঘটনায় অভিযোগ পেয়ে অভিযুক্তর সাথে যোগাযোগ করে ডাকা হয়েছে। এছাড়া বিষয়টি বিভিন্ন ভাবে তদন্ত করা হ”েছ। অভিযোগ প্রমাণিত হলে অভিযুক্ত বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যাবহ¯’া গ্রহণ করা হবে।