জোয়ার ভাটায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে নোয়াখালীর মেঘনা উপকূলের সাধারণ মানুষের জনজীবন। বেড়ি বাঁধ না থাকায় জোয়ারের পানি প্রবেশ করে হাজার হাজার মানুষ পানি বন্ধী হয়ে পড়েছে। জলোচ্ছাসে সব চেয়ে বেশি ঝুকিতে থাকে উপজেলার নিঝুমদ্বীপ, বয়ার চরের, নলচিরা, সুখচর, চরঈশ্বর, তমরদ্দি, সোনাদিয়া ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল। বসতঘরসহ আশপাশের এলাকা বর্তমানে পানির নিচে তলিয়ে গেছে। ভেসে গেছে গবাদি ও গৃহপালিত পশু, মাছের খামার। দেখা দিয়েছে খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট। দ্রুত ওই এলাকায় সরকারী ভাবে ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছানের দাবী করেছেন স্থানীয়রা।
সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, ঘূর্ণিঝড় আম্পানের সময় হাতিয়া উপজেলার চারপাশের অধিকাংশ ভেঙে যাওয়া বেড়িবাঁধ মেরামত না করায় সামান্য জোয়ারের পানিতে সহজে তলিয়ে বিস্তৃর্ন এলাকা। জোয়ারের পানিতে অনেকের বসতবাড়ি ডুবে গেছে। ভেসে গেছে গবাদি পশু, গৃহপালিত পশু ও মাছের খামার ও পুকুরের মাছ। উপজেলার বয়ারচন-হরনি, নিঝুমদ্বীপসহ নিম্মাঞ্চলের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।
নিঝুমদ্বীপের ইউপি চেয়ারম্যান মেহরাজ উদ্দিন জানান, কি করবো ভাই বুঝতে ছিনা, জোয়ারের পানি এই আসে এই যায়। জোয়ার আসলে মানুষের দূর্ভোগের শেষ থাকেনা। বেড়িবাঁধ না থাকায় অল্প বৃষ্টি আর সামান্য জোয়ারের মানুষের ঘরের চালের উপর উঠে যায় পানি। আমরা দ্রুত বেড়ি বাঁধ নির্মানের জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
এদিকে চেয়ারম্যান ঘাট থেকে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক আরিফুর রহমান জানান, বেড়িবাঁধ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে ১নং হরনি ইউনিয়নের কয়েক হাজার পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চেয়ারম্যান ঘাট, দক্ষিণ ইসলামপুর, রহমতপুর, দিদার বাজার, মাইনুদ্দিন বাজার, আহম্মদপুর, আলামিন গ্রাম, শরীয়তপুর সমাজ, গোবিন্দপুর, ফরাজী গ্রাম, মুফতি সমাজ, ৯ দাগ সমাজ, টাংকি সমাজ, মোল্লা গ্রাম, ১০ দাগ সমাজ, পূর্ব মোহাম্মদপুর, গাবতলী, রাধার খাল এলাকার কাঁচা ঘরবাড়ি পানিতে মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মাছের খামার, পুকুরের মাছ, গবাদি ও গৃহ পালিত পশু পানির তোড়ে ভেসে গেছে। ক্ষতি হয়েছে ক্ষেতের ফসল। সব কিছু পানিতে নিমজ্জিত হওয়ায় রান্নার ব্যবস্থা না থাকায় অনেকে অর্ধাহারে অনাহারে দিন কাটাচ্ছে। এখানকার বাসিন্ধারা সরকারী ভাবে ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছানোর পাশাপাশ নদীভাঙ্গন রোধে স্থায়ী ব্লব বাঁধ নির্মাণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.রেজাউল করিম জানান, বেঁড়িবাধ মেরামতের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে আমরা সার্বক্ষনিক যোগাযোগ রাখছি। কিন্তু কোন সুফল পাওয়া যাচ্ছেনা।
বেড়ি বাঁধ না থাকায় মানুষের দূর্ভোগের কথা স্বীকার করে নোয়াখালী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন জানান, বেড়ি বাঁধ নির্মনের জন্য ইতিমধ্যে প্রাক্কলন তৈরী করে মন্ত্রনালয়ে পাঠানো জানানো হয়েছে। বরাদ্ধ পেলে বেড়িবাঁধ নির্মানের কাজ শুরু হবে।
নোয়াখালী জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ খোরশেদ আলম জানান, সেখানকার পরিস্থিতি আমরা সার্বক্ষনিক নজরে রাখছি। আমি আগামীকাল সরেজমিন যাবো। ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগীতার ব্যাপারে যা করা দরকার সবই করা হবে।
এ ব্যাপারে নোয়াখালী-৬ (হাতিয়া) আসনের সংসদ সদস্য আয়েশা ফেরদাউস জানান, বেড়ি বাঁধ না থাকায় পনি প্রবেশ করে হাতিয়ার মানুষ অবর্ননীয় দূভোগের শিকার হচেছ। আমরা এ বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘদিন থেকে মন্ত্রনালয়ে ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে যোগাযোগ রাখছি। দীর্ঘ মেয়াদী ব্লক বাঁধ নির্মানের দাবী জানিয়ে আসছি। মানুষের জান-মাল রক্ষায় আশা করি সহসায় পানি উন্নয়ন বোর্ড হাতিয়া ব্লক বাঁধ নির্মাণের ব্যবস্থা করবে।