ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেনকে ফুল দিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে এসেছিলেন সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ সময় তাদের সঙ্গে করে নিয়ে আসা ফুল কেড়ে নিয়ে ছুড়ে ফেলে ক্যাম্পাস থেকে তাদের তাড়িয়ে দেয়ারও অভিযোগ উঠেছে। সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সভাপতি দুর্জয় পাল এই অভিযোগ করেছেন।
শনিবার (৯ সেপ্টেম্বর) আনুমানিক সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাচ চত্বরের পাশে এই ঘটনা ঘটে।
ছবি দেখে দুর্জয় পাল এই ঘটনায় জড়িত কয়েকজনকে শনাক্ত করতে পেরেছেন। তারা হলেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম হল ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহরিয়ার নিরব এবং বিজয় একাত্তর হল ছাত্রলীগের সহসভাপতি মেহেদী হাসান নিরব।
দুজনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ সভাপতি মাজহারুল কবীর শয়নের অনুসারী। বেশ কয়েকদিন ধরেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই নেতার সঙ্গে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই নেতার মনোমালিন্য চলছে। এর মাঝেই আজ এই ঘটনা ঘটল।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে দুর্জয় পাল সংবাদমাধ্যমকে বলেন, গত ৩১ জুলাই আমাদের কমিটি হয়েছিল। এরপর থেকে আমরা বিভিন্ন ব্যস্ততার কারণে সাদ্দাম ভাইকে ফুল দিতে পারিনি। শনিবার সন্ধ্যায় আমরা ফুল দিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যাই। এরপর আমাদের সামনে থাকা মেয়েদেরকে একদল শিক্ষার্থী এসে আমরা কোন ইউনিট জিজ্ঞেস করে। পরে মেয়েরা ইউনিটের নাম বললে তাদেরকে বলা হয়, আপনারা এখান থেকে চলে যান।
তিনি আরও বলেন, তাদের বলি সাদ্দাম ভাইয়ের সঙ্গে একটু শুভেচ্ছা বিনিময় করতে আসছি। তখন তারা আমাকে বলে- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কোনো শুভেচ্ছা বিনিময় হবে না। এটা করতে চাইলে পার্টি অফিসে যান, না হয় সাদ্দাম ভাইয়ের বাসায় যান। এই কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের হাতে থাকা ফুল দিয়ে বানানো নৌকা এবং দুইটা ফুলের তোড়া কেড়ে নিয়ে মাটিতে ছুঁড়ে ফেলে।
এরপর তারা উচ্চস্বরে বলে- এখানে কোনো ফুল দেয়া হবে না। আপনারা তাড়াতাড়ি চলে যান। পরে অবস্থা বেগতিক দেখে আমরা পেছন দিকে হাঁটা শুরু করি। এরপর তারা আমাদের বাইকে করে অনুসরণ করছিল। আর পেছন থেকে বারবার বলছিল, ‘দ্রুত যান’, ‘দ্রুত আগান’।
দুর্জয় পাল বলেন, পরে আমরা শহীদ মিনারের সামনে গেলে সাদ্দাম ভাইয়ের গাড়ি দেখতে পাই এবং ভাইয়ের সঙ্গে নতুন একটা ফুল এনে শুভেচ্ছা বিনিময় করি। পরে ভাইকে ঘটনাটি জানালে তিনি ‘দেখবেন’ বলে আমাদের আশ্বস্ত করেছেন। এরপর আমরা চলে আসি।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত মেহেদী হাসান নিরব সংবাদমাধ্যমকে বলেন, আমি অসুস্থ। বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারে আসার সময় দেখি টিএসসিতে কারা যেন ঝামেলা করছিল। সেটা দেখতেই মূলত আমি গিয়েছিলাম। তখনই হয়ত তারা আমাকে দেখেছে এবং মনে করেছে আমি ঘটনায় জড়িত।
তিনি বলেন, যেহেতু ক্যাম্পাসে আমি ছাত্র রাজনীতি করি সেহেতু ক্যাম্পাসের সব বিষয়ে আমার তো খোঁজ খবর রাখতে হয়। সেটা দেখতে গিয়ে দেখি, একদল শহীদ মিনারের দিকে যাচ্ছে আরেকদল পেছন থেকে বাইকে হর্ন দিচ্ছে। পরে টিএসসি এসে দেখি, কিছু ফুলের তোড়া ছড়ানো ছিটানো। আমি ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিলাম না। যদি কেউ আমার নাম বলে, তাহলে আমি ষড়যন্ত্রের শিকার।
আরেক অভিযুক্ত শাহরিয়ার নিরব বলেন, আমি দুদিন ধরে বাসায়। ক্যাম্পাসেও যাইনি আজকে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার প্রশ্নই আসে না। ওনাকে আবার ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করেন।
তবে নিরবের এক বন্ধু জানিয়েছেন, আজকে তারা এক সঙ্গে টিএসসিতে ছিলেন। পরে কবি জসিমউদ্দীন হলে অনুষ্ঠিত এক কর্মসূচিতেও তাকে দেখা গেছে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবীর শয়ন বলেন, ঘটনাটি আমার জানা নেই। জেনে আমরা ব্যবস্থা নেব।