আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার পাঁচুড়িয়া ইউনিয়নের উত্তর চরনারানদিয়া গ্রামে প্রতিপক্ষের হামলায় অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ি, আসবাবপত্র ভাংচুর, নগদ টাকা ও স্বর্ণলঙ্কার লোটপাটসহ প্রায় কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে । শনিবার ভোররাতে এ হামলায়ঘটনা ঘটে। এ হামলায় ঘটনায় সোমবারে তিনটি মামলা হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে ওই এলাকায় অভিযান চালিয়ে পুলিশ তাদের আটক করেছে। ওই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের দাবি করেছেন তাদের বাড়িঘর, আসবাবপত্র ভাংচুর,নগদ টাকা ও স্বর্ণলমঙ্কার লোটপাটে কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এলাকাবাসী ও মামলার সূত্রে জানা যায়, গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিজয়ী চেয়ারম্যান এমএম মিজানুর রহমান ও পরাজিত প্রার্থী খালিদ মোশররফ রঞ্জু সমর্থকদের মাঝে দীর্ঘদিন ধরে ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে বিরোধ চলে আসছে। এই বিরোধের জের ধরে ইউনিয়নের উত্তর চরনারানদিয়া গ্রামে বর্তমান চেয়ারম্যান এমএম মিজানুর রহমানের সামর্থক নির্বাচিত ইউপি সদস্য আজগর আলী পক্ষের লোকজনের সাথে খালিদ মোশাররফ রঞ্জুর সামর্থক কামাল মোল্যা ও আকবর মোল্যার লোকজনের মধ্যে সম্প্রতি কয়েক দফা সংঘাত সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এরই ধারাবাহিকতায় শনিবার ভোররাতে ইউপি সদস্য আজগর আলী’র পক্ষের লোকজন প্রতিপক্ষ কামাল মোল্যা ও আকবর মোল্যার পক্ষের লোকজনের অর্ধশতাধিক বাড়ি ভাংচুর ও লোটপাট করে। আজগর আলীর নেতৃত্বে ৩০-৪০ জনের একটি দল দেশীয় অস্ত্র নিয়ে কয়েক ঘন্টাব্যাপী হামলা চালায়। ঘর ছেড়ে লোকজন দৌড়ে পালিয়ে রক্ষা পেলেও তাদের বাড়িঘরে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়। মামলার বাদী উত্তরচরনারানদিয়া গ্রামের ইতালী প্রবাসী কাবুল হাসানের স্ত্রী জোহরা বেগম বলেন,শনিবার ভোররাতে আমরা তখন গভীর ঘুমে মগ্ন,তখন বর্তমান ইউপি সদস্য আজগারের নেতৃত্বে ৩০-৪০ জনের একটি দল দেশীয় অস্ত্র নিয়ে বাড়িতে প্রবেষ করে। কোনো কিছু বুঝে উঠার আগেই বাড়ির গেইট ভেঙে ভিতরে প্রবেষ করে নারকীয় তাণ্ডব চালায় তারা। বাড়িতে কোনো পরুষ ছেলে না থাকায় আমাদের জিম্মি করে দরজা, জানালা, আসবাবপত্র ভাংচুর, স্বর্ণলঙ্কার লুটপাট, নগদ টাকা ও কয়েকটি মোবাইল সেটসহ অনন্ত ২৫ লাখ টাকার ক্ষতিসাধন করে। আজগার মেম্বারসহ অনন্ত ২০ জন ও অজ্ঞাত ১০-১৫ জনের বিরুদ্ধে রোববার রাতে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। অন্য মামলার বাদি মোশারফ হোসেন বলেন, হামলাকারীরা আমার বাড়ির তিনটি টিনের ঘর কুপিয়ে তছনছ করেছে, ঘরের মধ্যে থাকা আসবাবপত্র ভাংচুর, ইলেকট্রনিক পণ্য, নগদ টাকা, স্বর্ণলঙ্কার লোটপাটসহ অনন্ত ১০ লাখ টাকার ক্ষতি করে হামলাকারীরা। ওই ঘটনায় রোববার রাতে মোশারফ হোসেন বাদি হয়ে আজগরসহ ৩০ জন ও অজ্ঞাত ১০-১৫ জনের বিরুদ্ধে আলফাডাঙ্গা থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। একই ঘটনায় মামলা করেছেন ওই গ্রামের মানিক সরদারের মেয়ে রাবেয়া বেগম বলেন, তাদের বাড়ি ও আসবাবপত্র ভাংচুর, স্বর্ণলঙ্কার লোটপাটসহ মোট ১০ লাখ টাকার ক্ষতি করেছে হামলাকারীরা। এ নিয়ে কথা বলতে ইউপি সদস্য আজগর আলীর সাথে যোগাযোগ করতে তার ব্যবহৃত মোবাইলে একাধিক বার চেষ্টা করলে বন্ধ পাওয়া যায়। আজগর আলীর সামর্থক জাহাঙ্গীর মোল্যার স্ত্রী শিরিনা বেগম বলেন, তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে কামাল মোল্যা ও আকবর মোল্যার পক্ষের লোকজন শনিবার ভোররাতে আগে আমাদের বাড়িতে হামলা করে হামলা করে ঘরবাড়ি ভাংচুর করে। এ ঘটনার পর তাদের বাড়িতে হামলা করা হয়েছে। পাচুড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এমএম মিজনুর রহমান বলেন, আমি কখনই গোন্ডগোলের পক্ষে নেই। দোষীদের শাস্তি সর্বচ্চ শাস্তি হোক আমি সেটাই চাই। খালিদ মোশররফ রঞ্জু বলেন, আমার লোকজনের ওপর আজগর মেম্বারের লোকজন হামলা করে প্রায় অর্ধশত বাড়ি ভাংচুর করেছে। আসবাবপত্র ভাংচুর,নগদ টাকা ও স্বর্ণলঙ্কার লোটপাটসহ প্রায় কোটি টাকার ক্ষতি করেছে। হামলাকারীদের সর্বচ্চ শাস্তি দাবি করছি। ওসি মো.আবু তাহের বলেন, আলফাডাঙ্গা উপজেলার শেষ সীমানা পাচুড়িয়া ইউনিয়নের উত্তর চরনারানদিয়া গ্রাম। শনিবার ভোরে হামলার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। এ ঘটনায় তিনটি মামলা হয়েছে। হামলাকারীদের মধ্যে দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে।