মজলিশ আউলিয়া খান জামে মসজিদটি ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলাধীন আজিমনগর ইউনিয়নের পাতরাইল গ্রামে অবিস্থিত। ১৩৯৩ থেকে ১৪১০ খ্রিঃ মধ্যে বাংলার সুলতান গিয়াস উদ্দিন আযম শাহ এর আমলে এই মসজিদটি নির্মাণ করেন মজলিশ আব্দুল্লাহ খান আউলিয়া। প্রাচীন স্থাপত্য শিল্পের এক মনোমুগ্ধকর নিদর্শন এই মসজিদটি। স্থানীয় ভাবে ‘মজলিশ আউলিয়া মসজিদ’ বা পাতরাইল গায়েবি মসজিদ নামেই পরিচিত। মসজিদটির পাশেই স্থানীয় জনসাধারণের পানীয় জলের সমস্যা নিরসন ও ইবাদতের জন্য মসজিদটির পাশেই ৩২.১৫ একর জমির উপরে একটি দিঘী ঐ সময় খনন করা হয়। মসজিদের সামনের বিশাল এই দিঘীটির কারণে কাগজে কলমে এলাকার নাম পাতরাইল থাকলেও ক্রমান্বয়ে এলাকাটির নাম জনশ্রুতিতে ‘দিঘিরপাড়’ নামেই সুপরিচিত হয়ে আছে। মসজিদটি ঘুরে দেখা গেছে, রাজশাহীর বাঘা মসজিদের নির্মাণ শেলীর আদলে ১০টি গুম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদটির অভ্যন্তরে পূর্বদিক থেকে পাঁচটি দরজার মাধ্যমে প্রবেশ করা যায়। স্বতন্ত্রভাবে দন্ডায়মান চারটি পাথরের স্তম্ভ গঠিত একটি স্তম্ভসারি মসজিদের ভেতরকে দুইটি ‘আইল’এ বিভক্ত করেছে। উত্তর ও পশ্চিম দেয়ালে দুইটি করে দরজা রয়েছে। মসজিদের দেয়াল প্রায় দুই মিটার পুরু এবং ভেতরের পরিমাপ (২১.৭৯ মিটার ও ৮.৬০ মিটার)। পূর্ব দেয়ালের পাঁচটি দরজা বরাবর পশ্চিম দেয়াল অভ্যন্তরে পাঁচটি ‘মিহরাব’ রয়েছে। কেন্দ্রীয় প্রবেশপথের দুই খিলানের মধ্যবর্তী অংশ চৌচালা ভল্ট সদৃশ, অন্যদিকে পার্শ্ববর্তী দরজার সংশ্লিষ্ট অংশ দোচালা ভল্ট সদৃশ। মসজিদটির নকশায় পোড়ামাটির অলংকার এবং দেয়ালের গায়ে আঙ্গুর লতার মতো নকশা অংকিত। এই মসজিদটির সাথে ‘লখনৌর ছোট সোনা মসজিদ’ ও রাজশাহীর ‘বাঘা মসজিদ’ এর যথেষ্ট মিল রয়েছে।এই শৈলীগত সাদৃশ্যতার জন্য মসজিদটিকে ‘হোসেন শাহী ইমারত’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে প্রত্নতত্ত বিভাগ। স্থানীয় বাসিন্দা মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, মসজিদটি ছাদবিহীন ছিল। এরশাদ সরকারের সময় সরকারিভাবে ছাদ ও গম্বুজ করা হয়। মজলিশ আউলিয়া মসজিদটি দেখতে প্রতিদিনই এখানে অসংখ্য মানুষ আসেন। প্রতিদিন শতাধিক মানুষের পদচারণায় দিঘির চারপাশসহ মসজিদ প্রাঙ্গনটি মুখর হয়ে উঠে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে নান্দনিক নির্মাণশৈলীর এই মসজিদটিকে ঘিরে একটি লাভজনক পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠতে পারে। ভাঙ্গার সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ত প্রফেসর এ.বি.এম.মিজানুর রহমান বলেন, দক্ষিনাঞ্চলের অন্যতম স্থাপত্য নির্মাণ শৈলী মজলিশ আউলিয়া মসজিদ। এই মসজিদটি বর্তমানে প্রত্নতত্ত অধিদপ্তরের অধীনে থাকলেও গত চার দশকে তেমন কোন ধরনের সংস্কারের ছোঁয়া লাগেনি। বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ এই মসজিদটির সৌন্দয্য উপভোগ করতে এবং নামাজ আদায় করতে আসছে। সরকার উদ্যোগী হলে এই মসজিটি ঘিরেই গড়ে উঠতে পারে একটি আকর্ষনীয় পর্যটন কেন্দ্র, এই অঞ্চলের মানুষেরা এমনটিই দাবী করছে।