ঢাকার আশুলিয়ায় ভাড়া বাসার ছয় তলা থেকে পড়ে মারা গেছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) আইন ও ভূমি ব্যবস্থাপনা বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী নওরিন নুসরাত। মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) সন্ধ্যা ৬টার দিকে ঢাকার আশুলিয়ায় পলাশবাড়ির নামবাজারের পাশে বিজয়নগর রোডে আব্দুর রহিমের মালিকানাধীন বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। পারিবারিক কলহের কারণে তার মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি পরিবারের। তবে নওরিন আত্মহত্যা করেছে বলে দাবি করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় পুলিশ অপমৃত্যু মামলা করেছে। এ ছাড়া ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ বুধবার (৯ আগস্ট) বিকেল ৪টার দিকে পরিবারের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে। পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, নওরিন টাঙ্গাইল সদর উপজেলার ইসলামবাগ গ্রামের খন্দকার নজরুল ইসলামের মেয়ে। গত ২০ জুলাই চাঁদপুরের মতলব উত্তর থানার কলাকান্দা গ্রামের মৃত জহিরুল আলমের ছেলে ইব্রাহিম খলিলের সঙ্গে নওরিনের বিয়ে হয়। তিনি স্বামীর সঙ্গে আশুলিয়ায় ভাড়া বাসায় থাকতেন। তার স্বামী ভলভো ব্যাটারি কোম্পানিতে চাকরি করেন। বিয়ের কয়েকদিন পরেই তিনি নওরিনের বিয়ের আগের সম্পর্কের বিষয়ে অবগত হন। এরপর থেকে তাদের মধ্যে মনোমালিন্য ও ঝগড়া শুরু হয়। নওরিনকে পড়াশোনা করতে দিতেন না স্বামী। এমনকি তার রান্নাও খেতেন না। নিজেই রান্না করে খেতেন। এছাড়াও সম্প্রতি নওরিনকে ছোটলোক বলেছেন তার শাশুড়ি। এসব নিয়ে মনোমালিন্যের কারণেই তার মৃত্যু হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সচেতন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বলছেন, নওরিন আত্মহত্যা করেছেন নাকি পেছনে অন্য কোনো কারণ আছে সেটি খতিয়ে দেখা উচিত। এদিকে নওরিনের মৃত্যুর ঘটনায় তার পরিবারের পক্ষ থেকে এখনো মামলা করা হয়নি। তবে মামলার প্রস্ততি চলছে। মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে বিকেল ৪টার দিকে নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। নওরিনের বাবা খন্দকর নজরুল ইসলাম বলেন, পুলিশ আমাদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করেছে। আমরা মরদেহ নিয়ে বাড়ি যাচ্ছি। এ ঘটনায় মামলার প্রক্রিয়া চলছে। আশুলিয়া থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) জিএম আসলামুজ্জামান বলেন, ময়ানাতদন্ত শেষে মেয়েটির মরদেহ পরিবারের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে। তারা মরদেহ নিয়ে চলে গেছেন। পরিবারের পক্ষ থেকে কেউ মামলা না করায় অপমৃত্যু মামলা করা হয়েছে। নওরিন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির শুরু থেকেই বিভিন্ন সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিবেটিং সোসাইটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তিনি কনজুমার ইয়ুথ বাংলাদেশ ইবি শাখার আইন সম্পাদক ছিলেন। এছাড়াও ইবি ক্যারিয়ার ক্লাব, তরুণ কলাম লেখক ফোরামসহ বিভিন্ন সংগঠনের বিভিন্ন পদে নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন। নওরিনের সহপাঠী আবু সোহান বলেন, নওরিন খুব মেধাবী ছিল। সবসময় হাসি খুশি থাকতো। সবার সঙ্গে বন্ধুসুলভ আচরণ করতো। সে মানুষের জন্য কাজ করতো। একজন ভালো সংগঠক ও সেরা বিতার্কিক ছিল। তার মৃত্যুতে আমরা মর্মাহত হয়েছি!