বাংলাদেশ রেলওয়ে ৪ টি বিভাগের মধ্যে লালমনিরহাট অন্যতম বিভাগ। এই বিভাগের জন্য ১৯৬১ সালে আমেরিকা, কানাডা, হাঙ্গেরি ও দক্ষিণ কোরিয়া থেকে ২২শ থেকে ২৯শ সিরিজের আমদানি করা ৩৩ টি ইঞ্জিন। পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের লালমনিরহাট বিভাগের জন্য আনা হয়েছিলো তা ১৯৬১ সালে। ১৯৮১ সালের পর আর কোন ইঞ্জিন নতুন ভাবে কেনা হয়নি এ বিভাগে। তবে সর্বশেষ ২০১৪ সালে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের চট্টগ্রাম বিভাগের জন্য আনা হলেও ২৯শ সিরিজের (এমইআই-১৫) ১ টি ইঞ্জিন পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের লালমনিরহাট বিভাগকে দেওয়া হয়। এসব ইঞ্জিনের ইকোনমিক আয়ুস্কাল ২০ বছর নির্ধারিত করা হয়েছিলো। কিন্তু বর্তমান ওই সব ইঞ্জিনের আয়ুস্কাল উত্তীর্ণ হয়ে গেছে প্রায় ৩৪ বছর থেকে ৪৬ বছর পর্যন্ত। পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের লালমনিরহাট বিভাগীয় দফতর সূত্র জানান, লালমনিরহাট রেলওয়ে বিভাগের ৬ টি সেকশন, স্টেশনের সংখ্যা- ৭ টি, ট্রেনের সংখ্যা- ৬৬ টি, ট্রেন চলাচল বন্ধ- ২৬ টি, বর্তমান ট্রেন চলছে- ৪০ টি। ট্রেনগুলো হচ্ছে আন্তঃনগর ১৮ টি, মেইল কমিউটার ২৯ টির মধ্যে চলছে ২১ টি, বন্ধ আছে ৮ টি। নোকাল ট্রেন ২৪ টির মধ্যে চলছে ৬ টি, বন্ধ আছে ১৮ টি। এতে ইঞ্জিন প্রয়োজন- ৬২ টি, বর্তমান আছে মাত্র- ৩২ টি, তার মধ্যে ৪৬ বছর মেয়াদত্তীর্ণ ইঞ্জিন- ৩১টি। এসব ট্রেনের ইঞ্জিন ১৯৬১ সালে আমেরিকা থেকে ২২শ সিরিজের (এমইজি-৯) ১১ টি, ১৯৬৯ সালে কানাডা থেকে ২৩শ সিরিজের (এমইএম-১৪) ৮ টি, ফের কানাডা থেকে ১৯৭৮ সালে ২৪ শ সিরিজের (এমইএম-১৪) আরও ৯ টি এবং ১৯৮১ সালে হাঙ্গেরি থেকে ৩৩শ সিরিজের (এমএইচজেড-৮) ৩ টি ইঞ্জিন পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের লালমনিরহাট বিভাগের জন্য আনা হয়েছিল। এরপর আর কোনও ইঞ্জিন কেনা হয়নি। তবে ২০১৪ সালে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের চট্টগ্রাম বিভাগের জন্য আনা ২৯শ সিরিজের (এমইআই-১৫) একটি ইঞ্জিন পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের লালমনিরহাট বিভাগকে দেয়া হয়। এসব ইঞ্জিনের ইকোনোমিক আয়ুষ্কাল ২০ বছর নির্ধারিত। কিন্তু আমেরিকা থেকে আনা ১১ টির আয়ুষ্কাল উত্তীর্ণ হয়ে গেছে ৩৪ বছর আগেই। কানাডা থেকে প্রথম ধাপে আনা ৮ টির আয়ুষ্কাল উত্তীর্ণ হয়ে বর্তমানে ৪৬ বছর হয়েছে। অর্থাৎ এগুলো মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে ২৬ বছর আগেই। দ্বিতীয় ধাপে কানাডা থেকে আনা ৯ টির আয়ুষ্কাল উত্তীর্ণ হয়ে ৩৭ বছর হয়েছে। এগুলোরও মেয়াদ পেরিয়েছে ১৭ বছর আগে। হাঙ্গেরি থেকে আনা ৩ টির আয়ুষ্কাল উত্তীর্ণ হয়ে ৩৪ বছর হয়েছে। এ ৩ টি ইঞ্জিনের মেয়াদ ফুরিয়েছে ১৪ বছর আগে। লালমনিরহাট রেলওয়ে বিভাগ জানান, ৬ টি সেকশনে আয়ুষ্কাল উত্তীর্ণ ইঞ্জিন দিয়েই ৪০ টি ট্রেন পরিচালনা করা হচ্ছে। এর মধ্যে ইঞ্জিন ও ট্রেন চালক তথা ক্রু সঙ্কটের কারণে ২৬ টি ট্রেন বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের এ ডিভিশনে মাত্র একটি ইঞ্জিন ছাড়া অবশিষ্ট ৩১ টিই ইকোনোমিক আয়ুষ্কাল পেরিয়ে মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেছে। এগুলোর মধ্যে ১৮ টি দিয়ে ট্রেন পরিচালনা করা হচ্ছে এবং ৬ টি ইঞ্জিন পরিত্যক্ত অবস্থায় কেন্দ্রীয় মেরামত কারখানায় (কেলোকা) পড়ে রয়েছে। এছাড়া যাত্রীবাহী ও মালবাহী ট্রেন চালনায় অনুপযোগী বাকি ৮ টি দিয়ে শান্টিং কাজ পরিচালনা করা হচ্ছে। সবক’টি ট্রেন পরিচালনার জন্য রেলওয়ের নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী প্রতিদিন ৬২ টি ইঞ্জিন প্রয়োজন। অথচ লালমনিরহাট বিভাগীয় রেলওয়ের কাছে আছে মাত্র ৩২ টি ইঞ্জিন। এরমধ্যে ৬ টি মেরামত অযোগ্য হওয়ায় কেলোকায় পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। ট্রেন চালনায় অনুপযোগী ৮ টি ইঞ্জিন শান্টিং কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। অবশিষ্ট ১৮ টি ইঞ্জিন তাও আবার মেয়াদত্তীর্ণ কোনও রকম জোড়াতালি দিয়ে ৪০ টি ট্রেন পরিচালনা করা হচ্ছে। পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের লালমনিরহাট বিভাগীয় সহকারী যন্ত্র প্রকৌশলী শাহিনুর হক অপু জানান, ‘ক্রু’ স্বল্পতার কারণে ট্রেন পরিচালনার জন্য অপরিহার্য ‘ক্রু’ লিংক যথাযথভাবে বজায় রাখা সম্ভব হচ্ছে না। এমনকি দুর্ঘটনা সংঘটিত হলে কিংবা রিলিফ ট্রেন পাঠানোর প্রয়োজন হলে অন্য কোনও একটি ট্রেন বাতিল করতে হচ্ছে কিংবা অস্বাভাবিক বিলম্ব করতে হচ্ছে। তাছাড়া কোনও ‘ক্রু’ অসুস্থ্ হয়ে পড়লে কিংবা বিশেষ প্রয়োজনে ছুটিতে গেলেও ট্রেন বাতিল করার উপক্রম হচ্ছে। দ্রুত ‘ক্রু’ নিয়োগ এবং ইঞ্জিন সংযোজন করা না গেলে চলতি বছর টাইম টেবিল ৫০ নম্বর অনুযায়ী ট্রেন পরিচালনা করা অসম্ভব হয়ে পড়বে। সমস্যা সমাধানে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের (রাজশাহী) প্রধান যন্ত্র প্রকৌশলীকে এসব সমস্যা উল্লেখ করে একাধিকবার চিঠি পাঠানো হয়েছে। কিন্তু আশানুরূপ সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না বিধায় জোড়া তালি দিয়ে চলছে এই রেল বিভাগ।