বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে পূর্ণিমার জোয়ারের অতিরিক্ত পানিতে পৌরশহরসহ ২০ গ্রাম প্লাবিত হয়ে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। হুমকির মুখে পড়ছে রাস্তা-ঘাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বেড়িবাঁধসহ বেশ কিছু বাড়িঘর। এনিয়ে এই অঞ্চল দুবার প্লাবনের কবলে পড়লো। তাই শহর রক্ষা বাঁধসহ সন্ন্যাসী হয়ে ঘষিয়াখালী পর্যন্ত নদীর দু’পাড়ের স্থায়ী ভেড়িবাঁধের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। বৃহস্পতিবার (৩ আগস্ট) সরেজমিনে দেখা গেছে, উপকূলীয় অঞ্চল উপজেলার ১৬টি ইউনিয়নসহ পৌরসভায় গত দুই দিন ধরে পূর্ণিমার জোয়ারে অতিরিক্ত পানিতে পানগুছি নদীর তীরবর্তী মোরেলগঞ্জ পৌর শহরের ফেরীঘাট সংলগ্ন এলাকা, বারইখালীর কাশ্মীর, বলইবুনিয়ার শ্রেণীখালী, বহরবুনিয়ার ফুলহাতা, ঘষিয়াখালী, মোরেলগঞ্জ সদর ইউনিয়নের গাবতলা গ্রামের নতুন করে আধা কিলোমিটার কার্পেটিং রাস্তা ধসে গেছে। হোগলাবুনিয়ার বদনীভাঙ্গা, সানকিভাঙ্গা, পাঠামারা, খাউলিয়া বাজারের ব্রিজসহ হুমকির মুখে অম্বিকা চরণ লাহা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, বদনীভাঙ্গা আর্দশ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৮০নম্বর বি পাঠামারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বহরবুনিয়ার এসবি মাধ্যমিক বিদ্যালয় নদীর তীরবর্তী বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এদিকে দীর্ঘদিন ধরে পানগুছি নদী অব্যাহত ভাঙনের ফলে ফসলি জমি, বাড়িঘর গাছপালা বিলীন হয়ে নদীগর্ভে চলে যাওয়ায় নিঃস্ব হয়ে পড়েছে শত শত পরিবার। পৌর শহরের কাপুড়িয়া পট্টির কাঁচা বাজার কলেজ রোড, কেজি স্কুল সডক, উপজেলা প্রশাসনিক চত্বর পানিতে তলিয়ে গিয়ে শহরের দোকানিদের ক্রয়-বিক্রয় দিনে ৩ ঘন্টা বন্ধ হয়ে পড়েছে। জনজীবন হয়ে পড়েছে বিপর্যস্ত। বারইখালী গ্রামের মোস্তাফিজুর রহমান নান্নু, আবুল কালাম খোকন পঞ্চকরন গ্রামের জাহানারা আক্তার, খুকি বেগম জানান, জোয়ারের পানি ঢুকে ঘরবাড়ি তলিয়ে গেছে। চুলায় পানি উঠায় দুপুরের রান্না বিকেলে করতে হয় । অপরদিকে মোরেলগঞ্জ শহরের ফল ব্যবসায়ী লাল মিয়া, কাপড় ব্যবসায়ী ইব্রাহিম শেখ বলেন, দুপুর ১২টা বাজলেই পানির চাপ বেড়ে যায় দোকানে ঢুকে পড়ে পানি। ৩ ঘণ্টা বসে থাকতে হয়। গ্রাম থেকে আশা ক্রেতারা চলে যায় তড়িঘড়ি করে। এ ভোগান্তির শেষ কোথায়?। এ বিষয়ে মোরেলগঞ্জ পৌরসভার মেয়র অ্যাডভোকেট মনিরুল হক তালুকদার বলেন, শুধু শহর রক্ষা বাঁধ নয়। ইতোমধ্যে গাবতলা হয়ে ঘষিয়াখালী পর্যন্ত স্থায়ী ভেরিবাঁধের ট্রেন্ডার হয়েছে। ২০১৭ সালে এ প্রকল্পের প্রস্তাবনা হয়েছে। বাস্তবায়নের অপেক্ষায় শহরবাসী। বেড়িবাঁধের কাজ শুরু হলে এ সমস্যায় থাকবে না পৌরবাসী। নদীর তীরবর্তী সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. হুমায়ুন কবির মোল্লা, বারইখালীর চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল খান মহারাজ, হোগলাবুনিয়ার বীর মুক্তিযোদ্ধা আকরামুজ্জামান, বহরবুনিয়ার চেয়ারম্যান রিপন হোসেন তালুকদার জানান, গত দুদিনের পানির চাপে নদীর তীরবর্তী তাদের ইউনিয়নগুলো অনেক কাঁচা পাকা রাস্তা ভেঙে পড়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দেবরাজ পঞ্চকরণের অস্থায়ী বেড়িবাঁধ হুমকির মুখে পড়েছে। এভাবে এক সপ্তাহ পানির চাপ থাকলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়বে গ্রামবাসীরা। বাগেরহাট জেলা পানিউন্নয়ন বোর্ডে নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাসুম বিল্লাহ বলেন, মোরেলগঞ্জ শহর সংলগ্ন রামপাল-মোংলা হয়ে ঘষিয়াখালী পর্যন্ত ৯৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের জন্য সম্ভাব্যতা সমীক্ষার জন্য মন্ত্রাণালয়ে প্রস্তাবনা রয়েছে। এ ছাড়াও ইতোমধ্যে পানগুছি নদীর ভাঙন হতে বাগেরহাট জেলা সদর সংলগ্ন এলাকা সংরক্ষণ এবং বিষখালী নদী পুনঃখনন শীর্ষক প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে।