ভারতের বিপক্ষে সিরিজ শেষ। কিন্তু এখনও ক্ষুধা মেটেনি মেয়েদের ক্রিকেটে ইতিহাস গড়ে প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরি করা ফারজানা হক পিংকির। রোববার তার বারবার মনে হয়েছে যদি আরেকটি সুযোগ পেতাম! ইশ, আজও (রোববার) যদি ব্যাট করতে পারতাম। একান্ত সাক্ষাৎকারে ফারজানা জানালেন, সবাই সমর্থন দিলে বাংলাদেশ সেরা চারের একটি দল হবে-
প্রশ্ন : সেঞ্চুরির পরের দিনটা কেমন গেল?
ফারজানা : কী হবে, কী হচ্ছে এসব নিয়ে আমি কখনই চিন্তা করি না। সেঞ্চুরি করব এটা আমার মাথাতেই ছিল না। শুধু প্রক্রিয়া ঠিক রেখেছি। সেঞ্চুরির পরও তেমন কিছু ভাবিনি। আজ (রোববার) মনে হচ্ছে কিছু একটা করে ফেলেছি।
প্রশ্ন : সতীর্থ ও বন্ধুরা কীভাবে এই অর্জনকে দেখছেন?
ফারজানা : বন্ধুদের কথা ভোলার নয়। ব্যাট করতে খুবই পছন্দ করি। আমার কয়েকজন বন্ধু আছে তারা সব সময় অনুপ্রেরণা দেয়। তারা কয়েকদিন ধরেই বলছিল তুই সেঞ্চুরি করবি। আর কোচ হাসান স্যার বলেছিলেন পিংকি তুমিই একটা বড় ইনিংস খেলতে পারো। আমার সতীর্থ, বন্ধু ও কোচরা কয়েকদিন ধরেই এমন কথা বলে আসছিল। তবে আমি ভাবিনি যে সেঞ্চুরি করে ফেলব।
প্রশ্ন : সেঞ্চুরির পর কাকে সব থেকে প্রথম মনে পড়ছে?
ফারজানা : পরিবারের কথা বলতেই হয়। তবে সবার আগে সেই কারিগরের কথা মনে পরে, তিনি আমার দাদি। এখনও বেঁচে আছেন এবং অনেক বেশি খুশি। আমার বাবার সঙ্গে অনেক লড়াই করে আমাকে সমর্থন দিয়েছেন। ২০০৬/০৭ এ মেয়েদের ক্রিকেট আসলে কিছুই না। তখন থেকেই দাদির অনুপ্রেরণাতেই আমি এখানে। তৈরি হয়েছি বিকেএসপিতে, ২০০৮ সালে ভর্তি হয়েছিলাম। সেরা গুরুকে পেয়েছিলাম তিনি হলেন মানজিৎ স্যার। সেঞ্চুরির পর তাকে খুবই মনে করেছি। আমাকে গড়েছেন তিনিই। এছাড়া আরও অনেকে তো আছেই।
প্রশ্ন : ওয়ানডেতে কি আরও সেঞ্চুরি করা সম্ভব?
ফারজানা : এই সিরিজে ব্যাট করার জন্য মুখিয়ে ছিলাম। এই সিরিজে খেলে এত বেশি মজা পাচ্ছিলাম যে তা আগে কখনই পাইনি। আমি ভাবছিলাম ইশ, যদি আজও ব্যাট করতে পারতাম। আরেকটি সুযোগ পেতাম। আমি কতটা ক্ষুধার্ত বলে বোঝানো যাবে না। আরও একটা লক্ষ্য আছে। সেগুলো নিয়ে পরিশ্রম করে এগোতে চাই। বাংলাদেশ দলকে আরও বড় কিছু দেওয়ার ইচ্ছা।
প্রশ্ন : বিসিবি সভাপতিসহ অন্য পরিচালকরা আপনাকে কী বললেন?
ফারজানা : নাজমুল হাসান স্যারসহ সবাই আমাদের খুবই খবর রাখেন। অনুপ্রেরণা দেন। তবুও বলতে থাকেন আমি মেয়েদের কিছুই দিতে পারিনি। এটাই বড় পাওয়া। আমাদের বলেছেন, আরও বড় কিছু দেখতে চাই।
প্রশ্ন : বোনাসের টাকা দিয়ে কিছু করার পরিকল্পনা আছে কি না?
ফারজানা : আমি ঘুরতে পছন্দ করি না। আমার কিছু পছন্দের মানুষ আছে। গতকালই (শনিবার) আমি গ্র্যাউন্ডসম্যানদের বলেছিলাম ভাইয়াদের মতো হয়তো দিতে পারব না। কিন্তু নিরাশ করব না। আমি ম্যাচ ফি’র ৩০ ভাগ টাকা দিতে চেয়েছিলাম। সেই হিসাবে ২০ হাজার টাকা আসে, পেলেই দিয়ে দেব।
প্রশ্ন : ক্যারিয়ারের কোন ইনিংসটা সেরা?
ফারজানা : ২০১৮ সালে সেমিফাইনালে যে ইনিংসটা খেলেছিলাম টি ২০তে সেটা আমার ক্যারিয়ারের অন্যতম একটা অংশ। আর দশ বছরের ক্যারিয়ারে ভারতের বিপক্ষে এই সেঞ্চুরিটা খুবই তৃপ্তি দিয়েছে। নিগার বলত যে সেই আগে সেঞ্চুরি করবে, আমি আগে করে দেখালাম!
প্রশ্ন : বাংলাদেশের সমর্থকদের উদ্দেশে কী বলবেন?
ফারজানা : আমরা আজ ভালো করেছি বলেই আপনারা সমর্থন দেবেন এমনটা না। আমাদের পাশে থাকেন, সমর্থন দেন, মিডিয়ার উদ্দেশে বলব অনুপ্রেরণাদায়ক কিছু লিখতে থাকেন। আমরা আপনাদের নিরাশ করব না। এভাবে চললে সেরা চারের একটি দল হয়ে যাব।