বহুল আলোচিত ঢাকায় ক্যাসিনো কান্ডের কারনে ২০১৯ সাল থেকে আদালতের নির্দেশনার কারনে একে একে বন্ধ হয়ে যায় বিভিন্ন ধরনের জুয়ার আসর। তবে দুই একটি অভিজাত ক্লাবে ক্যাসিনো না চললেও ছোট পরিসরে শুরু করা হয়েছে হাউজি নামের এই জুয়ার আসরটি। আর এই অজুহাত দেখিয়ে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে দীর্ঘ চার বছর পর বড় পরিসরে আবার টাঙ্গাইল স্টেডিয়ামে শুরু হয়েছে এই হাউজি খেলা। তবে ঢাকায় বন্ধ হওয়া ক্লাবগুলোর তালা খোলার আগে ক্লাবগুলোকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে অঙ্গীকারনামা জমা দিতে হবে। আরামবাগ ক্রীড়া সংঘের সাধারণ সম্পাদক ইয়াকুব আলী বলেছেন, ক্যাসিনো-কান্ডে জড়িতরা ক্লাবের কোনো পদেই আসতে পারবে না বলে জানিয়েছে র্যাব। রাত ১১টার পর খেলোয়াড়, কোচিং স্টাফ ছাড়া বহিরাগত কেউ ক্লাবে অবস্থান করতে পারবে না। নতুন কমিটি করতে হবে। আর কখনো ক্যাসিনো চালু করা যাবে না, এমন শর্তও দিয়েছে র্যাব। তারা সব মেনে চলব বলে জানিয়েছি। মঙ্গলবার রাত থেকে টাঙ্গাইল জেলা ক্রীড়া সংস্থার ব্যানারে এ খেলা শুরু হয়েছে। এদিকে সুধিসমাজের লোকজন জানিয়েছেন, এমনিতেই দেশে আর্থিক সংকট। আর এই সংকটের মধ্যে শিল্প মেলার নামে বাণিজ্য মেলা শুরু হয়েছে। আর এর পাশাপাশি হাউজি খেলার আয়োজন করে জেলার বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষদের নি:শ্ব করে দিয়ে কিছু কিছু লোক ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হচ্ছেন। বুধবার রাতে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, টাঙ্গাইল আউটডোর স্টেডিয়ামে মাস ব্যাপি চলছে শিল্প ও বানিজ্য মেলা। আর মূল স্টেডিয়ামের ভেতরে চলছে হাউজি খেলা। জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে এই হাউজি খেলায় অংশ নিচ্ছেন ব্যবসায়ী, চাকুরিজীবীসহ শিক্ষার্থীরা। কেউ নি:শ্ব হচ্ছেন আবার কেউ লাভবান হয়ে উল্লাস করছেন। মির্জাপুর থেকে আসা আলমগীর হোসেন নামের এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী জানান, তিনি এই হাউজি খেলে বিগত সময়ে প্রায় সাড়ে চার লাখ টাকা খুইয়েছেন। দীর্ঘদিন এই হাউজি খেলা বন্ধ ছিল। তখন আর তিনি খেলতে যাননি কোথাও। দীর্ঘদিন পর আবার এই খেলা শুরু হওয়ায় তিনিসহ কয়েকজন এসেছেন এখানে। করটিয়া ইউনিয়নের সোহরাব হোসেন জানান, তিনি দীর্ঘ চার বছর পর হাউজি খেলতে এসেছেন এই স্টেডিয়ামে। তার লাভের চেয়ে লোকসানের অংকটাই বেশি। এ নিয়ে পরিবারের সাথেও মনোমালিন্য হয়, তারপরও তিনি এসেছেন হাউজি খেলতে। শহরের পার্ক বাজারের কাঁচামাল ব্যবসায়ী রুহুল আমীন জানান, তিনি বিগত সময়ে হাউজি খেলে অনেক টাকা খুইয়েছেন। একারনে তার একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। এরপর থেকে তিনি পার্ক বাজারে কাঁচা মালের ব্যবসা শুরু করেছেন। কিন্তু আবার স্টেডিয়ামে এই হাউজি খেলা শুরু হয়েছে শুনে তিনি এসেছেন দুই/তিন রাউন্ড খেলতে। কিন্তু তিনি শেষ পর্যন্ত ৯ রাউন্ড খেলেছেন। কিন্তু কোন লাভ হয়নি, বরং তার ৯০০ টাকা লোকসান হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলা ক্রীড়া সংস্থার একজন কর্মকর্তা জানান, স্টেডিয়ামে হাউজি খেলার অনুমতি চেয়ে মূলত সংস্থার পক্ষ থেকে আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু তাদের অনুমতি না দিয়ে শিল্প ও বানিজ্য মেলা কর্তৃপক্ষকে এই হাউজি খেলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে এই হাউজি খেলা ক্রীড়া সংস্থার ব্যানারে চালানো হবে বলে উচ্চ পর্যায় থেকে সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছে। তাই বাধ্য হয়ে সংস্থার ব্যানারে এ খেলা শুরু হয়েছে। এদিকে এই হাউজি খেলাকে কেন্দ্র করে স্টেডিয়ামে জেলার বেশ কয়েকজন কুখ্যাত জুয়ারু ও ক্যাসিনো পরিচালনাকারি নেতৃবৃন্দরা একত্রিত হয়েছিলেন। এসময় তারা এই হাউজি খেলায় পাঠনার হওয়ার জন্য বিভিন্ন জনের সাথে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এদের মধ্যে কেউ কেউ বলছেন, এই হাউজি খেলাকে সামনে রেখে গোপনে কোন স্থানে ওয়ান টেন নামের বড় কোন জুয়ার আসর বসানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন জানান. রোববার (৯ জুলাই) হাউজি খেলার বিষয়ে একটি আলোচনা হয়েছে যে, এখান থেকে কে কত টাকা পাবে। এর মধ্যে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, প্রশাসনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও প্রভাবশালীরাও রয়েছেন এই তালিকায়। তবে কাকে কত টাকা দিতে হবে এটি তিনি জানেন না। তবে ব্যক্তিগত ছাড়াও নামে মাত্র ক্রীড়া সংস্থা এবং সরকারি একটি ফান্ডে কিছু টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্তও হয়েছে ওই আলোচনায়। টাঙ্গাইল ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মির্জ মঈনুল ইসলাম লিন্টু বলেন, সংস্থার উদ্যোগে শিল্প ও বানিজ্য মেলার আয়োজন করা হয়েছে। এর পাশাপাশি মঙ্গলবার থেকে ১৫দিনের অনুমতি নিয়ে হাউজি খেলা শুরু করা হয়েছে। আর এই হাউজি খেলার আয় থেকে সংস্থাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তি ও প্রশাসনকেও দিতে হবে বলে স্বীকার করেন। ঐতিহ্যবাহী টাঙ্গাইল ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশীদ বলেন, ক্লাব হচ্ছে বিনোদনের স্থান। কিন্তু এই বিনোদনকে পুজি করে ক্লাবগুলোতে অনৈতিক কোন কাজ বা জুয়ার আসর হবে এটা কোনভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। তবে হাউজি খেলাটি যদি বড় পরিসরে বা জুয়ায় পরিনত হয় তা কোন ভাবেই চলা ঠিক নয়। আর দেখতে হবে এই হাউজি খেলার আয়ের যে অর্থ তা খেলোয়ারদের উন্নয়নে ব্যবহৃত হচ্ছে নাকি ব্যক্তিগত পকেটে যাচ্ছে সেটাও খতিয়ে দেখা উচিৎ। এই অর্থ থেকে যদি ব্যক্তিগত ভাবে কেউ লাভবান হয় তাহলে এটি কোনভাবেই চলতে দেওয়া ঠিক হবে না। টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি মো. জসীম উদ্দিন হায়দার বলেন, ক্রীড়া সংস্থার কোন ফান্ড নেই। তাই ফান্ড সংগ্রহের জন্য শিল্প ও বানিজ্য মেলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তারপরও ফান্ড সংগ্রহ কম হওয়ায় হাউজি খেলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।