ঠাকুরগাঁও জেলা দেশের উত্তরের কৃষি নির্ভর একটি জেলা। আমন নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন ঠাকুরগাঁও জেলার কৃষকেরা। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা ও জেলার বিভিন্ন স্থানে গিয়ে দেখা যায় কিছু স্থানে চারা গাছ তুলছেন তারা। আবার কিছু স্থানে গিয়ে দেখা যায় চারা রোপন করতে শুরু করেছেন কৃষক। গত কয়েকদিনে বৃষ্টির পানির কারনে কৃষকেরা সহসাই চারা রোপন করতে পারছেন। এছাড়ও উচু জমিগুলোতে কৃষকদের শ্যালোমেশিন, বরেন্দ্র গভীর নলকূপের সাহায্যে পানি দিতে দেখা যায়। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার দানারহাট, বরুনাগাঁও, শীবগঞ্জ, নারগুন, বেগুনবাড়ি, খোঁচাবাড়ি ও ঠাকুরগাঁও জেলার পীরগঞ্জ, হরিপুর, বালিয়াডাঙ্গী, রানীশংকৈল উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, আমনের চারা উঠানো ও রোপন করার দৃশ্য। এতে দল বেঁধে শ্রমিকেরা আমনের চারা তুলছেন, আবার কোথায় চারা রোপন করছেন। এদের মধ্যে নারী শ্রমিকদের চারা তুলে রোপনের দৃশ্য অনেক সুন্দর। জনপ্রিয় বেশ কয়েকটি জাতের ধান আবাদ করা হবে বলে জানান, কৃষকেরা। তবে গত বছরের তুলনায় পর্যাপ্ত বৃষ্টির পানি থাকায় স্বস্তিতে রয়েছেন কৃষকেরা। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার নারগুন ইউনিয়নের বোঁচাপুকুর পোকাতি গ্রামের কৃষক মো: নাজমুল ইসলাম জানান, তিনি এ বছর আড়াই একর (২৫০ শতক) জমিতে আমন ধান লাগাবেন। বিগত কয়েকদিনের লাগাতার বৃষ্টির ফলে জমিগুলোতে প্রয়োজনীয় পানি জমেছে। এ কারনে আগে ভাগেই আমনের চারা তুলে তা রোপনের কাজ শুরু করেছেন। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের মাষ্টারপাড়া গ্রামের কৃষক মো: হামিদুর রহমান জানান, তিনি এ বছর প্রায় দাড়ে একর (১৫০ শতক) জমিতে আমন লাগানো শুরু করেছেন। তিনি বলেন এ বছর গত কয়েকদিনের বৃষ্টির পানির কারনে জমিতে পানি জমেছে। আশা করছি এ পানি দিয়েই ধান লাগাতে পারবো। ঠাকুরগাঁও জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানা যায়, এ বছর ঠাকুরগাঁও জেলায় আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ৩৭ হাজার ১শ হেক্টর জমিতে। এ পর্যন্ত আবাদ হয়েছে ৮ হাজার ৬৪৪ হেক্টর জমি। এতে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৩ লাখ ৭৯ হাজার ৩৫৫ মেট্রিক টন। যা গত বছরে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৩৭ হাজার ৩৫০ হেক্টর। আবাদ হয়েছিল ১৮ হাজার ৬৪০ হেক্টর। যাতে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৪ লাখ ২৯ হাজার ৭১৬ মেট্রিক টন। ঠাকুরগাঁও জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ- পরিচালক কৃষিবিদ আবু হোসেন জানান, অন্যান্য ফসলের ন্যয় ধানের জন্যও বিখ্যাত এ জেলা। প্রচুর পরিমানে ধান এ জেলায় উৎপাদন হয়। প্রত্যেক বছরের ন্যয় এ বছরও কৃষকদের যাবতীয় কৃষি সেবা ও পরামর্শ প্রদান করা হয়। কিছুদিনের বৃষ্টির পানিতে জমিগুলোতে পানি জমেছে, তবে কিছু স্থানে উচু জমিগুলোতে পানির সামান্য অভাব দেখা দিয়েছে। কৃষকদের বৃষ্টির পানি না হলেও সম্পুরক সেচ ব্যবস্থা চালু রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সেচ পাম্পগুলিও সচল রয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে লক্ষ্যমাত্রার অতিরিক্ত ধান উৎপাদন হবে এবং কৃষকেরা এ বছরও ধানের ন্যর্য্য মুল্য পাবেন বলে তিনি প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।