ফরিদপুরে ডেঙ্গু রোগী বেড়েই চলছে। গত ২৪ ঘন্টায় নতুন করে ৪০ জন ডেঙ্গু সনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে ফরিদপুরে মোট ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩১৭জন। বেশীর ভাগ রোগীর চিকিৎসা চলছে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডেকেল কলেজ হাসপাতালে। এখানে ৬১ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা চলছে। এ দিকে সরকারি নির্দেশনা থাকলে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসার জন্য আলাদা ওয়ার্ড খোলা হয়নি। এখানে পুরুষ ও মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ড এবং পেয়েই বেডে রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে অন্যান্য রোগীদের সাথেই। গত রবিবার দুপুরে সরেজমিনে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে বিভিন্ন ওয়ার্ডে ৫০জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীকে চিকিৎসাধীন দেখা গেছে। তবে গতকাল সোমবার ওই হাসপাতালে ৬১ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে জানা গেছে। রবিবার সরেজমিন পরিদর্শনকালে হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায় পুরুষ মেডিসিন ওয়ার্ড ইউনিট-১ এ মোট শয্যা ১৬ টি। এখানে চিকিৎসাধীন মোট রোগীর সংখ্যা ৭৭ জন। এর মধ্যে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১২ জন। এই ওয়ার্ডের কর্মরত জ্যেষ্ঠ স্টাফ নার্স মিনতি বিশ্বাস বলেন, এই ওয়ার্ডের এক পাশে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। আমরা মশারি টানানোর কথা বললে টানায়,পরে আবার খুলে ফেলে। আমরা বারবার বলছি ডেঙ্গু রোগ থেকে মুক্তি পেতে মশারী টানানো ওষুধের মত কাজ করে। কিন্তু বিভিন্ন অযুহাতে রোগী ও রোগীর স্বজনরা মশারী না টানানোর প্রতি বেশি আগ্রহী থাকেন। মিনতি বিশ্বাস আরও বলেন, ডাক্তার রাউন্ডে গেলে রোগীর স্বজনরা হুরমুর করে মশারি টানিয়ে দেন। ডাক্তার চলে গেলে আবার যা তাই হয়ে যায়। এবিষয়ে আমাদের কথা অনেক রোগীই পাত্তা দেন না। ওই ওয়ার্ডে ডেঙ্গু রোগীদের মধ্যে ৮জন শয্যা পেয়েছেন। বাকি চারজনের চিকিৎসা চলছে মেঝেতে রেখে। মেঝেতে চিকিৎসাধীন নগরকান্দার কোদালিয়া শহীদনগর ইউনিয়নের হাসমত ফকির (৬০) বলেন, ডেঙ্গু রোগীদের জন্য আলাদা ওয়ার্ড দূরে থাক, আমাদের জন্যে তো সীটই নাই। আমি ১৫ জুলাই সন্ধ্যায় ভর্তি হইছি আজকেও (১৬ জুলাই) সীট পাই নাই। তিনি বলেন, এতবড় হাসপাতাল ডেঙ্গু রোগীদের আলাদা একটা জায়গায় চিকিৎসা দিলে আমরা মেঝেতে না শুয়ে সীটে থেকে আরও ভালমত চিকিৎসা নেওয়ার সুযোগ পাইতাম। ওই ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন ঢাকার একটি গার্মেন্টসের কর্মী সজীব মালো (৩৫)। তার বাড়ি ভাঙ্গা উপজেলায়। তিনি বলেন, গত ১৩ তারিখে ঢাকায় হঠাৎ আমার জ্বর উঠে। এরপর একটি হাসপাতালে গিয়ে ডেঙ্গু পরীক্ষা করালে পজিটিভ আসায় আমি বাড়ি চলে আসছি। পর দিন (১৪ জুলাই) ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়। দুইদিন মেঝেতে থেকে ১৬ তারিখ সকালে আমি বেডে সিট পাই। ডেঙ্গুর জন্যে একটা আলদা ওয়ার্ড সাময়িক সময়ের জন্যে করলেও তো আমাদের এত ভোগান্তি হত না। দ্বিতীয় তলা মহিলা মেডিসিন ইউনিট-১-এ মোট শয্যা ৪৪ টি। এখানে মোট ভর্তি আছেন ৯১জন। এই ওয়ার্ডে ডেঙ্গু আক্রান্ত দুইজন রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এ ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিচ্ছেন ভাঙ্গা উপজেলার মধ্য হাসামদিয়া গ্রামের মিরা মালো(৫৫)। তিনি বলেন, গত পাঁচ দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি হইছি জ্বর মোটে কমতেছে না। কবে সারবো তাও জানিনা। ডাক্তার আসতেছে স্যালাইন দিতেছে, স্যালাইন নিতেছি। তৃতীয় তলা পুরুষ মেডিসিন ওয়ার্ড ইউনিট ২ এবং ৩ –এ মোট শয্যা আছে ৩৪ টি। মোট রোগী ভর্তি আছেন ৮৭ জন। এর মধ্যে ডেঙ্গু রোগী ১৫ জন। এই ওয়ার্ডের ডেঙ্গু রোগীদের এলোমেলোভাবে রাখা হয়েছে। এই ওয়ার্ডে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন মাদারীপুরের মোস্তফাপুর এলাকার এনামুল খান(১৮)। তার বড় ভাই হাসান খান (২২) তার সঙ্গে এসেছেন তাকে দেখাশোনা করতে। হাসান খান বলেন,এখানে সব সময় নার্স ডাকলে পাওয়া যায় কিন্তু ডাক্তার সব সময় পাওয়া যায় না। তৃতীয় তলায় মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ড ইউনিট:২-এ মোট শয্যা ২০টি রোগি ভর্তি আছেন ৮০ জন। এখানে ডেঙ্গু রোগি আছেন ৮ জন। এই ওয়ার্ডে এক পাশে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এই ওয়ার্ডে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন ভাঙ্গার মালিগ্রাম এলাকার রিমা আক্তার (১৯)। তার বাবা মো. লিটন হাওলাদার (৫৪) বলেন, ডাক্তার-নার্সা সবসময় মশারি টানাইতে বলেন। ডেঙ্গু রোগের জন্য মশারি টানাইতে হবে আমরাও বুঝি। কিন্তু এখানে এমনিতেই ফ্যানের বাতাস লাগে না মশারি টানাইলে বাতাস আরো কমে যায়। প্রচন্ড গরম। এজন্য মাঝে মাঝে বাধ্য হয়ে মশারি খুলে ফেলতে হয়। তৃতীয় তলায় পুরুষ পেইং বেডে মোট শয্যা আছে ২৯টি রোগি ভর্তি আছেন ২৭ জন এর মধ্যে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী আছেন ১৩ জন। এখানে চিকিৎসা নিতে প্রতিদিন বেডপ্রতি ৩২৫ টাকা দিতে হয়।এখানের পরিবেশ অন্যান্য জায়গার চেয়ে ভাল। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন নার্সের সাথে কথা বলে জানা গেছে, অন্যান্য রোগীদের সাথে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দিতে নার্সরাও হিমশিম খাচ্ছেন। অনেক রোগী মশারী টানাচ্ছেন না বিষয়টি নিয়ে গত ২/৩ দিন আগে নার্সদের জবাব দিতে বলেন হাসপাতালের পরিচালক। তখন নার্সরা রোগীদের অসচেতনতার কথার পাশাপাশি আলাদা ডেঙ্গু ওয়ার্ডের দাবি জানান। নার্সরা পরিচালককে জানান, আলাদা ওয়ার্ড করা হলে ডেঙ্গু রোগীদের সার্বক্ষণিক মশারী টানানো নিশ্চিত করাসহ আরও নিবিড় যতœ নেওয়া সম্ভব হবে। ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক এনামুল হক বলেন, এখনও আলাদা ডেঙ্গু ওয়ার্ড করা হয়নি। তবে বিভিন্ন ওয়ার্ডে রোগীর চাপ বাড়ায় কিছু কিছু রোগীদের আইসোলেশন ওয়ার্ডে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, চাপ বাড়লে আলাদা ওয়ার্ড করা হবে।