ঠাকুরগাঁও জেলা শহর থেকে পঞ্চগড় মহাসড়ক ধরে উত্তরে ১০ কিলোমিটার এগিয়ে গেলেই ভুল্লী-বাজার ব্রিজ সেখান থেকে ১০০গজ এগিয়ে পূর্ব দিকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে বড় বালিয়া ইউনিয়নে অবস্থিত ঐতিহাসিক বালিয়া জ্বীনের মসজিদ নামে পরিচিত। মসজিদের গায়ে খোদাই করা তারিখ অনুসারে এটি তৈরি হয় ১৩১৭ বঙ্গাব্দে। তিন গম্বুজ বিশিষ্ট এ মসজিদের নির্মাণশৈলী মনোমুগ্ধকর। এর আয়তন পূর্ব-পশ্চিমে ৬২ ফুট এবং উত্তর-দক্ষিণে ৬৯ ফুট। আয়তাকার মসজিদটিকে সিঁড়িসহ প্রবেশপথ, খোলা চত্বর ও মূল ভবন বা নামাজঘর-তিনটি অংশে বিভক্ত করা যায়। স্থানীয়রা জানান, কোনো এক আমাবশ্যার রাতে জ্বীন-পরীরা বালিয়া ইউনিয়নের ওপর দিয়ে উড়ে যাওয়ার সময় এলাকাটি তাদের পছন্দ হয়। তারপর জ্বীন-পরীরা মাটিতে নেমে এসে মসজিদ নির্মাণের কাজ শুরু করে। কিন্তু গম্বুজ তৈরির আগেই ভোর হয়ে যাওয়াতে কাজ অসমাপ্ত রেখে চলে যায় তারা। ফলে গম্বুজ ছাড়াই দাঁড়িয়ে থাকে অসাধারণ কারুকার্য খচিত এই মসজিদটি। জ্বীন-পরীরা কিছু অংশ তৈরি করেছে বলে স্থানীয়দের কাছে এটি ‘জ্বীনের মসজিদ’ নামে পরিচিত এবং এটি সবাই এখন জ্বীনের মসজিদ নামেই চেনে। স্থানীয় বাসিন্দা চৌধুরী আসলাম আলী বলেন, ‘মসজিদটির বয়স ১১০-১১২ বছরের মতো হবে। আমাদের এই এলাকাটি উঁচু আকৃতির ছিল। বন-জঙ্গলের মধ্যেই ছোট্ট একটি মসজিদ ঘর নির্মাণ করে এলাকার মানুষ নামাজ আদায় করত। এরপর মসজিদ কমিটি ও স্থানীয়দের সহযোগিতায় এই মসজিদের বাকি কাজ সম্পন্ন করা হয়।’ঐতিহাসিক সূত্রে জানা যায়, স্থানীয় জমিদার মেহের বকস চৌধুরী উনবিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগে বালিয়া মসজিদ তৈরির পরিকল্পনা করেন। শিলালিপি অনুসারে মসজিদটির নির্মাণকাল ১৩১৭ বঙ্গাব্দ বা ১৯১০ সাল। কথিত আছে, জমিদার মেহের বকস চৌধুরী দিল্লির আগ্রা ও পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ থেকে স্থপতি নিয়ে আসেন। মোগল স্থাপত্যশৈলীর জটিল নকশার মসজিদটি নির্মাণ যেমন ছিল ব্যয়বহুল, তেমনি সময়সাপেক্ষ। তবে মসজিদ নির্মাণ অসম্পূর্ণ রেখেই প্রধান স্থপতি মারা গেলে কাজও বন্ধ হয়ে যায়। জমিদার মেহের বকস স্থানীয় কারিগর দিয়ে মসজিদের কাজ শুরু করলেও তারা মসজিদের গম্বুজ বানাতে পারেননি। অন্যদিকে মেহের বকসও ১৩১৭ বঙ্গাব্দ বা ১৯১০ সালে মারা যান। পরে মেহের বকসের ছোট ভাই মসজিদের কাজে হাত দেন, তিনিও মসজিদের কাজ শেষ হওয়ার আগেই মারা যান। ফলে গম্বুজবিহীনভাবেই মসজিদের ১০০ বছর পেরিয়ে যায়। এরপর ২০১০ সালে মেহের বকসের প্রপৌত্রী তসরিফা খাতুনের পৃষ্ঠপোষকতায় ও প্রত্নতত্ত্ব ইনস্টিটিউটের সহায়তায় গম্বুজসহ মসজিদের নির্মাণ ও সংস্কারকাজ সম্পন্ন হয়। মসজিদটির মূল ভবনের ছাদ মেঝে থেকে ১৭ ফুট উঁচুতে অবস্থিত। বর্তমানে ছোট বালিয়া মসজিদে একই আকারের তিনটি গম্বুজ ও চার কোনায় চারটি বড় মিনার ছাড়াও রয়েছে আরো ছোট চারটি মিনার। হাতে পোড়ানো ইট ও চুন-সুরকির গাঁথুনিতে নির্মিত মসজিদের দেয়ালে ইট কেটে কলস, ঘণ্টা, বাটি, ফুল ইত্যাদির নকশা তৈরি করা হয়েছে যা দেখার জন্য প্রতিনদিন দূরদূরান্ত থেকে এই জ্বীনের মসজিদ দেখার উদ্দেশ্যে দর্শনাথীরা এসে ভীড় জমায় ।