গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে দেশের আইনকে বৃদ্ধা আঙ্গুল দেখিয়ে দাদন ব্যবসায়ীরা রমরমা সুদের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। এতে নিঃস্ব হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। দাদন ব্যবসায়ীদের চক্রবৃদ্ধি সুদের ফাঁদে নির্যাতনের শিকার ভুক্তভোগীদের নানা অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভুক্তভোগী কয়কেজন প্রতিকার চেয়ে থানাসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযোগ দায়ের করেছেন। এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার গুমানীগঞ্জ ইউনিয়নসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে প্রতি সপ্তাহে হাজার-হাজার,মাসে লাখ-লাখ টাকা সুদ দিতে হয় সাধারণ মানুষকে। সপ্তাহ/মাস শেষে সুদের টাকা দিতে না পারলে চক্রবৃদ্ধি হারে বৃদ্ধি পায় সুদের টাকা। টাকা না দিতে পারলে মাঠের জমি, গরু এমনকি বসতভিটা পর্যন্ত লিখে দিতে হয় সুদ ব্যবসায়ীদের নামে। সুদ ব্যবসায়ীদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে এরই মধ্যে অনেকে আত্মহত্যা করেছেন বলে জানা গেছে। গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন অনেকে। সুদের ব্যবসা কয়েক বছর ধরে চলছে হাট-বাজার ও আশপাশের গ্রামে গ্রামে। সুদের টাকা নিয়ে এলাকার সাধারণ মানুষ নিঃস্ব হয়ে পড়ছেন। ভুক্তভোগীরা জানান, গুমানীগঞ্জ ইউপির স্থানীয় পারগয়রা বাজার এলাকার মৃত আব্দুল জলিলের ছেলে দাদন ব্যবসায়ী লাবলু ও তার ভাই সহ কয়েকজন দীর্ঘ দিন থেকে ভূয়া সমিতির নামে কোটি-কোটি টাকার দাদন ব্যবসা করে আসছে। যদি কেউ বিপদে পড়ে ৫০ হাজার টাকা সুদে নেন, তাহলে পাঁচ মাস পর পাঁচ লাখ টাকা দিয়েও সুদ ব্যবসায়ীদের টাকা পরিশোধ হয় না। সুদ ব্যবসায়ীরা সাধারণ মানুষের জমি পর্যন্ত জোরপূর্বক লিখে নেয়। এরা এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তি বলে ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না। এরই মধ্যে এক ব্যক্তি ২০ হাজার টাকা নিয়ে গত এক বছরে ১ লাখ টাকা সুদ দিয়েছে তবুও টাকা পরিশোধ না হওয়ায় মারপিট করে গরু ধরে নিয়ে বিক্রি করেছে দাদন ব্যবসায়ী এই চক্র। সুদ খোর লাবলুসহ অনেকে ব্যাংকের চেক বইয়ের পাতা, ফাঁকা ষ্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করে ইচ্ছামত টাকা বসিয়ে, চেক ডিজঅনার মামলা দিকে বিপাকে ফেলে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বুনে গেছেন। দাদন ব্যবসায়ীদের নির্যাতনের শিকার ভুক্তভোগীদের অভিযোগ পেয়ে ইতি মধ্যে গোবিন্দগঞ্জ থানার এস,আই মোবারকসহ সঙ্গীয় পুলিশ ফোর্স ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে শত-শত মানুষের উপস্থিতিতে ভুক্তভোগীদের অভিযোগের সত্যতা পান। উচ্চ হারে সুদ দিতে গিয়ে অনেকের জমি বিক্রি করেও সুদের টাকা পরিশোধ হয়নি। নানা নির্যাতনের শিকার হয়ে বর্তমানে অনেকে পরিবার নিয়ে অনাহারে-অর্ধাহারে দিন যাপন করে সর্বস্বান্ত হয়েছেন। মদন তাইড় বারই পাড়া গ্রামের মৃত আফান উদ্দিনের ছেলে আক্তারুল সুদারু লাবলুর কাছ থেকে চার লাখ টাকা উচ্চ হারে সুদে নেয়। এই টাকা নেওয়ার পর দীর্ঘ তিন বছর সুদের ১০ লক্ষ টাকা পরিশোধ করে তার পরেও আসল পাওনা থাকে এর মধ্য আক্তারুলের ব্যবসার দোকানটি আগুনে পুড়ে যায়, ফলে টাকা দিতে পারে না আকতারুল । সুদের টাকার চাপ দিতে থাকে লাবলু এবং ভারাটিয়া গুন্ডা দিয়ে তাকে মারপিট করার জন্য তাকে ভয়ভীতি দেখায়। পরে বাধ্য হয়ে জমি বিক্রি করে টাকা পরিশোধ করে এবং ঐ সময় লাবলুকে তিন শত টাকা মুল্যের স্ট্যাম্প করে দেয়। পরে গ্রহন কৃত চেক ডিজঅনার করে পনের লক্ষ টাকার মামলা দেয়। এ মামলায় আক্তারুল এখন ২ মাস ধরে জেল হাজতে। একই ভাবে ঘুগা গ্রামের আজিজ এর বিরুদ্ধে ১৫ লাখ, একই গ্রামের ফারুকের বিরুদ্ধে ৬০ লক্ষ, সাবু মিয়ার বিরুদ্ধে ১৫ লক্ষ টাকার মামলা চেক ডিজঅনার মামলা দিয়েছেন দাদন ব্যবসায়ী লাবলু। উচ্চ সুদে টাকা দিয়ে মানুষের কাছ থেকে তার বিনিময়ে ব্যাংকের চেক গ্রহন করে পরে সুদের টাকা দিতে দিতে কোন সময় অপারগতা প্রকাশ করলেই, সেই চেক ব্যাংকের মাধ্যমে ডিজঅনার করে তার বিরুদ্ধে দেওয়া হচ্ছে মামলা। এমনকি প্রভাব খাটাতে তারবোন সীমা বেগমকে গ্রামপুলিশ বানিয়ে তার মাধ্যমে থানায় বিভিন্ন হয়রানী মূলক মামলা দেন বলে জানা যায়। তার অত্যাচারে ফারুক, হোদা, সবুজসহ অনেকেই পলাতক রয়েছে। এভাবেই সর্বস্বান্ত হচ্ছে শিক্ষক-ব্যবসায়ী ও এলাকার মধ্যবিত্ত, দুস্থ সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ। এক সময় সদারু লাবলু গ্রামে-গ্রামে সাইকেলে করে হাস-মুরগী ক্রয় করে গোবিন্দগঞ্জের বিভিন্ন হাটে বিক্রি জীবিকা নির্বাহ করতেন। আর এখন নামে-বেনামে কোটি কোটি টাকার সম্পদ করে এলাকায় রমরমা সুদের ব্যবসা করছেন। সুদের টাকা তোলার জন্য গড়ে তুলেছেন নিজস্ব সন্ত্রাস বাহিনী। এলাকাবাসী ও ভুক্তভোগীরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের প্রশাসনের উর্দ্ধতন কতৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।