আওয়ামী লীগের আরেক দুর্গ হিসেবে খ্যাত ঠাকুরগাঁও-২ আসন। এই আসনে বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব মোঃ দবিরুল ইসলাম টানা ৭বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। এর মধ্যে ৫ বার আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেয়ে এবং ২ বার কমিউনিস্ট পার্টির হয়ে। উত্তরবঙ্গে ৭ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন এমন ২ জন ব্যক্তির মধ্যে এমপি মোঃ দবিরুল ইসলাম একজন। উত্তরবঙ্গের মানুষের কাছে তিনি ভোটের জাদুকর হিসেবে পরিচিত। এককভাবে বলা চলে ঠাকুরগাঁও-২ আসনটিই দবিরুল ইসলামের। আওয়ামী লীগের এই দুর্গে বার বার আঘাত হানার চেষ্টা করলেও সুবিধা করতে পারেনি জামায়াত-বিএনপি। আওয়ামী লীগের প্রবীণ এই নেতা দবিরুল ইসলামের জনপ্রিয়তার কাছে কোণঠাসা হয়ে রয়েছে। বালিয়াডাঙ্গী, হরিপুর ও রাণীশংকৈল উপজেলার দু’টি ইউনিয়ন (ধর্মগড় ও কাশিপুর) নিয়ে গঠিত ঠাকুরগাঁও-২ আসন। এই আসনে ১৯৮৬ সালে তৃতীয় ও ১৯৯১ সালে পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কমিউনিস্ট পার্টি থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন দবিরুল ইসলাম। এরপরে ১৯৯৬ সালে কমিউনিস্ট পার্টি ভেঙে গেলে আওয়ামী লীগে যোগ দেন এমপি দবিরুল ইসলাম। এরপর থেকে টানা ৫ বার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের অনেক সময় থাকলেও অনেক আগে থেকেই মাঠে নেমেছেন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন আগ্রহী প্রার্থীগণ। এলাকায় ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন উঠান বৈঠক এবং কর্মিসভায় সময় দিচ্ছেন। লিফলেটের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের করা উন্নয়ন প্রচার করছেন। তবে আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা গোপনে তাদের প্রচার চালাচ্ছেন। বিভিন্ন ধরনের বাধা-বিপত্তির কারণে প্রকাশ্যে আসতে চাইলেও পারছেন না। অনেকেই দ্বিধার মধ্যেও নিজে প্রার্থী হবেন বলে নানাভাবে জানান দিচ্ছেন। আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট প্রার্থীর অন্যতম বর্তমান সংসদ সদস্য দবিরুল ইসলাম। তিনি ঠাকুরগাঁও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি। তিনি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রণালয়, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ছিলেন। বর্তমানে তিনি পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে সংসদ সদস্য থাকার কারণে নেতাকর্মীদের দাবি, তিনি এলাকার রাস্তা-ঘাট পাকাকরণ, ব্রিজ নির্মাণ, শতভাগ বিদ্যুতায়ন, স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসার অবকাঠামো উন্নয়ন সহ দলের নেতাকর্মীদের সুসংগঠিত করতে অনেক কাজ করেছেন। তবে, ভোটের জাদুকরখ্যাত ৭ বারের এমপি দবিরুল ইসলামের শারীরিক অসুস্থতার কারণে এলাকায় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর তার জ্যেষ্ঠ সন্তান সাবেক ছাত্রনেতা ঠাকুরগাঁও জেলা আওয়াামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ মাজহারুল ইসলাম সুজনকে দিয়ে উন্নয়ন কর্মকা- এবং সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করাচ্ছেন। এ কারণে দলের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের কাছে তার ব্যাপক সুনাম ও প্রহণযোগ্যতা তৈরি হয়েছে বলে এলাকার অসংখ্যজন মত প্রকাশ করেছেন। অনেকেই তাকে তার বাবার জায়গায় সংসদ সদস্য হিসেবে দেখতে চান। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মাজহারুল ইসলাম সুজন বলেন, সংসদ সদস্য হওয়া আমার কাছে মুখ্য বিষয় নয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাতে পুনরায় চতুর্থবার সরকার গঠন করতে পারে এবং বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণ করাই আমার কাছে মুখ্য বিষয়। এ জন্য আমি প্রতিনিয়ত এলাকার মানুষের কল্যাণে ও মানুষের বিপদ-আপদে কাজ করে যাচ্ছি। এ আসনে এমন কোনো এলাকা নেই যেখানে আমি সরকারের উন্নয়নের বার্তা পৌঁছে দিতে সরেজমিনে যাইনি। আমি কোথাও হাজির হলে এলাকার আবালবৃদ্ধবণিতা আমার কাছে ছুটে এসে প্রাণ খুলে তাদের দুঃখ দুর্দশার কথা প্রকাশ করেন। আমি যথাসাধ্য তাদের দাবি পূরণে সহায়তা করে আসছি। এছাড়াও এই আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন ঠাকুরগাঁও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোস্তাক আলম টুলু এবং সহ-সভাপতি প্রবীর কুমার রায়। জানতে চাইলে অ্যাডভোকেট মোস্তাক আলম টুলু বলেন, এ এলাকার মানুষ দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের মধ্যে মনোনয়নে নতুন মুখ দেখতে চান। আমাকে মনোনয়ন দিলে শতভাগ বিজয়ী হব। একইসঙ্গে মানুষের দীর্ঘদিনের চাওয়া-পাওয়া পূরণ হবে। এ ব্যাপারে প্রবীর কুমার রায় বলেন, এর আগেও দুবার মনোনয়ন চেয়েছি, এবারও চাইব। আমার অতীতের কার্যকলাপ বিবেচনা করে নেত্রী মনোনয়ন প্রদান করবেন এমনটা আশা করি। মনোনয়ন পেলে শতভাগ বিজয় উপহার দিতে পারব নেত্রীকে। একই সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর ইচ্ছানুযায়ী সুখী, সমৃদ্ধ ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার জন্য জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ মোতাবেক ঠাকুরগাঁও-২ আসনে মাদকমুক্ত সমাজ গঠন সহ স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে জনহিতকর সকল কাজ করার কথা বলেন তিনি। এদিকে আবার নতুন করে মাঠে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশ আওয়ামী ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি দবিরুল ইসলামের ছেলে আহসান উল্লাহ ফিলিপ আওয়ামী লীগের টিকিট প্রত্যাশীর জন্য নির্বাচনী এলাকা মাঠে মানুষের সঙ্গে কুশল বিনিময় করে বেড়াচ্ছেন । বাবার পরিচয় দিয়ে এবং নিজে নিজের পরিচয় দিয়ে এলাকার মানুষের সঙ্গে কুশল বিনিময় করছেন। তিনি মানুষের কাছে বলছেন তাকে যদি নেত্রী নির্বাচনী টিকিট দেন তাহলে এই নির্বাচনী এলাকায় জনসাধারণের ভোটে বিজয় হবেন । অন্যদিকে, বিএনপি থেকে এ আসনে ড্যাবের মহাসচিব ডা. আব্দুস সালাম, বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট সৈয়দ আলম, সাধারণ সম্পাদক ড. টিএম মাহবুবর রহমান ও সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য জুলফিকার আলী মর্তুজা চৌধুরী তুলা এ আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন চাইবেন। দলটির শীর্ষ পদে থাকা একাধিক নেতাকর্মী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ড্যাবের মহাসচিব ডা. আব্দুস সালাম বলেন, চিকিৎসক হওয়ার সুবাদে এলাকার মানুষ এবং দলের নেতাকর্মীদের সেবা করার সুযোগ হয়েছে। নির্বাচনে দল অংশ নিলে এবং আমাকে মনোনয়ন দিলে আমি অংশ নেব। আশা করি আওয়ামী শোষণ থেকে এলাকার মানুষ বাঁচতে আমাকে নির্বাচিত করবেন। সরকারের সমলোচনা করে একই মন্তব্য করেছেন বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট সৈয়দ আলম ও সাধারণ সম্পাদক ড. টিএম মাহবুবর রহমান। এ আসনে বরাবরের মতো এবারেও প্রার্থী চূড়ান্ত করে রেখেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। ঠাকুরগাঁও জেলা জামায়াতের আমির মাওলানা আব্দুল হাকিম এ আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নেবেন। গেল চারটি সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হয়েছেন তিনি। এদিকে, প্রথমবারের মতো নির্বাচনের দু’বছর আগে এবার ঠাকুরগাঁও-আসনে জাতীয় পার্টি তাদের প্রার্থী ঘোষণা করে রেখেছেন কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস-চেয়ারম্যান নুরুন নাহার বেগমকে। যদিও এ আসনটিতে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে এ দলটির কোনো কার্যক্রম এখন পর্যন্ত নজরে আসেনি। ঠাকুরগাঁও জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, ঠাকুরগাঁও-২ আসনে ৩ লাখ ৬৮ হাজার ২৫ জন ভোটার রয়েছেন। এর মধ্যে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার এক লাখ ৫৬ হাজার ৭৬৫ জন, হরিপুর উপজেলায় এক লাখ ১০ হাজার ১৬৬ জন এবং রাণীশংকৈল উপজেলার ২ ইউনিয়নে ৩৯ হাজার ৮৯৪ জন।