মেহেরপুরের গাংনীর রাইপুর গ্রামের স্বামী পরিত্যাক্তা লিলুফা খাতুন। পাঁচ বছর আগের কথা মনে হলে গাঁ শিউরে উঠে গৃহবধু নিলুফার। অভাব যেন হা করে গিলে খেতে এসেছিল। আত্মীয় স্বজন কেউ ছিল না তার পাশে। সংসারের খরচ আর সন্তানদের পড়ালেখা নিয়ে ছিলেন বেশ চিন্তিত। আজ আর সে অবস্থা নেই নিলুফার। পশু পালন করে সংসারের ব্যায়ভার বহন ও সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ মিটিয়ে যা অবশিষ্ট থাকে তা একটি ব্যাংকে স য় করছেন তিনি। এখন তার গোয়াল ঘরে রয়েছে ৪টি গরু। এবার সবগুলোই তুলবেন কোরবানীর হাটে। শুধু লিলুফা খাতুন নয়, তার মত অসহায় ও বিত্তশালী গৃহবধুসহ সকলেই গরু পালন করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। চাকরীর প্রত্যাশা না করে অনেক শিক্ষিত যুবক নিজ বাড়িতে গড়ে তুলেছেন গরুর খামার।গাংনী শহর থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত রাইপুর গ্রাম। গ্রামের আয়তন খুব বেশি নয়। মাত্র ৩৮০টি পরিবারের বাস। প্রতিটি পরিবারের গোয়ালে রয়েছে বিভিন্ন আকারের গরু। কোরবানির সময় আসলেই এ গ্রামটিতে পালিত ষাড়ের বিষয়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয় এলাকার মানুষের কাছে। এবার কোরবানীতে প্রায় ২০ কোটি টাকার পশু বিক্রির আশা করছেন গবাদিপশু পালনকারীরা। গ্রামটি কোরবানির পশুর গ্রামের খ্যাতি থেকে স্মার্ট লাইভ স্টক ভিলেজ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। চলতি কোরবানির মৌসূমে গ্রামটিতে প্রায় ২০ কোটি টাকার পশু বিক্রির আশা করছেন খামারীরা। গ্রামের ফুরাদ হোসেন জানান, তার খামারে ছোট বড় ৬০টি গরু আছে। এর মধ্যে ২০টি গরু এবার কোরবানীর হাটে তুলবেন। এখন তার ব্যস্ত সময়। চলতি কোরবানীর মৌসুমে অন্তত ২৫ লাখ টাকার গরু বিক্রি করবেন তিনি। পশুপালনকারী আলামীন জানান, তার বাড়িতে রয়েছে ৫টি এঁড়ে গরু। ২৫ হাজার টাকা করে গরু কিনে এনেছিলেন। এখন একেকটি গরুর দাম অন্ততঃ দেড় লাখ টাকা। ইতোমধ্যে ব্যাপারীরা আসছেন ও দাম বলছেন। বিশিষ্ট ঠিকাদার ও পশুপালনকারী মকলেচুর রহমান জানান, একসময় গ্রামের লোকজন গরুর ব্যবসা করতো। পরে পশুপালন লাভজনক হওয়ায় গ্রামের লোকজন পশুপালন শুরু করেন। গরুর পাশাপাশি রয়েছে ছাগলের খামার। গবাদি পশু পালনের অব্যহত ধারা ধরে রাখতে আবাদ করা হস্থে বিভিন্ন প্রকার ঘাস। ঘাস আবাদ করে বিক্রি করার বিষয়টি আত্মপ্রকাশ করেছে আরেকটি লাভজনক খাত হিসেবে। এছাড়াও স্থানীয়ভাবে সহজে পাওয়া ধান, গম, ভুট্টা, ডালসহ পুষ্টিকর খাদ্য তৈরী করছেন খামারীরা নিজেই। গাংনী উপজেলা ভেটেনারী সার্জন আরিফুল ইসলাম জানান, কোরবানির ষাড়ের গ্রাম হিসেবে খ্যাতি পাওয়া রাইপুর গ্রামকে স্মার্ট লাইভ স্টক ভিলেজে রুপান্তরিত করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে প্রাণি সম্পদ দপ্তর। যার মাধ্যমে অন্য গ্রামের মানুষ গবাদি পশু পালনে আরও উদ্বুদ্ধ হবে বলে আশা করছেন প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তারা।