নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে দশ লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায়ের জন্য উম্মে তাবাসসুম জুঁই নামে তিন বছর বয়সের এক শিশুকে অপহরণের পর হত্যার মামলায় তিন আসামির মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। গত মঙ্গলবার (৩০ মে) দুপুরে জেলা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালের বিচারক নাজমুল হক শ্যামল আসামিদের উপস্থিতিতে এই রায় ঘোষণা করেন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন কুঁড়িগ্রাম জেলার ভুরুঙ্গামারী থানার শিলগুড়ি ইউনিয়নের দক্ষিণ দলডাঙ্গা গ্রামের সমেদ আলীর দুই ছেলে শাহজালাল (২১) ও খয়বর হোসেন (৩২) এবং তাদের সহযোগী আশরাফুল (১৯)। জানা যায়, মুক্তিপণ আদায়ের উদ্দেশ্যে উপজেলার গোলাকান্দাইল ইউনিয়নের ভুলতা টেকপাড়ায় টেকপাড়া এলাকায় আনোয়ার হোসেনের শিশু কন্যা জুঁইকে অপহরণের পরিকল্পনা করে তাদের বাড়ির ভাড়াটিয়া শাহজালাল, খয়বর হোসেন ও আশরাফুল। উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতে ২০১৮ সালের ১৮ অক্টোবর সকালে বাড়ির সামনে খেলা করার সময় জুঁইকে অপহরণ করে তারা। এরপর তাদের ঘরে নিয়ে শিশুটির মুখে স্কচটেপ ও পলিথিন লাগিয়ে হাত-পা বেঁধে ফেলে অপহরণকারীরা। এ সময় জুঁই চিৎকারের চেষ্টা করলে ইনজেকশন দিয়ে তাকে অজ্ঞান করা হয়। এর পরপরই জুঁইয়ের মৃত্যু হয়। পরে অপহরণকারীরা শিশুটির বাবার কাছে দশ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে এবং টাকা নিয়ে ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশনে যেতে বলে। তবে অপহরণের ঘটনা পুলিশকে জানালে জুঁইকে মেরে ফেলবে বলে হুমকিও দেয় অপহরণকারীরা। তখন অপহরণকারীদের সঙ্গে জুঁইয়ের পরিবারের পাঁচ লাখ টাকায় রফাদফা হয়। টাকা পেলে তারা জুঁইকে ফেরত দেবে বলে আশ্বাসও দেয়। তবে টাকা দিতে দেরি হলে রাতে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় জুঁইয়ের লাশ বস্তায় ভরে তাদের বাড়ির পেছনে ফেলে যায় অপহরণকারীরা। পরদিন সকালে লাশ উদ্ধার হয়। এ ঘটনায় নিহত শিশু জুঁইয়ের বাবা আনোয়ার হোসেন বাদী হয়ে রূপগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা করলে পুলিশ তিন আসামি জাকির হোসেন, শাহজালাল ও আশরাফুলকে গ্রেপ্তার করে। পরে আসামিদের মধ্যে দুইজন হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিও দেয়। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবি জেলা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) রাকিব উদ্দিন জানান, আদালত এই মামলায় ষোলজনের স্বাক্ষ্যগ্রহণ ও যুক্ততর্কের পর বিচার প্রক্রিয়া শেষে রায় ঘোষণা করেছেন। বাদী ও রাষ্ট্রপক্ষ এ রায়ে সন্তুষ্ট আছেন। রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করে নারায়ণগঞ্জ কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক মো. আসাদুজ্জামান জানান, রায় ঘোষণার পর আদালতের নির্দেশে সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।