বান্দরবানের রুমায় কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সদস্যদের নির্যাতন ও হুমকিতে ঘরবাড়ি ছেড়ে থানচি সদরে আশ্রয় নিয়েছে বম জনগোষ্ঠীর ১১টি পরিবার। থানচি সদর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছেন এসব পরিবারের ৩২ সদস্য। এর মধ্যে ১০ পুরুষ, ১৩ নারী ও ৯ শিশু রয়েছেন। আশ্রয় নেওয়া ওসব পরিবার রুমা উপজেলার ৩ নম্বর রেমাক্রী প্রাংসা ইউনিয়নের বাকলাই পাড়ার বাসিন্দা। গতকাল রোববার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে থানচি সদরে পৌঁছান তারা। পরে সদর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি তাদের আশ্রয়ের জন্য খুলে দেয় উপজেলা প্রশাসন। এসব পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ছয় মাস ধরে তাদের নির্যাতন ও হুমকি দিয়ে আসছিল সশস্ত্র গোষ্ঠী কেএনএফের সদস্যরা। এরই মধ্যে কেএনএফের সদস্যদের ধরতে অভিযান শুরু করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বাকলাই পাড়ায় কেএনএফের সদস্যদের আনাগোনা বেশি থাকায় প্রায় সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে গোলাগুলি হয়। এতে বাকলাই পাড়ার ওসব পরিবার কেএনএফের হুমকিতে পড়ে। সবশেষ ১১টি পরিবারই ছিল ওই পাড়ায়। গত কয়েক মাস ধরে বনে-জঙ্গলে পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন তারা। অবশেষে শনিবার সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান খামলাই ম্রোর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তার সহযোগিতায় পাড়াবাসী থানচি সদরে চলে আসে। বাকলাই পাড়ার ভাওরাম থন বম ও রওরেম বম জানিয়েছেন, গত ছয় মাস ধরে আতঙ্কের মধ্য দিয়ে পাড়ায় বসবাস করছিলেন। অনেক সময় তাদের বনে-জঙ্গলে রাত্রিযাপন করতে হয়েছে। কেএনএফের সদস্যরা পাড়া দিয়ে বেশিরভাগ সময় যাতায়াত করে। উপায় না পেয়ে প্রাণ বাঁচাতে পাড়া ছেড়ে পালিয়েছেন তারা। বাকলাই পাড়ার কারবারি (পাড়াপ্রধান) থমলিয়ান বম বলেন, ‘গত ছয় মাস ধরে বিভিন্ন মহলের কাছে সহযোগিতা চেয়েছি। অনেকের মাধ্যমে খবর পাঠিয়েছি। কিন্তু কোনও সহযোগিতা পাইনি। শনিবার সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান খামলাই ম্রোর সঙ্গে যোগাযোগ করলে সহযোগিতার আশ্বাস দেন। এজন্য রবিবার থানচি সদরে এসে আশ্রয় নিয়েছি। ওই পাড়ায় আমরা ১১টি পরিবার ছিলাম। সবাই একসঙ্গে চলে এসেছি। সেখানে থাকলে আমাদের মেরে ফেলবে বলে হুমকি দেয় কেএনএফ।’ পাড়ার পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত থানচি মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ওসব পরিবার থাকবে বলে জানালেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহা. আবুল মনসুর। তিনি বলেন, ‘প্রাণভয়ে পালিয়ে আসা ১১টি পরিবার রুমা উপজেলার ৩ নম্বর রেমাক্রী প্রাংসা ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাকলাই পাড়ার বাসিন্দা। যতদিন তারা আশ্রয়ে থাকবেন ততদিন তাদের সব ধরনের সহযোগিতা করবে প্রশাসন।’ এর আগে গত ২০ এপ্রিল রুমায় কেএনএফের ভয়ে পাইন্দু ইউনিয়নের মুয়ালপিপাড়ার ৫০ মারমা পরিবার ঘরবাড়ি ছেড়ে উপজেলা সদরে আশ্রয় নিয়েছিল। এর মধ্যে এখনও অনেকে ঘরে ফিরতে পারেনি। অনেকে আত্মীয়-স্বজন এবং অন্য পাড়ায় অবস্থান করছেন। প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের মে-জুন থেকে বিলাইছড়ি উপজেলার বড়থলি ইউনিয়ন; বান্দরবানের রুমা, রোয়াংছড়ি ও থানচি উপজেলার দুর্গম এলাকায় তৎপরতা শুরু করে সশস্ত্র সংগঠন কেএনএফ। তারা বম, পাংখুয়া, লুসাই, খুমি, খেয়াং ও ম্রো—এই ছয়টি জনগোষ্ঠীর অধিকারের জন্য সশস্ত্র আন্দোলন করছে দাবি করলেও বিভিন্ন সময়ে হত্যাকাণ্ড চালিয়ে আসছে। সংগঠনটির গোপন আস্তানায় জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বিয়ার জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার অভিযোগের ভিত্তিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গত ৩ অক্টোবর থেকে ওই এলাকায় অভিযান শুরু করে। এখনও অভিযান অব্যাহত আছে।