স্ট্রবেরি ফল চাষ অত্যন্ত লাভজনক ও সম্ভাবনাময়। জেলায় এই সম্ভবনাকে বাড়িয়ে তুলেছেন সুজাত আলী নামের এক কৃষক। ঠাকুরগাঁও জেলার পীরগঞ্জ উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে স্ট্রবেরি চাষ করে ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন সুজাত আলী নামের এক কৃষক। তার ক্ষেতের সারি-সারি বেডের ওপর শোভা পায় চোখ জুড়ানো লাল টসটসে স্ট্রবেরি। তার ক্ষেতের চলে যায় রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বাজারে। এতে একদিকে যেমন লাভবান হচ্ছেন তিনি আর অন্যদিকে অনেকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও হয়েছে সেখানে। জানা যায়, পীরগঞ্জ উপজেলার ৯নং সেনগাঁও ইউনিয়নের বেলদহি গ্রামের কৃষক সুজাত আলী। গত বছর জয়পুরহাট থেকে ১৮ হাজার টাকার স্ট্রবেরির চারা ক্রয় করে নিয়ে আসেন। পরবর্তীতে নিজের ২ একর ৫৫ শতক জমিতে রোপণ করেন সেই চারা। বর্তমানে তার ক্ষেতে স্ট্রবেরির গাছ রয়েছে প্রায় ৩৫ হাজার। সব গাছেই প্রচুর ফল এসেছে। ফল পাকতে শুরু করেছে। পাকা ফল তুলে বিক্রিও করেছেন তিনি। ক্ষেতেই পাকা স্ট্রবেরি ৮’শ থেকে ১২শ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেন। স্থানীয়ভাবে বিক্রির পাশাপাশি রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাঠান। এ ফসল আবাদ করতে এখন পর্যন্ত তার খরচ হয়েছে ১২ লাখ টাকার মতো। ক্ষেত থেকে ৪৫ থেকে ৫০ লাখ টাকার স্ট্রবেরি বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা তার। স্ট্রবেরি চাষি সুজাত আলী জানান, তার ক্ষেত থেকে স্ট্রবেরি তোলা, বাছাই ও প্যাকেট করাসহ পরিচর্যার কাজে ১২ জন নারী-পুরুষ কাজ করছেন। এখানে কিছুটা হলেরও তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে। ব্যতিক্রমী এ ফসল আবাদ করে এলাকায় ব্যাপক সাড়া ফেলে তিনি। এখন বিভিন্ন এলাকা থেকে ক্ষেত দেখতে আসছেন অনেকে। দিনাজপুর থেকে আসা মকলেসুর নামে এক ব্যক্তি জানান, স্ট্রবেরি ক্ষেত দেখে তিনি অভিভুত। আগামীতে তিনিও স্ট্রবেরি চাষ করবেন বলে জানান। তিনি বলেন, সুজাত আলীর কাছে অনুপ্রাণিত হয়েই স্টবেরি বাগানের প্রস্তুতি নিচ্ছি। তার পরামর্শ ও সহযোগিতা নিয়ে স্টবেরি চাষ করবো বলেও জানান তিনি। উপজেলার বথপালিগাঁওয়ের ফাইদুল জানান, স্ট্রবেরি আবাদ করে এত লাভ হয় তা আগে জানা ছিল না। আগামী বছর তিনিও পরীক্ষামুলকভাবে কিছু জমিতে স্ট্রবেরি চাষ করবেন। শুধু ফাইদুল আর মখলেসুর নন, এই এলাকার অনেকেই সুজাত আলীর কাছে অনুপ্রাণিত হয়েই স্টবেরি বাগান করতে চান। কৃষি বিভাগ বলছেন, ফসলটি সম্প্রসারণে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি নানা ধরনের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। সুজাত আলীকেও কৃষি বিষয়ক পরামর্শ ও সব ধরণের কৃষি উপকরণ এবং সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে। তার মতো যারা এই ফল চাষে উদ্বুদ্ধ হয়ে চাষ করবেন, তাদেরও সহযোগিতা করবে কৃষি বিভাগ। পীরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম জানান, অত্যন্ত লাভজনক ও সম্ভাবনাময় এ ফসল আবাদে কৃষদের উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি পরামর্শ দিচ্ছেন তারা। এবছর উপজেলার আড়াই একর জমিতে স্ট্রবেরি চাষ হয়েছে। আগামীতে আরো বেশি পরিমাণ জমিতে যেন স্ট্রবেরি চাষ হয় এজন্য কাজ করছেন তারা। আর সুজাত আলী স্ট্রবেরি চাষ নতুনমাত্রা যোগ করেছেন। তাকে সর্বাত্নক সহযোগিতা করছে কৃষি বিভাগ। ঠাকুরগাঁও জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. সিরাজুল ইসলাম জানান, জেলায় স্ট্রবেরি চাষ আস্তে-আস্তে বৃদ্ধি পাচ্ছে। জেলায় প্রায় ২৫-৩০ একর জমিতে এবার স্টবেরি চাষ হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে পরীক্ষামূলকভাবে অনেকে এই ফল চাষ শুরু করেছেন। তবে জেলার পীরগঞ্জ উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে স্ট্রবেরি চাষ করে ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন সুজাত আলী নামের এক কৃষক। তিনি বাণিজ্যিকভাবে স্ট্রবেরি চাষ করে লাভবান হয়েছেন। স্টবেরি চাষে বাড়ছে তার ফলনও। আর তার এই বাগানে ও ফল বিক্রির প্রক্রিয়ায় অনেক মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে। আর এই কর্মসংস্থান এর পরিসর ধীরে-ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে। আশার বিষয় হলো যে, তাকে দেখে উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত হয়ে অনেকেই এই স্ট্রবেরি ফল চাষে ঝুঁকছেন। আশা করি, স্টবেরি চাষে এ জেলা দ্রুত স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে এ জেলাসহ দেশের অর্থনীতিতে বিশেষ অবদান রাখবে।