শিগগিরই স্বেচ্ছায় স্বদেশে ফেরত যেতে আগ্রহী রোহিঙ্গাদের তালিকা করা হবে। প্রত্যাবাসন হবে সম্পূর্ণ স্বেচ্ছায়। কাউকে জোর করে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হবে না। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন সম্পর্কে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মতামতকেও গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। প্রত্যাবাসন ইস্যুর সব বিষয়েই জাতিসংঘসহ সব আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবহিত করা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার বিকালে কক্সবাজারের টেকনাফে ২৬ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (মিয়ানমার উইং) মাইনুল কবির এবং শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। প্রত্যাবাসনের জন্য রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আলোচনা শেষে মিয়ানমার সরকারের প্রতিনিধি দল দেশে ফিরে যাওয়ার পর বিকালে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে ব্রিফিংয়ে অংশ নেন তারা। তবে মিয়ানমারের প্রতিনিধি দল গণমাধ্যমে কোনো কথা বলেনি। ব্রিফিংয়ে শরণার্থী কমিশনার মিজানুর রহমান বলেন, মিয়ানমার প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আলোচনাকালে রোহিঙ্গারা তাদের নাগরিকত্ব, ভিটেমাটি ফেরতসহ বেশ কিছু দাবি জানিয়েছে। আলোচনায় রোহিঙ্গারা রাখাইনে কোনো ক্যাম্পে নয়, নিজেদের ভিটেমাটিতেই ফেরত যেতে চায় বলে মিয়ানমার প্রতিনিধি দলের কাছে উত্থাপন করে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যার একমাত্র সমাধান রোহিঙ্গাদের টেকসই এবং স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসন। বৃহস্পতিবার সকালে টেকনাফের ট্রানজিট জেটি ঘাট দিয়ে ১৪ সদস্যের প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ আসে। এ সময় শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশন কার্যালয়ের কর্মকর্তারা তাদের স্বাগত জানান। মিয়ানমার প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন মিয়ানমারের রাখাইন স্টেটের সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার মিনিস্টার অং মাইউ। মিজানুর রহমান আরও বলেন, প্রত্যাবাসনকে সামনে রেখে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আলোচনা করতে মিয়ানমারের একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে এসেছে। ঢাকার মিয়ানমার দূতাবাসের দু’জন সদস্যও প্রতিনিধি দলের সঙ্গে রয়েছেন। তারা টেকনাফে ২৬ নম্বর ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন। মিয়ানমারের প্রতিনিধি দল এবার ২৮০ রোহিঙ্গা পরিবারের প্রধানের সঙ্গে কথা বলে। মিয়ানমারের প্রতিনিধি দলটি মূলত কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে থাকা রোহিঙ্গাদের মূল আবাস মিয়ানমারের রাখাইনের সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করে এবং স্বদেশে ফেরত গেলে তাদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার বিষয়ে দীর্ঘ বর্ণনা করে। আলোচনাকালে নাগরিকত্ব, শিক্ষা, চিকিৎসা এবং অবাধ চলাফেরার স্বাধীনতাসহ বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেন রোহিঙ্গারা। পর্যায়ক্রমে রোহিঙ্গাদের দাবি পূরণ করা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে মিয়ানমারের প্রতিনিধি দল। প্রেস ব্রিফিংয়ে এটা উল্লেখ করেন শরণার্থী কমিশনার। এর আগে গত ৫ মে রোহিঙ্গাদের ২০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল মিয়ানমারের রাখাইনের মংডু শহরের আশেপাশে পরিদর্শন করে আসে। পরিদর্শন করে আসা রোহিঙ্গা নেতারা তখন জানিয়েছিলেন, রাখাইনে এখনও প্রত্যাবাসনের পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি।