ePaper

সাগরে মাছ কম পাওয়ায় দুবলায় শুঁটকি উৎপাদন ব্যাহত

রবিউল ইসলাম (সাতক্ষীরা) শ্যামনগর

সুন্দরবনের দুবলা শুঁটকি পল্লিতে মাছ সংকট তীব্র হচ্ছে। যদিও এই সময়টিই মাছের ভরা মৌসুম, তবে সাগরে জাল ফেলে জেলেরা প্রত্যাশিত পরিমাণ মাছ পাচ্ছেন না। এ মুহূর্তে শুঁটকি পল্লির ভাড়া (মাচা) ও চাতাল প্রায় শূন্য। মাছের অভাবে পুরো শুঁটকি পল্লি এক ধরনের অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তন এই সংকটের অন্যতম কারণ। বন বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, সাগরের গভীরতা কমে যাওয়ার পাশাপাশি পানির গতিপথের পরিবর্তন এবং ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে মাছের আধিক্য কমে যেতে পারে। এর সঙ্গে সাগর উত্তাল থাকায় জেলেরা সঠিকভাবে জাল ফেলতে পারছেন না, যা মাছের সংকটের আরেকটি কারণ। দুবলা শুঁটকি পল্লির ব্যবসায়ী নাদিমুল ইসলাম জানান, এ বছর ৪ নভেম্বর থেকে শুর“হয়েছে দুবলার চরের শুঁটকি মৌসুম। তবে শুর“থেকেই নিম্নচাপ, ঝড়, শৈত্য প্রবাহ এবং মাছের অভাব চলছে। লইট্যা, ছুরি, রূপচাঁদা কিংবা লাক্ষা মাছ তেমন ধরা পড়ছে না, বরং বেশি পাওয়া যাচ্ছে ছোট চিংড়ি, চ্যালা ও পেরেছে জাতীয় মাছ। এই পরি¯ি’তিতে ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন শুঁটকি ব্যবসায়ীরা। মাছের সংকটে উৎপাদন কম হওয়ায় রাজস্ব আয় অর্জন কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। আলোরকোল শুঁটকি পল্লির জেলে আব্দুর রাজ্জাক সরদার জানান, ২০ ডিসেম্বর থেকে ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত খারাপ আবহাওয়ার কারণে জেলেরা সাগরে যেতে পারেনি। এর ফলে মাছের উপস্থিতি এবং শুঁটকি উৎপাদন আরও কমে গেছে। এ বছর আলোরকোলের ব্যবসায়ীরা দেড় থেকে দুই কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন, তবে পরি¯ি’তি খুবই অনিশ্চিত। জেলে বিপুল গাইন জানান, আবহাওয়ার বিরূপ পরি¯ি’তি এবং মাছের অভাবে তারা খুবই চিন্তিত, কারণ চলতি মৌসুমে চালান বাঁচানো সম্ভব হবে কিনা, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। শুঁটকি ব্যবসায়ী হক বিশ্বাস জানান, মৌসুমের ৫ মাসে একজন জেলের বেতন ৮০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকা। মাছ ধরা বা শুঁটকি উৎপাদন না হলেও তাদের বেতন দিতে হবে। দুর্যোগের কারণে প্রায় এক সপ্তাহ সাগরে যেতে পারেননি জেলেরা, অথচ এখন মাছের ভরা মৌসুম চলছে, কিš‘ দামি মাছের দেখা মিলছে না। পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের দুবলার আলোরকোল টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান জানান, গত সপ্তাহে আলোরকোল শুঁটকি পল্লিতে ১৬ থেকে ১৭ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে, আর ছোট শুঁটকি পল্লিতে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৪ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে প্রায় ২০ কোটি টাকা লোকসানে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। মাছ সংকটের কারণে শুঁটকি উৎপাদন কম হওয়ায় রাজস্ব ঘাটতির পরিমাণও বাড়ছে। গত বছর শুঁটকি খাত থেকে রাজস্ব আয় ছিল ৭ কোটি ২৩ লাখ টাকা। এবছরের লক্ষ্যমাত্রা ৮ কোটি টাকা তবে তা অর্জন হওয়ার সম্ভাবনা কম। দুবলা ফিশারমেন গ্রুপের সভাপতি মো. কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, “এ বছর দুবলার চরের শুঁটকি নেই। জলবায়ু পরিবর্তন, ঘূর্ণিঝড়, নিম্নচাপসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে সাগরে মাছ পাওয়া যাচ্ছে না।” সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কাজী মুহাম্মদ নুরল করীম বলেন, “এ বছর দুবলা শুঁটকি পল্লিতে মাছের পরিমাণ খুব কম। ছোট প্রজাতির মাছ ধরা পড়ছে, যার ফলে জেলে এবং ব্যবসায়ীদের বড় ধরনের ক্ষতি হচ্ছে। গত বছর শুঁটকি খাত থেকে ৭ কোটি ২৩ লাখ টাকা রাজস্ব আয় হয়েছিল, তবে এবারের লক্ষ্যমাত্রা পূরণের সম্ভাবনা খুবই কম।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *